31 C
আবহাওয়া
১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫৪ (রাজশাহী-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫৪ (রাজশাহী-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে রাজশাহী-৩ আসনের হালচাল।

রাজশাহী-৩ আসন 
রাজশাহী-৩ রাজশাহী জেলার পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৫৪ নাম্বার আসন। পবা ও মোহনপুরউপজেলায় রয়েছে তিনটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন। পবা উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বারনই নদী। আর মোহনপুরের সীমান্ত এলাকা হয়ে প্রবাহিত শিব নদ। দু’টিতেই কেবল বর্ষাকালে পানি থাকে। আর শুষ্ক মৌসুমে শিব নদের বুকজুড়ে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ সবুজ ধান।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনঃনির্ধারণে রাজশাহীতে নতুন এই আসনটি যুক্ত হয়। এর আগের সব নির্বাচনে এ আসনের পবা উপজেলাটি যুক্ত ছিল রাজশাহী-২ আসনে। আর মোহনপুর উপজেলা যুক্ত ছিল বর্তমান রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সঙ্গে।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির সরদার আমজাদ হোসেন বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী-৩ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৪ শত ৬০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪ শত ৭ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সরদার আমজাদ হোসেন বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ১ শত ৩৬ ভোট।তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আহাদ কবিরাজ। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ৪ শত ৬৩ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল গফুর বিজয়ী হন
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এতে বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল গফুর বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ১ শত ৩৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জনদলের সামশুল হক। তিনি পান মাত্র ১ হাজার ১ শত ৮৭ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবু হেনা নির্বাচিত

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫ শত ২০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ১ শত ৪১ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবু হেনা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ৮শত ৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ১ শত ২১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবু হেনা বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪ শত ৬২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪ শত ৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবু হেনা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৩ হাজার ২ শত ৫৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জিনাতুননেসা তালুকদার । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৭ শত ১৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মেরাজ উদ্দিন মোল্লা বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৯ হাজার ৮ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭২ হাজার ৩ শত ৩৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেরাজ উদ্দিন মোল্লা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪২ হাজার ৪ শত ৮৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কবির হোসেন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৩ হাজার ৬ শত ৪৯ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন বিজয়ী 
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৮ হাজার ৭শত জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ৮ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নবম জাতীয় সংসদে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। কলস প্রতীকে তিনি পান ১২ হাজার ৩ শত ৪৩ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন নির্বাচিত হন
২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩ শত ৭৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৩ শত ৬৮ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন , ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শফিকুল হক মিলন। হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলুর রহমান, চাকা প্রতীকে সাম্যবাদী দল (এমএল) এর সাজ্জাদ আলী, কুলা প্রতীকে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মনিরুজ্জামান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন নির্বাচিত হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ১১ হাজার ৩ শত ৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শফিকুল হক মিলন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ৮ শত ৬ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

রাজশাহী- ৩ (পবা ও মোহনপুর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য মেরাজ উদ্দিন মোল্লা, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল, রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবু, রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন এবং পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন. বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট কবির হোসেন, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, বিএনপির রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, যুগ্ম-সম্পাদক রায়হানুল আলম রায়হান।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির মোহনপুর শাখার আহবায়ক অধ্যাপক আমিনুল হক।
জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। সেই ক্ষেত্রে ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতে ইসলামীকে এ ছাড় দেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি চাপ রয়েছে। তবে তারা এখনো কোন প্রার্থীকে সামনে আনেনি।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী- ৩ আসনে জাতীয় পাটি পঞ্চম সংসদে, বিএনপি ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে, আওয়ামী লীগ নবম, দশম ও একাদশ সংসদে টানা প্রতিনিধিত্ব করেছে।

YouTube player

 

 

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর রাজশাহী- ৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.৭৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৪.৩৭%, বিএনপি ৭.৮৭%, জাতীয় পার্টি ৩১.৩২%, জামায়াতে ইসলামী ২৬.২১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৯.৭৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.৭৭%ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৭.৩১ %, বিএনপি ৩৪.২৫ %, জামায়াতে ইসলামী ১৭.০৭%, জাতীয় পাটি ২১.১১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২৬% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৩৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.০১%, ৪দলীয় জোট ৪৫.৭৮%, জাতীয় পার্টি ২২.৯০%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩১% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৩.২৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫২.৭০%, ৪ দলীয় জোট ৩৪.২৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১৩.০৩% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসনটিতে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদে বিএনপিকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে আসনটি শাসন করছে আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিক দিক থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থা সমানে সমান। তবে আওয়ামী লীগ দুই শিবিরে বিভক্ত।
২০১৪ সালের ১৯শে ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সরদার আমজাদ হোসেনের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি, রাজশাহী-৩ আসন অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। দলটির অন্তকোন্দলও প্রকট।

ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী এ আসনে বড় ফ্যাক্টর। নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জোটগতভাবে অংশ নিলেও এখানে বিএনপিকে ছাড় দেয়নি জামায়াত। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেরাজ উদ্দিন মোল্লা বিজয়ী হন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারে। আওয়ামী লীগকে হটাতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ঐক্যবদ্ধ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৫৪ নম্বর রাজশাহী-৩ আসনটি ধরে রাখা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে ।

বিএনএ/ শিরীন,ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ