28.8 C
আবহাওয়া
৯:২০ অপরাহ্ণ - মে ১৪, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » চট্টগ্রামের বলি খেলা: আহমদ মমতাজ ও রাইহান নাসরিনের গবেষণা গ্রন্থ

চট্টগ্রামের বলি খেলা: আহমদ মমতাজ ও রাইহান নাসরিনের গবেষণা গ্রন্থ

চট্টগ্রামের বলি খেলা: আহমদ মমতাজ ও রাইহান নাসরিনের গবেষণা গ্রন্থ

।।এনামুল হক নাবিদ।।

পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এ দিনটি বাংলাদেশে নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। এটি বাঙালির একটি সর্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপন হয় নববর্ষ। আর ‘বলি খেলা’ অন্যতম অনুসঙ্গ। বিশেষ করে চট্টগ্রামে।

কুস্তি ফারসি শব্দ, কুস্তি যারা খেলেন তারা কুস্তিগীর। বলী শব্দটি বাংলা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের নিজস্ব ভাষার সৃষ্টি যার অর্থ পরাক্রমশালী লোক বা বীর পুরুষ। কুস্তি যারা খেলেন বা খেলায় যারা বিজয়ী হন তারাই বলী নামে পরিচিত ও সম্মানের অধিকারী। বলীদের মধ্যে যারা শীর্ষস্থানীয় এবং দৈহিক শক্তিতে যারা কিংবদন্তিতুল্য-তারা মল্লবীর।

প্রাচীনকালে বলী খেলা ছিল গ্রামীণ জীবনে অবসর বিনোদন ও খ্যাতি-মর্যাদার প্রতীক। কালক্রমে তা হয়ে ওঠে বিশেষ করে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও অহংকারের প্রতীক। মানবজাতির ইতিহাসে কুস্তি বা মল্লযুদ্ধ প্রাচীনতম। প্রথমদিকে মানুষ আত্মরক্ষা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতো। পরবর্তীকালে প্রতিপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তার এবং আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে কুস্তি বা মল্লযুদ্ধ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আহমদ মমতাজ ও রাইহান নাসরিনের বাড়ি দুজনের বাড়ী চট্টগ্রাম। সে সুবাদে বিভিন্ন ব্যক্তি-উদ্যোগে আয়োজিত জনপ্রিয় ও সর্বজনীন বলী খেলা সম্পর্কে বিচিত্র সব তথ্য মাঠপর্যায়ে গবেষণাকর্মের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে সংগ্রহ করেছেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে কয়েক বছর ধরে করা কঠোর পরিশ্রমের ফসলরূপ গ্রন্থটি আহমদ মমতাজ ও রাইহান নাসরিন তথ্যবহুল গ্রন্থটি প্রকাশের বিষয়ে যথাসাধ্য করেছেন।

সেখানে ওঠে এসেছে তারা কিভাব পরোক্ষভাবে বলি খেলা দেখে চট্টগ্রামের গ্রামে গঞ্জে বৈশাখী মেলা ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই ইতিহাসকে একগুচ্ছ করে সমৃদ্ধ করেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বলী খেলা এবং নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ঢাকা অঞ্চলে কুস্তি খেলা নামে পরিচিত লোকজ খেলাটি সবার কাছেই জনপ্রিয়। বিশেষ করে প্রতি বছর বৈশাখ মাস এলেই যেন সাজ সাজ রব পড়ে যায়।

চট্টগ্রামের এই বলি খেলাকে গ্রামীন মেঠোপথে বাংলার ঐতিহ্যকে গবেষণার মাধ্যমে নতুন করে তুলে এনেছে আহমদ মমতাজ ও রাইহান নাসরিন। লিখেছেন ‘চট্টগ্রাম বলি খেলা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ। বাংলা একাডেমীর প্রকাশিত ‘চট্টগ্রামের বলী খেলা’ লোকজ খেলাধুলা বিষয়ক একটি তথ্যবহুল গ্রন্থ। যা চট্টগ্রামের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।

এই গবেষণা গ্রন্থে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর অহংকারের আরেক নাম লালদিঘির ময়দানে অনুষ্ঠিত জব্বার মিয়ার বলী খেলা। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। তারপর থেকে প্রতিবছরের ১২ই বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলি খেলা। যা এখনো অব্যাহত আছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে দুই বছর এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুই বছর বলীখেলা হয়নি। এ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘী ময়দানের আশে পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়। এটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার সবচেয়ে বৃহৎ বৈশাখী মেলা।

বিএনএনিউজ/ নাবিদ

Loading


শিরোনাম বিএনএ