31 C
আবহাওয়া
১২:১৫ পূর্বাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » গায়ত্রীর প্রেমে পড়েছিল বাবুল আক্তার!!

গায়ত্রীর প্রেমে পড়েছিল বাবুল আক্তার!!


বিএনএ,চট্টগ্রাম: গায়ত্রী অমর সিং নামে এক নারীর সঙ্গে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের প্রেমের জেরে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন মিতুর বাবা মো. মোশাররফ হোসেন। বুধবার (১২ মে) চট্টগ্রামের পাচঁলাইশ থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে এ অভিযোগ করেন তিনি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে বাবুল আক্তারের সাথে ২০১৩ সালে পরিচয় হয় সেখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা গায়ত্রী অমর সিংয়ের। একসময় সেই গায়ত্রীর সাথে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন বাবুল আক্তার। একসময় সেই খবর পৌঁছে যায় স্ত্রী মিতুর কানেও। শুরু হয় অশান্তির ঢেউ। মিতু-বাবুল দম্পত্তির সুখের ঘরে আগুন লাগে মূলত এ গায়েত্রীর পরকীয়ার জেরে। তাদের পারিবারিক কলহের জেরে পরকীয়ার জেরে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করতে ভাড়াটে খুনিদের তিন লাখ টাকায় কিংলিং মিশনের চুক্তি করেন তারই স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। এ কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন তারই ঘনিষ্ট সোর্স মুছা। আর চুক্তির তিন লাখ টাকা বাবুলের নিকটাত্মীয় সাইফুলের মাধ্যমে মুছার এক আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সাইফুলের সাথে বাবুলের মামুন নামে এক বন্ধুও ছিল। মূলত উন্নয়নকর্মী গায়েত্রী সিংয়ের সঙ্গে বাবুলের প্রেমের বিরোধ থেকেই স্ত্রী মিতুকে সরিয়ে দিতে এ কিলিং মিশনের পরিকল্পনা ও বাস্তাবায়ন করেন বাবুল আক্তার।

কে এই গায়ত্রী?

গায়ত্রী অমর সিং একজন ভারতীয় নাগরিক। তিনি জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার—ইউএনএইচসিআর-এর ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন কক্সবাজারে। বর্তমানে তিনি উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রটারডামে রয়েছেন। সেখানেও তিনি ইউএনএইচসিআর-এর লিগ্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাবুল আক্তার সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকাকালে প্রথমবার গায়ত্রীর সাথে বাবুলের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন স্ত্রী মাহমুদা মিতু। ওই সময় বাবুল আক্তার তার মোবাইলের সিমটি দেশে রেখে যান। আর বিভিন্ন সময়ে গায়ত্রী মোট ২৯টি এসএমএস পাঠান বাবুল আক্তারের সিমে। পরে প্রতিটি এসএমএসই হাতে লিখে নোট করে রাখেন মিতু।

২৯টি ম্যাসেজের সবগুলোই ইংরেজিতে লেখা। ম্যাসেজগুলোতে গায়েত্রী ও বাবুলের মধ্যে গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। একটি ম্যাসেজে এমন লেখা হয়েছে, ‘মাই পোয়েট মাই লাভ কাম টু মি’, লাভ ইউ মাই কিং উলড হ্যাভ কিসড ইউ প্যাশোনেটলি, ইফ ইউ ওয়্যার হেয়ার নাউ’, লাভ ইউ বেবি, গুড মর্নিং, কাম টু স্লিপ টু মি।’

এছাড়া বাবুল আক্তারকে গায়ত্রীর উপহার দেওয়া দুটি বই ‘TALIBAN’ ও ‘Best kept secret’ নামে দুটো বইও হাতে আসে মিতুর। যার মধ্যে ‘TALIBAN’ বইয়ের শেষ প্রচ্ছদের আগের পাতায় বাবুল আক্তার নিজ হাতে গায়ত্রীর সাথে পরিচয় ও সম্পর্কের নানা খুঁটিনাটি তথ্য নোট করে রাখেন। সেখানে গায়েত্রী তালেবান নামে বইটির তৃতীয় পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘Hope the memory of me offering you this personal gift, shall eternalize our wonderful bond, love you, Gaitree’ এর প্রতি উত্তরে এই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা ২৭৬ এর পরের পাতায় বাবুল আক্তার নিজের হাতে ইংরেজিতে গায়েত্রীকে উদ্দেশ্যে করে লিখেছেন, ‘First meet: 11 Sept, 2013, First PR in Cox. 07 Oct 2013. G Birth Day, 10 October, First Kissed 05 Oct 2013; First beach walk: 8th Oct, 2013, 11 Oct 2013, Marmaid with family, 12 Oct 013, Temple Ramu Prayed Together, 13 Oct 2013; Ramu Rubber Garden Chakaria night beach walk. এছাড়া ‘Best Kept Secret’ বইটির ১ম দিকের ২য় পাতায় গায়েত্রীর নিজ হাতে ইংরেজিতে লেখা আছে “5/10/2013; with my sincerelove” Yours Gaitree.

সেই নোট অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর গায়ত্রীর সাথে প্রথম দেখা হয় বাবুলের। একে অপরকে প্রথমবার চুমো খান ৫ অক্টোবর। এর দুদিন পর ৭ অক্টোবর দুজনের মধ্যে প্রথম শারীরিক সম্পর্ক হয়। দুজনে প্রথমবারের মত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হাঁটেন ৮ অক্টোবর। এসব তথ্যের সাথে ১০ অক্টোবর গায়ত্রীর জন্মদিনের তথ্যও ওই পাতায় নোট করে রাখেন বাবুল আক্তার।

মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন এজাহারে আরও অভিযোগ করেন, তার মেয়ে মিতু এই ‘অনৈতিক সম্পর্কের’ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন বাবুল।নির্যাতনের বিষয়টি মিতু জানিয়েছিলেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তার বাবা।

মিতু-বাবুল দম্পত্তির সুখের ঘরে আগুন লাগে মূলত এ গায়েত্রীর পরকীয়ার জেরে। এ কারণে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করতে ভাড়াটে খুনিদের তিন লাখ টাকায় কিলিং মিশনের চুক্তি করেন তারই স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। এ কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন তারই ঘনিষ্ট সোর্স মুছা। আর চুক্তির তিন লাখ টাকা বাবুলের নিকটাত্মীয় সাইফুলের মাধ্যমে মুছার এক আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সাইফুলের সাথে বাবুলের মামুন নামে এক বন্ধুও ছিল। মূলত উন্নয়নকর্মী গায়ত্রী সিংয়ের সঙ্গে বাবুলের প্রেমের বিরোধ থেকেই স্ত্রীকে মিতুকে সরিয়ে দিতে এ কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করেন বাবুল আক্তার।

সম্প্রতি মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্যগুলো জানিয়েছিলেন বাবুলের নিকটাত্মীয় সাইফুল। তিনি শুধু পিবিআইয়ের কাছেই এসব তথ্য স্বীকার করেননি। সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় দেওয়া আদালতেও কিলিং মিশনের বিস্তারিত তুলেও ধরেছেন সাইফুল ও মামুন। মূলত এরপরই খুনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বাবুল আক্তারের নাম উঠে আসে। কেননা এর আগে কিলিং মিশনের দলনেতা হিসেবে মুছার নাম অন্য খুনিদের জবানবন্দিতে উঠে এলেও কার নির্দেশে বা কে মাস্টার মাইন্ড তা স্পষ্ট ছিল না। এতোদিন পর স্পষ্ট হয়েছে মূলত, বাবুল আক্তারই মিতু হত্যার মাস্টার মাইন্ড ও নির্দেশদাতা।

জানা যায়, মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পর আরও তিনটি বিয়ে করেন বাবুল আক্তার। এর মধ্যে দুজনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, বর্তমানে একজনের সঙ্গে সংসার করছিলেন তিনি। চট্টগ্রামে থাকার সময় ওয়েল ফুডে চাকরি করা এক নারীর সঙ্গে বাবুলের পরিচয় হয়। মিতু মারা যাওয়ার পর ওই নারীকে ঢাকায় এনে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন বাবুল। এক পর্যায়ে ওই নারী বাবুলকে ছেড়ে চলে যান।

এরপর খুলনার এক মেয়েকে বিয়ে করেন বাবুল। তবে ওই সংসারও বেশি দিন টেকেনি। সবশেষ ৪-৫ মাস আগে কুমিল্লার এক মেয়েকে তিনি বিয়ে করেন। মিতুর মায়ের অভিযোগ কুমিল্লার মেয়েটির সঙ্গেও বাবুলের আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। ওই মেয়ের সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে থাকছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে বুধবার (১৩ মে) বিকেল সোয়া ৩টায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহানের আদালতে তোলা হলে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এছাড়া দুপুর ১টার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দুই সদস্য আদালতের পাঁচলাইশ থানার প্রসিকিউশন শাখায় মিতু হত্যার ডকেটসহ ফাইনাল রির্পোট জমা দেয়। এতে মামলাটি নিষ্পত্তি করে মামলায় বাদী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্তার কথা উল্লেখ করা হয়।

এদিন দুপুর পৌনে ১টার দিকে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পাঁচলাইশ থানার মামলা নম্বর ৫। মামলাটি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবিরুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বাকি আসামিরা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা (৪০), এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া (৪১), মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম (২৭), মো. আনোয়ার হোসেন (২৮), মো. খায়রুল ইসলম ওরফে কালু (২৮), সাইদুল ইসলাম সিকদার (৪৫) ও শাহজাহান মিয়া (২৮)। এর মধ্যে মামলার সাত নম্বর আসামি সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে শাকুকে (৪৫) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৭ (র‌্যাব)।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ