31 C
আবহাওয়া
৫:৫৭ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ডা. বিজন বহাল তবিয়তে

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ডা. বিজন বহাল তবিয়তে

জেনারেল হাসপাতালে

বিএনএ, চট্টগ্রাম : দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. বিজন কুমার নাথ বহাল তবিয়তে রয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)মামলা হওয়ার পর থেকে কিছুদিন গা ঢাকা দিলেও দীর্ঘদিন ধরে স্বপদে বহাল রয়েছেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ১১টায় হাসপাতালে গেলেও বেলা ১টায় চলে যান।  হাসপাতালে তিনি রোগীদের তেমন অপারেশন করেন না। মোটা অংকের বিনিময়ে  বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের অপারেশন করেন। ৬০ বছরের বেশি বয়স হলে ঝুঁকি রয়েছে বলে হাসপাতালে অপারেশন করেন না। ঠিকই বেসরকারি হাসপাতালে মোটা অংকের চুক্তিতে অপারেশন করেন তিনি।

সরকারি চিকিৎসকরা প্রাইভেট চেম্বার করা নিষেধ হলেও তিনি নগরীর মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেন। শনি ও সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে এবং বাকি দিনগুলোতে বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিনি রোগী দেখেন মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এছাড়া ম্যাক্স হাসপাতালে সপ্তাহে দুইদিন রোগী দেখেন তিনি। তিনি রোগী প্রতি ফি নেন ৭শ’ টাকা। দুর্নীতির পাশাপাশি এভাবে সেবাকে ব্যবসা বানিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করছেন ডা. বিজন কুমার নাথ।

২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বাদি হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে ভারি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার দায়ে চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জনসহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করেছিলেন। পরে মামলাটি রেকর্ড করেন দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন।

ওই মামলায় জেনারেল হাসপাতালের জন্য ৪ কোটি  টাকার মেশিন সাড়ে ১২ কোটি টাকায় কেনার অভিযোগ আনা হয়। এতে ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাৎ করার অপরাধে দন্ডবিধি ৪০৯, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারায় ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

মামলার প্রধান আসামি চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক  ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী জামিনে রয়েছেন। অপর ৬ আসামি পলাতক। যার মধ্যে স্বপদে বহাল আছেন ডা. বিজন কুমার নাথ। তিনি চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ঘাটফরহারদবেগ আ/এ ৩৫৮/৩৭৭ আনন্দধারা যতীন কুঠির ভবনের মৃত হরিনাথের ছেলে।

এছাড়া একইভাবে মামলার অপর আসামি সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. মো. আবদুর রউফ এবং কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের সোনাপুর গ্রামের আবদুল মালেক মজুমদারের ছেলে জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো ও সার্জারি) মো. মইনুদ্দিন মজুমদারও স্বপদে বহাল আছে বলে জানা গেছে।

মামলার অপর আসামিরা হলেন দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়া থানার উত্তর সুজাপুর গ্রামের আবদুস সাত্তার সরকারের ছেলে বেঙ্গল সাইন্টিফিক এন্ড সার্জিকেল কোম্পানির প্রোপ্রাইটর জাহের উদ্দিন সরকার। গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানার কাশিয়ানির গ্রামের মৃত মুন্সি আহমদ হোসেনের ছেলে মেসার্স আহমদ এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মুন্সি ফারুক হোসেন। ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার চতুল গ্রামের আব্দুল ওয়াহাব মোল্ল্যার ছেলে এএসএলের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ।

এ মামলায় দুদকের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মামলা দায়েরের পর থেকে দুই বছর হতে চলেছে। দুদক তাদের গ্রেফতার করছে না। মামলার অভিযোগপত্রও আদালতে দাখিল করছেন না। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও দুদক নিরব ভুমিকা পালন করছে।ফলে আসামিরা বহাল তবিয়তে রয়েছে।

মঙ্গলবার(৯ নভেম্বর) দুপুরে ১টার দিকে এ প্রতিবেদক মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গেলে দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন ও দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম সাক্ষাৎ দেন নি। মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেন নি। যার ফলে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, এ মামলায় এক আসামি জামিনে রয়েছে। অন্যরা পলাতক আছে। এখনও অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল না হওয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছেন না।দুদক কেন তাদের গ্রেফতার করছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুদকের জনবল একেবারেই কম। একটি থানায় আছে ৩০/৪০ জন জনবল। দুদক পুরো বিভাগে আছে মাত্র ২৮ জন জনবল। নিয়মিত মামলার কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখানে গ্রেফতার কার্যক্রম কিভাবে চালাবে ?

চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, সেটি এখনও তদন্তাধীন। মামলায় গ্রেফতার বা জেল হলে তারা সাময়িক বরখাস্ত হবেন। এসব না হওয়ায় তারা এখনও বহাল রয়েছেন।

বিএনএনিউজ২৪.কম/আমিন

Loading


শিরোনাম বিএনএ