31.3 C
আবহাওয়া
১২:৫৫ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আত্মসমর্পণকারিরা ফের ইয়াবা ব্যবসায়! পর্ব-৯

আত্মসমর্পণকারিরা ফের ইয়াবা ব্যবসায়! পর্ব-৯

বাংলাদেশে ইয়াবা

।।ইয়াসীন হীরা।।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১১৫১ জন। এদের মধ্য গডফাদার ৭৩ জন। এর মধ্য ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ২৪ জন ইয়াবা গডফাদারসহ ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছেন। অনেক আগে তারা সেইফ হোমে থাকলেও আত্মসমর্পণের দিন তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ সময় ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ও ৩০টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭০ রাউন্ড গুলি জমা দেন আত্মসমর্পণকারি মাদক ব্যবসায়িরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারী।

 ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ

দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণ করেছেন ২১ ইয়াবা কারবারি। ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ সরকারি কলেজ মাঠে এই ২১ জন ইয়াবা ও হুন্ডি কারবারি আত্মসমর্পণ করেন। তারা ২১ হাজার ইয়াবা ও ১০টি দেশে তৈরি বন্দুক জমা দেয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক খন্দকার গোলাম ফারুক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টেকনাফের কয়েক হাজার মানুষ।

 ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ
ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ

প্রথম দফায় আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে টেকনাফ-উখিয়া সংসদীয় এলাকার আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির আপন চার ভাইসহ ঘনিষ্ঠ আট আত্মীয় ছিলেন। তবে বদির আরেক ভাই টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী মজিবর রহমান আত্মসমর্পণ করেননি।

বহাল তবিয়তে আবারও ইয়াবা ব্যবসা শুরু

এদিকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পর টেকনাফের প্রেক্ষাপট বদলে যায়। পলাতক অবস্থায় গ্রেপ্তার হয় কথিত বন্দুকযুদ্ধের নায়ক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। পুলিশের সব সদস্যকে বদলি করা হয়। এ অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের ইয়াবা বিরোধী তৎপরতায় ভাটা পড়ে। দীর্ঘদিন কারাগারে আটক থাকার পর স্বঘোষিত ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত আত্মসমর্পণকারিরা সবাই জামিনে মুক্ত হয়ে আসে। বহাল তবিয়তে আবারও ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে।

উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি।
উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি।

দাওয়াত পাননি বদি!

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। তিনি আত্মসমর্পণের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মাইকিং করে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আলটিমেটাম দিয়ে তিনি আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিলেন। বদির আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার নিকটাত্মীয়সহ অনেকে আত্মসমর্পণের জন্য প্রায় ১ মাস আগে পুলিশি হেফাজতে চলে যান। ইয়াবা গডফাদার হিসেবে বদি তালিকার ১ নম্বরে থাকায় তাকে দাওয়াত দেয়া হয়নি।

কক্সবাজার জেলার সাবেক পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার, আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাসহ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ফুল তুলে দেন ব্যবসায়িরা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ফুল তুলে দেন সাবেক ইয়াবা ব্যবসায়িরা

আল্লাহ’র কাছে মাফ চান- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা উপলক্ষে আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আপনারা আল্লাহর কাছে মাফ চান। আপনারা ভালো হয়ে যান। দেশ ও জাতির ভবিষ্যতে এগিয়ে আসুন। আর যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি, তারাও দ্রুত আত্মসমর্পণ করুন। তা না হলে যে যত শক্তিশালী হোক না কেন অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

মাদক ব্যবসায়ীদের বাঁচার কোনো পথ নেই’

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কোনো নিস্তার নেই। তাদের আত্মসমর্পণ করে ভালো হয়ে যেতে হবে। নয়তো আইনের মুখোমুখি হতে হবে বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, টেকনাফের মতো দেশের অন্যসব এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরও আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া হবে। শুধু টেকনাফ-কক্সবাজার নয়, গোটা দেশ শিগগিরই ইয়াবামুক্ত হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের বাঁচার কোনো পথ নেই’।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আইন সংশোধন করে মাদক ব্যবসায়ীদের সাজা মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন করা হয়েছে। আইনের ফাঁকফোকর গলে যাতে তারা বের হয়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে সরকার সজাগ রয়েছে। তিনি বলেন, সীমান্তে সব বিজিবি সদস্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না- এমন প্রতিবেদন এসেছে।

মাদকের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন করতে যা যা প্রয়োজন সবই করা হবে বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল আরও বলেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদক সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

আগের পর্বসমূহ :

বদির ৫ ভাইসহ ২৫ স্বজন ইয়াবা ব্যবসায়ি! পর্ব-৮

বদি নম্বর ওয়ান!- পর্ব ৭

রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও সাংবাদিকের সঙ্গে ইয়াবা ডন সাইফুলের সখ্য! পর্ব- ৬

সিআইপি সাইফুল ও বাংলাদেশে ইয়াবার আগমন! পর্ব-৫

টেকনাফের ৮০ শতাংশ মানুষ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত! পর্ব-৪

টেকনাফের অর্ধশত রুটে আসে ইয়াবা!- পর্ব- ৩

মডেল-নায়িকা-শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা কেন সেবন করে ইয়াবা? পর্ব-২

‘ইয়াবা’ কেন জনপ্রিয় মাদক? পর্ব-১

বিএনএনিউজ২৪,জিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ