37 C
আবহাওয়া
৭:৫০ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ‘নাসার কয়েন’ প্রতারণা, শিল্পপতি খোয়ালেন কোটি টাকা

‘নাসার কয়েন’ প্রতারণা, শিল্পপতি খোয়ালেন কোটি টাকা

'নাসার কয়েন' প্রতারণা, শিল্পপতি খোয়ালেন কোটি টাকা

বিএনএ, ঢাকা : দুর্লভ নাসা’র কয়েন কেনার পর আবারও তা বিক্রি করে কোটি কো‌টি টাকা মুনাফার লোভে প‌ড়ে বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি থেকে শুরু করে সরকারি আমলারা খুঁই‌য়ে‌ছেন কোটি টাকা। প্রতারণা করে চক্রটি লুটে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এমন প্রতারণা চ‌ক্রের পাঁচ সদস্য‌কে গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছে।

পি‌বিআই বল‌ছে, প্রতারক চক্রটি এই বলে প্রলোভন দেখাতো যে, এটি একটি নাসার কয়েন। গবেষণার কাজে কয়েনটি নাসায় ব্যবহৃত হয়। এটি কিনে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা যাবে। যার ক্রয়মূল্য ১০ কোটি টাকা। মার্কিন মুলুকে কয়েনটির ব্যাপক চাহিদা। এটি কিনে নেয়ার জন্য তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। মিলিয়ন ডলার লাভের আশায় দেশের একজন শিল্পপতি ঘুরেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। খুইয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। পরে জানতে পারেন ‘নাসার কয়েনটি’ কাঠের তৈরি একটি মুদ্রা। এই কয়েনের কি এক তেলেসমাতি! যার জন্য কেন মানুষ টাকা দিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে? সর্বশান্ত হওয়ার আগে কেউ প্রতারণার বিষয়টি বুঝতেই পারছে না ব‌লে জানায় পি‌বিআই।

বৃহস্প‌তিবার(২৮ জানুয়ারী) রাজধানীর ধানম‌ন্ডি‌তে পি‌বিআইর প্রধান কার্যাল‌য়ে সংস্থার প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সম্প্রতি এই কয়েনের টোপে সরকারের প্রথম শ্রেণির এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার পেনশনের ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন প্রতারকদের হাতে। আরেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খুইয়েছেন ৮৪ লাখ টাকা। স্বনামধন্য এক ব্যবসায়ী ২ কোটি টাকা দিয়েছেন, আরও টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। গত ডিসেম্বরে আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যান এই প্রতারকদের হাতে নগদ দেড় কোটি টাকা তুলে দেন। আরও টাকা দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে প্রতারণার বিষয়টি ধারণা করেন। পরে এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা হয়। মামলার তদন্তে একটি কয়েন ঘিরে মহাপ্রতারণার এই তথ্য জানতে পারে পিবিআই।
তদন্তের ধারাবাহিকতায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আক্তারুজ্জামান, সালাম, মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান, আবু তাহের জবা ও শফিকুল ইসলাম স্বপন। তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত দুটি কাঠের কয়েন, নগদ ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ও বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যান এই চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। তার সঙ্গে আবু তাহের জবার সম্পর্ক ছিল। তিনি নিজেকে বড় ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতেন। তার দেশে-বিদেশে নিয়মিত যাতায়াত বলে জানান। কিন্তু প্রতারকদের মূল হোতা আদলে এসএসসি পাস। আগে নিজ বাড়িতে কৃষি কাজ করতেন। বছর খানেক আগে জবার সঙ্গে আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানের পরিচয় হয়।

পরিচয়ের এক পর্যায়ে প্রতারক জামান বলেন, দেশের সীমান্ত এলকার বাসিন্দা সালাম নামে একজনের কাছে একটি কয়েন আছে। কয়েনটি নাসায় গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। জামান নামে একজন আমেরিকান ক্রেতাও আছে যিনি কয়েনটি কিনবেন। কিন্তু মূল্যবান এই কয়েন কেনাবেচায় মিলিয়ন ডলারের লেনদেন। তাই তিনি আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে চান। এজন্য তিনি একটা মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন পাবেন। এর মধ্যে ক্রেতা মনিরুজ্জামান কামরুল জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জবা। জামানের সঙ্গে নাসা, সিআইএ কিংবা ইউএস অ্যাম্বাসির যোগাযোগ রয়েছে বলে জানান। আসলে জামান একজন শাড়ি ব্যবসায়ী। স্বপন জামানের পিএ হিসেবে পরিচয় দিতেন। জামান ওই অমূল্য কয়েনটি কিনবেন আর লেনদেনে ব্যবহার করবেন আনন্দ গ্রুপের অ্যাকাউন্ট।

প্রতারক আক্তারুজ্জামান সীমান্ত এলাকায় থাকেন, তিনি বিক্রেতা খোঁজেন। ভারতের এমন কেউ নাই যে তাকে চেনে না! আসলে তিনি এইচএসসি পাস আর ঝিনাইদহের একটা বাড়িতে কেয়ার টেকারের চাকরি করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৯ ডিসেম্বর আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানকে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে অমূল্য ওই কয়েন দেখান। তার সামনেই বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে কয়েনটি পরীক্ষা করে দেখানো হয়। এক পর্যায়ে কয়েনের পাসওয়ার্ড নিতে ভারতে ফোন দেওয়া হয়। হিন্দিতে কথা বলে পাসওয়ার্ড নেওয়া হয়। এক কথায় বিশ্বাস স্থাপনের জন্য নানা কৌশল ব্যবহার করতে থাকে প্রতারকরা। এক পর্যায়ে কয়েনের দাম ঠিক হয় ১০ কোটি টাকা। এ সময় ক্রেতা জামান তাৎক্ষণিক সাড়ে আট কোটি টাকার চেক দেয়। প্রলোভনে পড়ে নগদ বাকি দেড় কোটি টাকা দিয়ে দেয় আনন্দ গ্রুপ। কিছুদিন পর কোনোভাবে তারা প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে আইনের আশ্রয় নেয়।
বনজ কুমার বলেন, চট্টগ্রামের এক বড় ব্যবসায়ী এই কয়েনের প্রলোভনে ২ কোটি টাকা দিয়েছেন। আরও টাকা দিবেন বুঝতে পেরে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আটকে রাখেন তার জামাতা। তার জামাতাও চট্টগ্রামের বড় ব্যবসায়ী। কোনোভাবে তার শ্বশুরকে আরও টাকা দিতে আটকাতে না পেরে আমাদের জানান। পরে আমরা বিমানবন্দর থেকে আমাদের গাড়িতে করে ওই ব্যবসায়ীকে অফিসে নিয়ে আসি। তিনি প্রতারকদের টাকা দিতে এমন পাগল হয়ে গিয়েছিলেন, যে বাসায় যেতে পারলে আবার টাকা দেবেন।

বিএনএ/এসকে, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ