28 C
আবহাওয়া
১১:২১ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সিনহাকে গুলি করে লিয়াকত: আদালতে সিফাত

সিনহাকে গুলি করে লিয়াকত: আদালতে সিফাত

সিনাহকে গুলি করে লিয়াকত,বুট দিয়ে গলা চেপে ধরে ওসি প্রদীপ

বিএনএ, কক্সবাজার: আলোচিত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাহিদুল ইসলাম সিফাত।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকালে এ মামলায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। জেরা দুপুর ২টা পর্যন্ত তা চলে।  দুপুর ২টার পর এক ঘণ্টার জন্য আদালত বিরতি দেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। বিরতির পর ফের আদালত শুরু করলে বাদীকে আবার জেরা শুরু করেন লিয়াকত আলীর আইনজীবী। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জেরা করেন অপর দুই আসামি ওসি প্রদীপ ও লিটন মিয়ার আইনজীবী।

এরপর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সিনহার সঙ্গী সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলে রাত ৮টা পর্যন্ত ।

আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে সিফাত বলেন, ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাহারছড়া চেকপোস্টে সিনহার গাড়ি থামান পরিদর্শক লিয়াকত আলী। সিনহা গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার সঙ্গে সঙ্গেই গুলি করেন লিয়াকত। এতে সিনহা মাটিতে পড়ে গেলেও দীর্ঘ সময় বেঁচে ছিলেন তিনি। পরে আসামি ওসি প্রদীপ এসে প্রথমে সিনহার বুকের বাম পাশে লাথি মারেন। এরপর গলায় বুট জুতা দিয়ে চেপে ধরেন। পরে  নিস্তেজ হয়ে যান মেজর সিনহা।

আসামি প্রদীপ ও লিয়াকতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এই মামলায় এজাহার এবং সাক্ষীর বক্তব্যে যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। আদালতেকে তা অবহিত করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে আসামিদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে। এতে বিচারের আগেই আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, অ্যাডভোকেট সৈকত কান্তি দে এবং অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ।

এর আগে সোমবার(২৩ আগস্ট) সকালে আদালতে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে মেজর সিনহা হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিনে বাদীকে জেরা করেন আসামির পক্ষে আইনজীবীরা।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।

তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম (সিফাত)কে আটক করে পুলিশ । এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার অপর দুই সফর সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পান এই দুজন। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়।

এরপর ৫ আগস্ট নয় জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দ্বিতীয় এবং পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব-১৫।

হত্যাকাণ্ডের পর চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে এবং ৮৩ জনকে সাক্ষী করে আলোচিত মামলাটির চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র‍্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব ১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।

সিনহা হত্যা মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। এদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বরখাস্ত ১২ আসামি।

বিএনএনিউজ২৪/আরকেসি

Loading


শিরোনাম বিএনএ