বিএনএ, ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে জুম মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার অপরাধে ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনকে ৮২ দিন পর হাসপাতাল থেকে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) নেওয়া হয়েছে।
শনিবার কারাগারে নেওয়ার পর থেকে আলাদা সেলে রাখা হয়েছে রফিকুল ইসলামকে। সাধারণত বন্দিদের নির্দিষ্ট সময়ে সেল থেকে বের হওয়ার সুযোগ থাকলেও রফিকুল আমিন আগামী ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এ সময়টাতে তার ওই কক্ষ থেকে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়াও জুম মিটিংকাণ্ডে তদন্ত চলায় তার সঙ্গে অন্য কেউ কথা বলতে পারবেন না বলেও নির্দেশনা দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশে রফিকুল ইসলামকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। তিনি এমনিতেই আলাদা রুমে থাকতেন। তবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ২-৩ বার তার ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ ছিল। হাসপাতালে তার জুম মিটিংকাণ্ডের পর থেকে তার চলাফেরা এবং কথাবার্তা সীমিত করা হয়েছে। তাকে নজরদারিতে কারারক্ষী দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার খাবারের একটি চার্ট রয়েছে। চার্ট অনুযায়ী খাবার তৈরি করে তার কক্ষের সামনে রেখে আসা হচ্ছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারাগারে করোনা ভাইরাস মুক্ত রাখতে গত বছরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে বাইরে থেকে কোনো বন্দি এলে তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে কারাগারে। যেহেতু রফিকুল আমিন দীর্ঘ দিন কারাগারের বাইরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তাই তাকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিনি ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।
কারাবিধি অনুযায়ী রফিকুলের জুম মিটিং করার অপরাধের বিষয়ে তার কোনো শাস্তি হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, রফিকুল আমিনের জুম মিটিংকাণ্ডে আমাদের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাসপাতালে রফিকুল আমিনের প্রিজন সেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে কারারক্ষী ছাড়াও ছিলেন শাহবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বলেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। কারা কর্তৃপক্ষের একটি তদন্ত কমিটি রয়েছে। তারাই ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করবেন।’ ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন কারাবন্দি হওয়া সত্ত্বেও ভিডিও অ্যাপ ‘জুম’ ব্যবহার করে সহযোগীদের সঙ্গে মিটিং করেছেন।
সুত্রটি আরও জানায়, রফিকুল আমিন কেবল কাগজে-কলমে কিংবা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ‘অসুস্থ’। হাসপাতালে থেকে দিব্যি ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার করে জুম অ্যাপে নিয়মিত মিটিংও করছেন।
ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও জুম মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার ঘটনায় গত ১ জুলাই কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পরবর্তী সাত কার্যদিবসে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
তদন্ত কমিটিটি ঢাকা বিভাগের ডিআইজি-প্রিজন্স তৌহিদুল ইসলামকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- মুন্সিগঞ্জের জেলসুপার নুরুন্নবী ভুঁইয়া এবং নারায়ণগঞ্জের জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম।
এদিকে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার পর গত ২ জুলাই এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। এছাড়া সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে চার কারারক্ষীকে।
বিএনএ/আজিজুল,ওজি