40 C
আবহাওয়া
৩:৫২ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৭

কারাগারের রোজনামচা

১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল। এ সময়ে বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তানী শাসক অসংখ্যবার কারাগারে বন্দি রেখে বাঙ্গালী জাতিকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর শুধু প্রথম তিন মাসে বঙ্গবন্ধুকে মোট আটবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।কারাগারে নিজের, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও অন্য বন্দিদের সুখ, দুঃখ, কারাগারে বিভিন্নভাবে নির্যাতন বিভিন্ন সময়ে খাতায় লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এর নাম দিয়েছিলেন ‘থালাবাটি কম্বল / জেলখানার সম্বল’।

‘কারাগারের রোজনামচা’

বঙ্গবন্ধুর কারাগারে লেখা খাতাগুলো খুঁজে পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা পরে ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ বই আকারে প্রকাশ করা হয় ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামে । বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং নামকরণ করেছেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

এই বইয়ে শুধু কারাগারের চিত্রই নয়, ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তান সরকারের এক নায়কোচিত মনোভাব ও অত্যাচার-নির্যাতনের নানান চিত্র। ফুটে উঠেছে, দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন,ত্যাগ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের অজানা কাহিনী বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রকাশ করছে।

আজ প্রকাশিত হলো- পর্ব-৩৭

শরীরটা ভাল লাগছে না । সেল এরিয়ার সবই বন্ধ হয়ে গেছে, এখন আমাকে বন্ধ করা হবে । দরজা বন্ধ হলো, কিছু সময় বসে রইলাম চুপ করে । মেটের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে যাই খেতে গেলে, “স্যার আর একটু নেন, একটু মাছ, একটু তরকারী ।” বেচারা আমাকে খাওয়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে । “এতবড় শরীর আধা পোয়া চালের ভাত খাবেন না, তাহলে বাঁচবেন কেমন করে?” শুধু ভাবি, তোমাদের এই স্নেহের প্রতিদান কি করে দিতে পারব?

আমার বাবুর্চি একটু চালাক চতুর ছেলে, কেরামত নাম। বলে, “স্যার আপনি তো জানেন না—যেখানে দুইশত তিনশত কয়েদি থাকে তারা নামাজ পড়ে আপনাকে দোয়া করে । তারা বলে, আপনি ক্ষমতায় থাকলে তাদের আর চিন্তা থাকতো না।” দুঃখ হয়, এদের কোনো কাজেই বোধ হয় আমি লাগব না । অনেক গল্প শুনলাম কয়েদিরা কি বলে সে সম্পর্কে । তবে একথা সত্য, যখন আমি জেল অফিসে যাই তখন কয়েদিদের সাথে দেখা হলে, জেল অফিসারদের সামনেই আমাকে সালাম দিতে থাকে । যারা দূরে থাকে তারাও এগিয়ে আসে। বুড়া বুড়া দু’একজন বলেই ফেলে, ‘বাবা, আপনাকে আমরা দোয়া করি’ ।

খেতে যে পারি না, তার বিশেষ কারণ জেলের পাক। কয়েদিরা পাকায় ভালই লাগে না । তবুও খেতে হবে, তবুও বাঁচতে হবে। যারা এই দুই দিনে জেলে এসেছে, তাদের ডিভিশন দেয় নাই, কিভাবে কোথায় রেখেছে- জানার উপায় নাই ।

ঠান্ডা ছিল, বৃষ্টি হয়েছে। শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। যদি জেলের মধ্যে ঘুমিয়ে কাটাতে পারতাম তা হলে কত ভালই না হতো!

৪ঠা জুন ১৯৬৬ ॥ শনিবার

সকালে বাইরে বসে আছি। একজন লোক, ঝাড়দফায় কাজ করত, অসুস্থ হয়ে জেল হাসপাতালে গিয়েছিল । হাসপাতাল থেকে এসেই আমার কাছে এল । এসে বললো, “আমাকে আপনি ছেড়ে দেন, আপনি বললেই জেল থেকে বের করে দিবে।” আমি বললাম, “আমি তো তোমার মতো একজন কয়েদি, আমার ক্ষমতা থাকলে আমিই বা জেলে আসব কেন?” সে বলে : “আপনি কলম মাইরা দিলেই কাজ হয়ে যায়।” বললাম, “কলম আছে, কিন্তু মাইরা দিবার ক্ষমতা নাই।” সে কি শোনে, তাকে ছাড়াতেই হবে? সে আমাকে বলে, “আমি ১৪/১৫ বৎসর জেল খাটলাম, আমাকে ছাড়ছে না।”

সূত্র: কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ৬০, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭

পড়ুন আগের পর্ব :

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৫

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৪

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৩

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩১

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩০

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী,এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ