29 C
আবহাওয়া
৮:০৩ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মিতু হত্যা: যেভাবে অভিনয় করলেন বাবুল আক্তার

মিতু হত্যা: যেভাবে অভিনয় করলেন বাবুল আক্তার

বাবুল

বিএনএ, ঢাকা: স্ত্রীকে খুনের খবর পেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরে অঝোরে কেঁদেছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। এমনকি কান্নায় ভেঙে পড়া বাবুল জানাজায় দাঁড়াতেও পারছিলেন না! তার চোখের জল আবেগাক্রান্ত করেছিল সহকর্মীদের। বেশ কয়েকবার ফেসবুকে স্ত্রী হারানোর বিয়োগব্যাথা নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার পাঁচ বছরের মাথায় এসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে উঠে এসেছে— সবটাই ছিল বাবুল আক্তারের অভিনয়! হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাবুল নিজেই।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল ৭টা ১৭ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে করে তিন দুর্বৃত্ত মিতুকে ঘিরে ধরে প্রথমে গুলি করে। এরপর কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন বাবুল আক্তার। মামলাটি চট্টগ্রামের নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ৩ বছর ১১ মাস তদন্তে থাকার পর গত বছরের মে মাসে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়।

সেই কল রেকর্ড : ২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত মুছার মোবাইল ফোনে কল যায় তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোন থেকে। মাত্র ২৭ সেকেন্ডের মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ডটিই এখন মিতু হত্যার প্রধান আলামত ও সাক্ষী। সালাম দিয়ে মুছা ফোনটি রিসিভ করতেই ওপার থেকে বাবুল আক্তার বলেন, ‘তুই কোপালি ক্যান? ৩/৪ সেকেন্ড থেমে আবার বলেন, বল তুই কোপালি ক্যান? তোরে কোপাতে কইছি? ওপার থেকে মুছার কথা, না মানে’।’ বাবুল আক্তার ফোনটি কেটে দেন।

বাবুল-মিতুর দাম্পত্য কলহ: পরকীয়া প্রেমের এসএমএস নিয়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায় হত্যার সাত মাস আগে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে মিতু আপত্তিকর কিছু এসএমএস দেখতে পান। সেখানে গায়েত্রী এম্মার্সিং নামের এক ভারতীয় নারীর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কের তথ্য জানতে পারে মিতু। এ নিয়ে বাবুল আক্তারের প্রত্যহ বাকবিতণ্ডা শুরু হয় দুজনের মধ্যে।

কি ছিল সেসব ম্যাসেজে: মিতুর মায়ের দাবি করা একটি আর্ট পেপারে লেখা ২৯টি মেসেজের সবগুলোই ইংরেজিতে লেখা। মেসেজগুলোতে গায়ত্রী ও বাবুলের মধ্যে গভীর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। একটি মেসেজে এমন লেখা হয়েছে, মাই পোয়েট মাই লাভ কাম টু মি’, লাভ ইউ মাই কিং উলড হ্যাভ কিসড ইউ প্যাশোনেটলি, ইফ ইউ ওয়্যার হেয়ার নাউ’, লাভ ইউ বেবি, গুড মর্নিং, কাম টু স্লিপ টু মি’।

গায়ত্রী এম্মারসিং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক ইউএনএইচসিআর প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে প্রতিরোধ শাখার একজন কর্মকর্তা হিসাবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালে তখন বাবুল আক্তার কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্তমানে গায়ত্রী এম্মারসিং সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় কর্মরত।

যেভাবে হত্যাকাণ্ড : ২০১৬ সালের ২৪ জুন বাবুল আক্তারের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ওই বছরের ২৬ জুন আনোয়ার ও মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনকে গ্রেফতারের তথ্য জানায় পুলিশ। তারা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলে, কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছার ‘পরিকল্পনাতেই’ এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়।

জবানবন্দিতে ওয়াসিম জানায়, নবী, কালু, মুছা ও তিনি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। হত্যার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের সামনে ছিল মুসা, এরপর আনোয়ার ও একদম পেছনে ছিল সে। মোটরসাইকেলের পিছন থেকে সে প্রথমে মিতুকে গুলি করে। জিইসির মোড়ে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা নবী তার বুকে, হাতে ও পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। পুরো সময়টা বাবুল আক্তারের ছেলেকে আটকে রেখেছিল মুসা। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা চলে যায়। পরে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই আসামি নূরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। মুছাসহ দুইজন আসামি গুম হয়ে গেছে। এই মামলায় বর্তমানে ওয়াসিম ও আনোয়ার গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দী। নবী, কালুসহ ৩ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ