28 C
আবহাওয়া
১২:১১ পূর্বাহ্ণ - মে ১১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮৫ (ঢাকা-১২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮৫ (ঢাকা-১২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা-১২ আসনের হালচাল।

YouTube player

ঢাকা-১২ আসন 

ঢাকা-১২ সংসদীয় আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৫ ও ৩৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। জাতীয় সংসদের ১৮৫তম এই আসনটি তেজগাঁও, শেরে বাংলা নগর আসন নামে পরিচিত। এই আসনে সরকার প্রধানের বাসভবন গণভবন, জাতীয় সংসদ ভবন, সংসদ সদস্যদের বাসভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবস্থিত। ফলে আসনটিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই বিচার করে যেকোনো রাজনৈতিক দল।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নিয়ামত উল্লাহ সাবু বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ২ শত ৯০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২১ হাজার ৬ শত ৮৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির নিয়ামত উল্লাহ সাবু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ২ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শামছুজ্জোহা খান মজলিস। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ২ শত ৯৮ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নিয়ামত উল্লাহ সাবুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির নিয়ামত উল্লাহ সাবুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির দেওয়ান মো: সালাউদ্দীন বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১২ হাজার ৫ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ২ শত ৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির দেওয়ান মো: সালাউদ্দীন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭১ হাজার ২ শত ৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আশরাফ উদ্দীন খান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৩ শত ৪৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির দেওয়ান মো: সালাউদ্দীন বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ৮ শত ৬৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮ শত ৬১ জন। নির্বাচনে বিএনপির দেওয়ান মো: সালাউদ্দীন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭ শত ৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মো: তৌহিদ জং। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৮ হাজার ৬২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নুর তাপস বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬০ হাজার ৮ শত ৫৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬ শত ৮৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নুর তাপস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৮ হাজার ১ শত ২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির খন্দকার মাহবুব উদ্দীন আহমেদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৫৪ ভোট।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান বিজয়ী হন 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮ শত ৩৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪ শত ৮০ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান , ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সাইফুল আলম নীরব, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দীন সরকার, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টির শাহীন খান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের শওকত আলী হাওলাদার, কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জোনায়েদ আবদুর রহিম সাকী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯১ হাজার ৮ শত ৯৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সাইফুল আলম নীরব। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩২ হাজার ৬ শত ৭৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ,সপ্তম, অষ্টম, সংসদে বিএনপি, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঢাকা-১২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-১২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৯.২৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৬৫%, বিএনপি ৫২.০০%, জাতীয় পাটি ২.৫৬% জামায়াত ইসলামী ৩.৬২ %স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১১.১৭%ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.৮৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯.৭৪%, বিএনপি ৪৪.৭৫% জাতীয় পাটি ২০.৯৬%, জামায়াত ইসলামী ২.৮০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৭৫%ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৭৯ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪০.০৫%, ৪ দলীয় জোট ৫৭.০৯%, জাতীয় পার্টি ২.৩৩ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.২২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬০.২১%, ৪ দলীয় জোট ৩৫.৩০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৪৯% ভোট পায়।

ঢাকা-১২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারের টানা তিন মেয়াদের সবচেয়ে বেশি সময় ও সফলতম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ধরা হয় তাকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।

বিএনপি থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি ও ব্যবসায়ী মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদ, সাবেক কমিশনার ও ঢাকা উত্তর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার ছেড়ে দেয়া আসনে উপ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৮২ সালের ৩১ মে আবারও পট পরিবর্তন হয়। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামসুদ্দোহা খান মজলিশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অংশ নেয়নি। আসনটি থেকে আ.স.ম আবদুর রব নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বিরোধী দলের আশরাফ উদ্দিন খান ইমু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম, ষষ্ট, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হন। নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আসনটি পুরুদ্ধার করে। দশম ও একাদশেও আওয়ামী লীগের দখলে থাকে আসনটি।

এই আসনে বিএনপিতে গ্রুপিং রয়েছে। গ্রুপিং নেই আওয়ামী লীগে। সেই দিক থেকে নির্ভার আওয়ামী লীগ।
প্রসঙ্গত: তেজগাও শিল্পাঞ্চল ও আশে পাশের এলাকায় নোয়াখালী ও চাঁদপুরের ভোটার বেশি। ফলে ভোটের আঞ্চলিক রাজনীতিতে এই দুই জেলার বাসিন্দরা জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৮৫তম সংসদীয় আসন (ঢাকা-১২) আসনে আওয়ামী লীগের পাল্লাই ভারি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহেনা, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ