24 C
আবহাওয়া
৫:১৪ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল ডিপোর কনটেইনারে

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল ডিপোর কনটেইনারে

কনটেইনার

বিএনএ চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।আগুনের পর বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের পর আগুর আরও ছড়িয়ে পড়ে। ডিপোটির কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণেই এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, বিদেশ থেকে আমদানি করা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডই ছিল মূলত এসব কনটেইনারে। যা অ্যাভিয়েশন শিল্পখাতে ব্যবহৃত হয়। উচ্চ চাপে এই রাসায়নিক বোতলজাত করা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ‘ডিপোর কর্মকর্তাদের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি, কনটেইনারগুলোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। তবে প্রথমে আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কেউ অবহিত করেনি। এমন রাসায়নিকের আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে। আমরা এখন এই পদ্ধতিতে এবং ফোমের মাধ্যমে এখন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে যাচ্ছে।’

এদিকে, এখন পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলেও জানান এই কর্মকর্তা। প্রথম বিস্ফোরণ হওয়া কনটেইনারটি ভস্মীভূত হয়ে আগুন নিভেছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক। আগুনে আহত ও নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিহতের বেশিরভাগ ডিপোর কর্মরত শ্রমিক। ডিপোতে আগুন লাগার পর তারা শ্রমিকরা অগ্নি নির্বাপনে যোগ দেন। পরে বিস্ফোরণে আগুনের তীব্রতা বেড়ে গেলে তারা আহত হন বলে চমেক মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে।

আগুন

হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড কী কাজে লাগে?

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড একটি প্রাথমিক চিকিৎসা উপকরণ যা প্রায় সবার ঘরেই থাকে। পানির সাথে অক্সিজেনের অতিরিক্ত অণু যোগ করেই তৈরি করা হয় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। সংক্রমণ নাশক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে H2O2 নামে পরিচিত। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং জীবাণু ধ্বংস করে। গৃহস্থলীর কাজে এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ৩% ঘনত্বের হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ৩% হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের দ্রবণই ঔষধের দোকানগুলোতে পাওয়া যায়। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের চমৎকার কিছু ব্যবহারের কথাই জেনে নিব আজ।

১। দাঁতকে মুক্তার মত সাদা করতে

আপনার হলদেটে, দাগ পড়া দাঁতগুলোকে সাদা করতে পারে হাইড্রোজেন পারক্সাইড। বস্তুত, যে টুথপেস্টগুলো দাঁতকে সাদা করতে পারে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় সেগুলোতেও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের ব্লিচিং প্রভাব আপনার হলুদ দাঁতগুলোকে সাদা করে দিতে পারে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এবং কুসুম গরম পানি সমপরিমাণে মিশিয়ে আপনার মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। তারপর পানিটুকু ফেলে দিন এবং সাধারণ পানি দিয়ে কুলি করে নিন। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ১/২ বার এভাবে করুন।

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড গিলে ফেলবেন না। এটি দাঁতকে সংবেদনশীল করে তুলতে পারে এবং মাড়ির যন্ত্রণা সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।

২। পায়ের নখের ছত্রাক দূর করতে

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের জীবাণুনাশক গুণের কারণে এটি পায়ের নখের ছত্রাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। পায়ের কড়া দূর করতেও সাহায্য করে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। সমপরিমাণ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও পানি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আক্রান্ত স্থানে দ্রবণটি স্প্রে করে নিন। সারারাত এভাবে রেখে দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে উষ্ণ পানি দিয়ে স্থানটি ধুয়ে ফেলুন। তারপর একটি নরম টুথব্রাশ দিয়ে নখটি আস্তে আস্তে ঘষুন। সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে একমাস যাবৎ প্রতিদিন এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করুন।

৩। ব্রণ দূর করতে

ত্বকের সমস্যা যেমন- ব্রণ দূর করতেও সাহায্য করে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড যেখানে ব্যবহার করা হয় তার পরিবেশকে জারিত করতে পারে। তাই যখন ব্রণের উপর ব্যবহার করা হয় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তখন তা ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরকে জারিত করে এবং তাদের রাসায়নিক গঠনকেও বিপর্যস্ত করে। এর ফলে তারা মারা যায়। ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে গেলে ব্রণ দূর হয়। এছাড়াও ত্বকের তেলের নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে ব্রণ ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড।

ক্লিঞ্জার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। তুলার বলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড লাগিয়ে ত্বকে লাগান। ১-২ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার লাগান। সংবেদনশীল ত্বকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করবেন না।

৪। চিতি দূর করতে

চিতি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরি করতে পারে, ইমিউনিটিকে দুর্বল করা থেকে শুরু করে ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। ছত্রাকের বৃদ্ধির কারণেই চিতি পড়ে। হাইড্রোজেন পারক্সাইডের মাধ্যমে ছত্রাকের বৃদ্ধিকে বন্ধ করে চিতি পড়া রোধ করা যায়। একটি স্প্রে বোতলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নিয়ে চিতি পড়া স্থানে স্প্রে করুন। ১০ মিনিট রাখার পরে ঐ স্থানটি ঘষে নিন যাতে চিতি ও চিতির দাগ দূর হয়ে যায়। তারপর স্থানটি পানি দিয়ে মুছে নিন। প্রয়োজনে এর পুনরাবৃত্তি করুন।

৫। কার্পেটের দাগ দূর করতে

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড চমৎকারভাবে দাগ দূর করতে পারে। এটি কার্পেটের বিভিন্ন দাগ যেমন- সস বা কফির দাগ দূর করতে সাহায্য করে কার্পেটের রঙ নষ্ট করা ছাড়াই। ভেজা দাগ একটি কাপড় দিয়ে মুছে নিন। ১ টেবিলচামচ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং ১ টেবিলচামচ তরল ডিশ ওয়াশিং সাবান মিশিয়ে নিয়ে দাগের উপর স্প্রে করুন। একটি স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে নিন। তারপর পানি দিয়ে মুছে নিন জায়গাটি। সবশেষে সুতি কাপড় দিয়ে চেপে চেপে পানিটুকু মুছে নিন।

৬। ফল ও সবজিকে নির্বিষ করতে

ফল ও সবজিতে থাকা কীটনাশক দূর করতে সাহায্য করে হাইড্রোজেন পারক্সাইড। E. coli এর মত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে এটি। এছাড়াও হাইড্রোজেন পারক্সাইড ফল ও সবজিকে দীর্ঘক্ষণ সতেজ থাকতে সাহায্য করে। একটি স্প্রে বোতলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নিয়ে ফল ও সবজির উপর স্প্রে করুন। ৫ মিনিট পর কলের পানিতে ধুয়ে ফেলুন এবং শুকিয়ে রাখুন।

হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড ব্যবহারে সতর্কতা

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মূলত দাঁতের চিকিৎসকরা ব্যবহার করেন। কারণ তারা ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য এই কেমিক্যাল ব্যবহার করেন। এবং বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম অনুযায়ী এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। শরীরের ভিতরে গ্রহণ করার জন্য এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। সঠিক নিয়ম মেনে যদি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড না ব্যবহার করা হয় তাহলে তা শরীরের ভিতরে গিয়ে কেমিক্যাল রিয়্যাকশনের ফলে বিষাক্ত কোনও পদার্থ তৈরি করতে পারে। যার ফলে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নেবুলাইজারের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করলে তা সরাসরি ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করে। এর ফলে ফুসফুসের মধ্যে থাকা কোষগুলির উপরে প্রভাব পড়ে এবং সেলুলর DNA-এ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এতটাই শক্তিশালী কেমিক্যাল যে এটি ফুসফুসে পৌঁছলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমতে পারে। এমনকী লং টার্ম ড্যামেজ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোভিডের চিকিৎসা কোনও সময় বাড়িতে নিজের সিদ্ধান্ত মতো করা উচিত নয়। কারণ এতে ভালো হওয়ার পরিবর্তে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ