21 C
আবহাওয়া
৯:১৪ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চায় সিনহার পরিবার

আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চায় সিনহার পরিবার

আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চায় সিনহার পরিবার

বিএনএ কক্সবাজার: ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র তৈরি করতে কক্সবাজারে যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। কিন্তু প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেননি তিনি। তথ্যচিত্রের কাজ শেষে শহরে ফেরার পথে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোষ্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। আটক হন তার দুই সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ। মাদক সংক্রান্ত ঘটনা দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশ এই ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে। এই নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ছয়দিন ধরে চলে নানা নাটকীয়তা।

তবে ৫ আগস্ট শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা দায়ের করার পর ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। মামলায় সিনহাকে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ আনেন তিনি। এতে আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ দাশসহ ৯ জনকে।

৬ আগষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য। এরপর বাকিরাও ধরা পড়ে। আদালতের নির্দেশে এই ঘটনায় দায়ের করা ৪টি মামলার তদন্তের পায় র‍্যাব-১৫। একে একে দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেন ১২ আসামি।

চার মাস তদন্ত শেষে একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

গত ২৭ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এরপর গত ২৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। যা শেষ হয় গত পহেলা ডিসেম্বর। ৮ দফায় ৬৫ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিদের ৩৪২ ধারায় বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। চলতি বছরের নয় থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন।  সব কার্যক্রম শেষে দেশের আলোচিত মামলার রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি (সোমবার) দিন ধার্য করেন বিচারক। এই রায় ঘোষণা করবেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

এই রায়ে প্রধান দুই অভিযুক্ত বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ দাশের সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা চায় পরিবার। এছাড়াও অন্য আসামিদের তাদের অপরাধের ভিত্তিতে সাজা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডও বন্ধ হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন, অপরাধ করলে কেউ আইন এর হাত থেকে ও সাজা পাবার হাত থেকে রেহাই পাবে না- এই রায়ের মাধ্যমে সেটি ও প্রতিষ্ঠিত হবে বলেও প্রত্যাশা করেন সিনহার বড় বোন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে, পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। আদালতে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। পুলিশি ও আইনী আবরনে এরকম নিষ্ঠুর ঘটনা যাতে আর না ঘটে, আইনের প্রতি যাতে মানুষের শ্রদ্ধা থাকে সেই প্রত্যাশা করেন ফরিদুল আলম ।

আসামি পক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণে বাদিপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। এই মামলায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ২০২০ সালের ৫ আগস্ট কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেয় কক্সবাজারের র‍্যাব-১৫কে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, বরখাস্ত বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল ছাফানুল করিম, বরখাস্ত কনস্টেবল কামাল হোসাইন আজাদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী, বরখাস্ত কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, ও মো. রাজীব হোসেন, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নেজামুদ্দিন।

এদিকে, পুলিশের করা তিনটি মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।

বিএনএনিউজ/আরকেসি

Loading


শিরোনাম বিএনএ