বিএনএ, ডেস্ক : গত ১৬ অক্টোবর রাজধানীর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমীর বিরুদ্ধে জুমার খুতবায় জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করার অভিযোগ এনেছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য উত্তরা পশ্চিম থানা জামায়াতে ইসলামীর দপ্তর সম্পাদক জি. এম. আসলামের স্বাক্ষরিত লিখিত চিঠিটি মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারির কাছে দিয়েছেন। ওই চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার, উত্তরা, উপ পুলিশ কমিশনার উত্তরা, উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে।
চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, বায়তুন নূর জামে মসজিদ উত্তরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ, যেখানে বিভিন্ন মতাদর্শের বহু মানুষ নামাজ আদায় করেন। অথচ ১০ অক্টোবরের জুমার খুতবায় খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী নাকি জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে “ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট” মন্তব্য করেছেন—যা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে বলে দলটির দাবি।
মসজিদ কমিটিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, মসজিদে যেন সব মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণভাবে জুমা আদায় করতে পারেন এবং খতিবের পক্ষপাতমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধেও যেন প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয় —খতিব ব্যক্তি হিসেবে যেকোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণ করতে পারেন, কিন্তু মসজিদের মিম্বার থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া অনুচিত। কারণ মসজিদে নানা দলের ও চিন্তাধারার মানুষ একত্রে নামাজ আদায় করেন, তাই ধর্মীয় স্থানে দলীয় মত প্রচার করা শোভন নয়।
জামায়াতে ইসলামীর প্যাডে লেখা চিঠিতে, ধর্মীয় বয়ান যেন কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাত থেকে মুক্ত থাকে, এবং ভবিষ্যতে এমন মন্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। এর পুনরাবৃত্তি ঘটলে , দায়ভার মসজিদ কমিটি ও খতিবের ওপর বর্তাবে বলেও সতর্ক করা হয়
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ – ২ (দিরাই- শাল্লা) সংসদীয় আসনের জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অ্যাডভোকেট শিশির মনির দুর্গা পুজা পরির্দশনে গিয়ে বলেছেন, রোজা আর পূজা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তিনি আরও বলেছেন—“এই বিষ্ণু, এই কৃষ্ণ, এই মোহাম্মদ, এই মুসা, এই ইসা—সবাই আমাদের সামনে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতীক।”
উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী জামায়াতে ইসলামী নেতা শিশির মনিরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয় জামায়াতে ইসলামী। দলটি সর্তকতামূলক লেখা চিঠির কপিটি মসজিদ কমিটি খতিবের কাছে হস্তান্তর করেন। গত শুক্রবার জুমার খুতবায় খতিব বলেন, রোজা আর পূজা এক নয়। আমি আগেও বলেছি, আজ আবার বলছি—সংযত হোন, তাওবা করুন।
মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী মিম্বারে বসেই মুসল্লিদের সামনে জামায়াতের পাঠানো চিঠিটি প্রদর্শন করে বলেন, এটি আমি গ্রহণ করছি না। খতিব নিজ হাতে চিঠিটি ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় উপস্থিত মুসল্লি ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার ধ্বনি দেন।
জামায়াতে ইসলামীর দেয়া এই চিঠি ছিড়ে ফেলার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
মুসল্লীরা বলছেন, টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর-গোপালপুর জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি হুমায়ন কবির মসজিদে রাজনৈতিক আলাপ করা না গেলে কোরআনও তেলোয়াত করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন। সেটিকে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন করেছেন- কিন্তু ‘রোজা ও পুজা একই নয়’- জামায়াত নেতার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করাকে সহ্য করলেন না দলটি? ক্ষমতায় আসার আগেই জামায়াত ইসলামী মসজিদের খতিবদের ওপর খড়গ নামাচ্ছেন, সতর্ক করছেন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য সেনা-পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে চিঠির অনুলিপি পাঠাচ্ছেন, ক্ষমতায় আসলে কী করবেন এমন প্রশ্ন তুলেছেন মুসল্লীরা।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী
![]()
