39 C
আবহাওয়া
৬:০৫ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর দায় কার?

নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর দায় কার?

ইমারত

বিএনএ ডেস্ক: বহুতল ইমারত নির্মাণের পসরা এখন সবখানে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নির্মাণশ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি। প্রায় প্রতিদিনই নির্মাণশ্রমিকের নিহত আহত হওয়ার খবর আসে। কখনো নির্মাণাধীন স্থাপনার ছাদ ধসে কারও মৃত্যুর খবর, কেউবা প্রাণ হারান অনেক উঁচুতে ঝুলন্ত থাকা দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে। পথযাত্রীর মাথায় পাথর কিংবা ইটের টুকরো পড়ে প্রাণ হারানোর খবরও পাওয়া যায়।

জানা গেছে, নির্মাণ খাত আমাদের অর্থনীতির এক তেজি খাত। দেশের নির্মাণ খাতে শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তাসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা শ্রম আইনে বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে সব জায়গায় এই বাধ্যবাধকতা মানা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্য বলছে, বছরে কর্মস্থলে নিরাপত্তার অভাবে গড়ে ১৩০ জন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। নির্মাণ খাতে মৃত্যু ও আহতের সঠিক পরিসংখ্যান কোনো সংস্থার কাছে নেই।

বিলসের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সাড়ে চার বছরে ৫৮৯ জন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে দেশে প্রতিবছর কর্মস্থলে নিরাপত্তার অভাবে গড়ে ১৩০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে শুধু রাজধানীতে পাঁচজন পথচারীসহ ১৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন উড়াল সড়কে কংক্রিটের বিশাল গার্ডার ক্রেন দিয়ে তোলার সময় চলন্ত গাড়ির ওপর পড়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর জানা গেছে, সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ভারী সরঞ্জাম সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। এমনকি ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী।

এর আগে ৩ আগস্ট মুগদার ঝিলপার এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করার সময় মাচা থেকে পড়ে ইকবাল হোসেন (৩৫) নামের এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মৃতের সহকর্মীরা জানান, কাজ করার সময় ইকবালের কোমরে বেল্ট ছিল না। কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জামও ছিল না। এখন পর্যন্ত তাঁর পরিবার কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পায়নি। এমনকি মামলাও করা হয়নি।

বিলস বলছে, কর্মস্থলে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও ভালো জাল না থাকা; দুর্বল মাচার ব্যবহার; এলোমেলোভাবে রড, বালু ও ইট রাখা; ভালো সিঁড়ি, আধুনিক যন্ত্র ও পর্যাপ্ত আলোর অভাব, হেলমেট, বেল্ট ও বুট ব্যবহার না করা এবং ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) হিসাব অনুযায়ী, দেশে এই খাতে নিয়োজিত আছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। নির্মাণকাজে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ শ্রমিক মারা যান নির্মাণস্থলে উঁচু থেকে নিচে পড়ে, ৭ থেকে ৮ শতাংশ শ্রমিক মারা যান আগুনে পুড়ে ও চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এবং প্রায় ৪০ শতাংশ শ্রমিক দুর্ঘটনায় হাত-পা কেটে যাওয়া, আঙুল কেটে পড়ে যাওয়া বা এমন নানা মাত্রার অঙ্গহানির শিকার হয়ে থাকেন।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘শ্রম আইন মেনে চললে নির্মাণ খাতে প্রতিবছর এত শ্রমিকের মৃত্যু হতো না। মালিক-ঠিকাদার একত্র হয়ে এটা করার কথা থাকলেও করে না। এ ছাড়া সরকারের কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে থাকার ব্যবস্থাগুলো দেখার কথা থাকলেও কখনো তারা করে না। শ্রম আইনও বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ না করায় এত শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। শ্রম আইনে কর্মক্ষেত্রে মারা গেলে দুই লাখ এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে গেলে আড়াই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেটি অনেক ক্ষেত্রে মানছে না ভবন মালিকপক্ষ।’

শ্রমিক অধিকার সংস্থাগুলোর মতে, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে কিংবা পরে হতাহত শ্রমিকদের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ থাকে না। সবাই তখন অচেনা হয়ে যায়। প্রতিনিয়ত নির্মাণ শ্রমিক উঁচু ইমারত থেকে ঝুপ ঝুপ করে পড়ে মারা যাচ্ছেন। অনেক সময় কেউ তাদের নাম বলতে পারে না! কেউ জানায়না ইমারতের মালিকের নাম। কোথাও সে কথা ছাপা হয় না। কেউ জানে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা ডেভেলপারের পরিচয়ও। যার ফলে শ্রমিকের মৃত্যুর পর সবাই যেন উদাসীন হয়ে যায়।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ