35 C
আবহাওয়া
১১:৩০ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৪

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৪

কারাগারের রোজনামচা

কম্পাউন্ডার সাহেব এলেন আমার এখানে ইনজেকশন দিতে । বললাম “বসেন, কেমন আছেন?’ বলল, ‘কেমন থাকব। স্বল্প বেতনের কর্মচারী, জীবনটা কোনোমতে কাটাইয়া নিয়ে যাচ্ছি।’ তার কাজ শেষ করে তিনি চলে গেলেন ।

আমি বই নিয়ে বসে পড়লাম মনে করবেন না বই নিয়ে বসলেই লেখাপড়া করি । মাঝে মাঝে বইয়ের দিকে চেয়ে থাকি সত্য, মনে হবে কত মনোযোগ সহকারে পড়ছি । বোধ হয় সেই মুহূর্তে আমার মন কোথাও কোনো অজানা অচেনা দেশে চলে গিয়েছে । নতুবা কোনো আপনজনের কথা মনে পড়েছে । নতুবা যার সাথে মনের মিল আছে, একজন আর একজনকে পছন্দ করি, তবুও দূরে থাকতে হয়, তার কথাও চিন্তা করে চলেছি হয়ত বা দেশের অবস্থা, রাজনীতির অবস্থা, সহকর্মীদের উপর নির্যাতনের কাহিনী নিয়ে ভাবতে ভাবতে চক্ষু দু’টি আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসছে বই রেখে আবার পাইপ ধরালাম ।

সাড়ে এগারটায় জেলের কয়েদিদের খাবার সময় হয়ে যায় । এরা গোসল করে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় বালতিতে ডাল, টিনের বড় এক পাত্রে ভাত আর একটি বালতিতে তরকারি । কয়েদিরা দফায় দফায় এসে বিলাইয়া যায় । ভাত নিয়ে যে যেখানে পারে বসে খেয়ে নেয় মেশিনের মতো চলে আমার কিন্তু একটার পূর্বে খাওয়া অসম্ভব । তাই সাড়ে বারটা বা ১টায় গোসল করতে যাই আজ বহুক্ষণ ভাবলাম গোসল করব কিনা । মেট বলল, না করলে শরীর খারাপ হবে। বসে পড়তে পড়তে পিঠে একটা ব্যথা হয়েছে । খুব তেল মালিশ করে গোসল করে এলাম খাবার পরেই কাগজ এসে হাজির ।

ব্যাপার কি! ভুট্টো সাহেব নাই! বিতাড়িত। ছুটি চেয়েছেন, পেয়েছেনও সসম্মানে তাড়াইয়া দেওয়ার একটা ফন্দি আমেরিকার ধাক্কা আইয়ুব সাহেব সামলাইবেন কেমন করে! শোয়েব সাহেবের দৌলতে তিনি যে অর্থনীতি কায়েম করতে চলেছেন তাহাতে আমেরিকা ছাড়া আর কে সাহায্য করতে পারে! আমেরিকা যেখানে সাহায্য দিতে চায় সেখানে অধীনস্ত না করে অর্থ সাহায্য দেয় না। পণ্ডিত জওহরলালের মতো ত্যাগী, কর্মঠ, শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীও কৃষ্ণ মেননের মতো বৈদেশিক মন্ত্রীকে আমেরিকার চাপে সরায়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন । আর আমাদের আইয়ুব সাহেব যাদের বদৌলতে

ক্ষমতায় বসেছেন, যাদের দৌলতে ক্ষমতায় টিকে আছেন, কেমন করে সেই মুরব্বীদের বেজার করবেন? ভাই ভুট্টো আমার কথাগুলি মনে করে দেখবেন নিশ্চয়ই । যখন হঠাৎ আমার সাথে মোলাকাত হয়ে গিয়াছিল তখন তাকে বলেছিলাম, বেশি দিন আর বাকি নাই, আপনারও দিন ফুরাইয়া এসেছে । ডিকটেটরের ধর্ম নাই । সে শুধু নিজকে চেনে এবং নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে কাহাকেও ছাড়ে না । আমেরিকানরা যে আইয়ুব সাহেবকে ছাড়তে পারে না তাহাও আমার বুঝতে বাকি নাই । এমন নেতা আমেরিকা চায় যারা জনগণের সাথে সম্বন্ধ রাখে না । আইয়ুব সাহেব বিবৃতি দিয়েছেন, “বৈদেশিক নীতি পূর্বের মতো চলবে । এর কোনো পরিবর্তন হবে না’ আমরা জানি যে, কোনোদিন পরিবর্তন করতে পারবেন না ।

সূত্র:  কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ১০৬-১০৭, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭

আরও পড়ুন :

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৩

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব ৭১

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭০

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৯

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৮

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৬

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৫

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৪

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৩

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬১
কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬০

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ