তিনি হেসে দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন, “আপনি এখনও যুবক, দেশের কাজ করতে পারবেন। আমি আপনাকে দোয়া করছি। আপনাকে দেখে আমি খুশি হলাম।”
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩২১
আমি অসুস্থ সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে দেখতে গেলাম। শহীদ সাহেব বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না, কথা বলতেও কষ্ট হয়। ডাক্তার বাইরের লোকের সাথে দেখা করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। আমাকে দেখে তিনি খুব খুশি হলেন। বেবী (শহীদ সাহেবের একমাত্র মেয়ে) আমাকে বলে দিয়েছিল, রাজনীতি নিয়ে আলাপ যেন না করি। তিনি আস্তে আস্তে আমার কাছে রাজনীতি বিষয়েই জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন। আমি দু’এক কথা বলেই চুপ করে যাই। তিনি শেষ পর্যন্ত বললেন, “বিরাট খেলা শুরু করেছে মোহাম্মদ আলী ও মুসলিম লীগ নেতারা।”
হক সাহেব আমাকে বললেন, “গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ তাঁর সাথে আমাদের দেখা করতে অনুরোধ করেছেন।” আমরা বড়লাটের বাড়িতে উপস্থিত হলাম। তিনি যে কামরায় শুয়ে শুয়ে দেশ শাসন করতেন, সেই ঘরেই আমাদের নিয়ে যাওয়া হল। তিনি খুবই অসুস্থ। হাত-পা সকল সময় কাঁপে। কথাও পরিষ্কার করে বলতে পারেন না। তিনি হক সাহেবের সাথে আলাপ করলেন। আমার নাম ধরে জিজ্ঞাসা করলেন, উপস্থিত আছি কি না! হক সাহেব আমাকে দেখিয়ে দিলেন।
আমি আদাব করলাম। তিনি আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বসালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, “লোকে বলে, আপনি কমিউনিস্ট, একথা সত্য কি না?” আমি তাঁকে বললাম, “যদি শহীদ সাহেব কমিউনিস্ট হন, তাহলে আমিও কমিউনিস্ট। আর যদি তিনি অন্য কিছু হন তবে আমিও তাই।” তিনি হেসে দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন, “আপনি এখনও যুবক, দেশের কাজ করতে পারবেন। আমি আপনাকে দোয়া করছি। আপনাকে দেখে আমি খুশি হলাম।” কথাগুলি বুঝতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল, কারণ কথা তিনি পরিষ্কার করে বলতে পারেন না। মুখটাও বাঁকা হয়ে গেছে। হাত-পা শুকিয়ে গিয়েছে। আল্লাহ সমস্ত বুদ্ধি আর মাথাটা ঠিক রেখে দিয়েছেন।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর: ২৬৮-২৬৯।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩২০