38 C
আবহাওয়া
৪:২০ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাজধানীতে বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

রাজধানীতে বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

অজ্ঞান পার্টি

বিএনএ, ঢাকা, আজিজুল হাকিম : ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে শতাধিক পয়েন্টে সক্রিয় অজ্ঞান, মলমপার্টি ও ছিনতাইকারী সদস্যরা। অজ্ঞান ও মলমপার্টি সদস্যরা সাধারণ মানুষকে খপ্পরে ফেলতে কখনো ফল বিক্রেতা, শরবত বিক্রেতা, কখনো সিএনজি চালক, কখনো আবার ফেরিওয়ালা সাজছে। তারা নেশাজাতীয় উপদান মিশ্রিত হালুয়া, ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসে সাথে মিশিয়ে মানুষকে খাইয়ে অচেন করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আতরের সঙ্গে চেতনানাশক মেডিসিন মিশিয়ে বিক্রির নামে মাঠে কাজ করছে তারা।

গত তিন দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থেকে অচেতন ও আহত হয়ে ১২ জন ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইলফোন হাতিয়ে নেয় ওই চক্ররে সদস্যরা। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ শহীদ ফারুক সড়কে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়েছে লিয়াকত আলি নামে এক ব্যক্তি। পরে তাকে পথচারীরা উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসা পর মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠিয়েন। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করেন।

শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কারওয়ান বাজারের সামনে থেকে ফল ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান (৪৫)। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পথচারী বাবুল মিয়া তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসকরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেন। বৃহস্পতিবার ভোরে রিকশায় শান্তিনগর যাচ্ছিলেন কাচামাল ব্যবসায়ী কামাল হোসেন (৫০)। সাদা রংয়ের একটি প্রাইভেটকারে থাকা দুই ছিনতাইকারী তার রিকশার গতিরোধ করে ওই ব্যবসায়ীকে হাতে ছুরিকাঘাত করে তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে সে আহতাবস্থায় ঢামেক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন।

গত বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টায় পলাশীর থেকে রিকশাযোগে কারওয়ানবাজার লেবু আনতে যাচ্ছিলেন আমিরও ইমরান নামের দুই ব্যবসায়ী । এসময় ৩/৪ জন ছিতাইকারী তাদের রিকশার গতিরোধ করে ছুরিকাঘাত করে ৪ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ দিকে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায় রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপর ছিতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে হারুন অর রশিদ (৪০) নামের এক কাটাকাপড় ব্যবসায়ী আহত হন। তার কাছ থেকে ১৯ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ছিনতাকারীরা। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন। পশালী মুগদা, গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদ গেট, মানিক মিয়া এভিনিউ, ফার্মগেট, আনন্দ সিনেমা হল, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, নিউমার্কেট, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, বিমানবন্দর রেল স্টেশন, মতিঝিল, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, টিকাটুলী, সায়েদাবাদ, জুরাইন, পোস্তাগোলা, লালবাগ, সদরঘাট, কাকরাইল, ফকিরাপুল, কমলাপুর, মালিবাগ, শান্তি নগর, মৌচাক, মগবাজার, রাজারবাগ পুলিশ লাইন মোড়, সাতরাস্তা মোড়, মহাখালী, চেয়ারম্যান বাড়ি, বিজয় সরণি, গুলশান মোড়, উত্তার বাড্ডা, বনশ্রীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অজ্ঞান, মলম পার্টির ও ছিনতাইকারী সদস্যরা বেশি সক্রিয়।
জানা যায়, চলতি বছরে রাজধানীতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অজ্ঞান ও মলম পার্টি ও ছিনতাইকারী সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান ও মামলা করা হচ্ছে । যাদেরকে গ্রেফতার করা হয় এর মধ্য ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়া হচ্ছে । আবার তাদের কাজ থেকে টাকা জরিমানা করা হচ্ছে । গত কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান ও মলম পার্টির কয়েক জন সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
একই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে বেশ কিছু চেতনানাশক ওষুধ ।

কৌশলী অজ্ঞান পার্টি:

কোমল পানীয় কিংবা বোতলজাত খাবার পানির সঙ্গে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনসুলিন মিশিয়ে তৈরি করা হয় অজ্ঞান করার রেসিপি। আবার গণপরিবহনে সিটের কাছে ক্লোরোফর্ম জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ লাগিয়েও অজ্ঞান করার কাজটি করা হয়। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা এলাকা ভাগ করে ‘অপারেশন’ পরিচালনা করছে। আবার টার্গেট ভিত্তিক এলাকার বাইরে চলে গেলে তাদেরকে নিজেদের আয়ত্তে রাখতেও দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় রিলে দৌড়ের মতো। পার্টির কেউ সাজছে ডাব বিক্রেতা, কেউ পানির ফেরিওয়ালা, কেউ হচ্ছে সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী, আবার অজ্ঞান করা কিংবা চোখে মলম লাগানোর ক্ষেত্রে স্বল্প পাল্লার মাইক্রোবাসকে ব্যবহার করছে তারা।

শাহজাহানপুর রেললাইন বস্তির যুবক নুরু-আলম (ছদ্মনাম) যিনি অজ্ঞান পার্টির সদস্য। তিনি বলেন, আমার ওস্তাত শামিম সরদার। ওস্তাদের কাছ থেকে এ কাজ শিখেছি। এছাড়া অভাবের সংসার, টাকার লোভে পড়ে এ পথ বেছে নিয়েছি। একাজ করতে গিয়ে গত মাসে পুলিশের হাতে ধরা পড়ি, এর ২০ দিন পরে জামিনে বের হয়ে একই কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, কারওয়ানবাজার রেললাইন বস্তি, রেলস্টেশন বস্তি ও নাখালপাড়া বস্তির উঠতি অনেক যুবক এফডিসি গেট, সার্ক ফোয়ারা, বাংলামোটর ও ফার্মগেট পার্ক বস্তির এলাকায় এ কাজের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে টগর, মাসুদ, রিফাত অন্যতম। এরকম প্রতিটি পয়েন্টে একেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির দায়িত্বে রয়েছে শামিম হাওলাদার বলে জানা গেছে।

পুলিশ যা বলছে :
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা বলেন, ঈদুল আযাহাকে ঘিরে অজ্ঞান ও মলম পার্টি ও ছিনতাই কিছুটা বেড়েছে। তবে তাদেরকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। এই চক্র কৌশলী হয়ে কাজ করছেন। তারা রাস্তায় খাবারের পসরা বসিয়ে আখের রস, ডাব ও হালুয়া খায়িয়ে সব কিছু লুট করে নিচ্ছে। মলম পার্টির সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অজ্ঞান পার্টির বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে সব সময় সাদা পোশাকে ও মোবাইল টিম কাজ করছে।

বিএনএনিউজ/এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ