প্রসিকিউশনের ৩০নং সাক্ষী এ.এস.পি. শেখ আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে সিনিয়র এ.এস.পি. হিসাবে ঢাকায় সি.আই.ডি.তে কর্মরত আছেন। ঘটনার সময় গোপালগঞ্জের সি.আই. হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৫ই আগস্ট সকালবেলা রেডিওতে মেজর ডালিমের কন্ঠে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা” করার খবর শোনে।
পরের দিন ১৬ই আগস্ট সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার টেলিফোনে জানাইলেন যে, বঙ্গবন্ধুর লাশ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় আসিতেছে। টুঙ্গীপাড়ায় লাশ দাফনের ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুসারে বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতার কবরের পাশে তাহার লাশ দাফনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানাইয়া এস.ডি.পি. ও নুরুল আলম, তিনি এবং ল’ইয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল কাদের বেলা ১১.৩০টার দিকে টুঙ্গীপাড়ায় পৌঁছিয়া হেলিফোর্ড ঠিকঠাক করে।
এই সময় চতুর্দিক হইতে লোকজন আসিয়া হেলিফোর্ড ঘিরিয়া ফেলে। বেলা ২টার সময় হেলিকপ্টার আসে। সাথে সাথে সশস্ত্র অবস্থায় ১৫/১৬ জন আর্মি হেলিকপ্টার হইতে নামিয়া চারিদিকে অবস্থান নেয়। আব্দুল হাই শেখ, সোহরাব মাস্টার, আকবর গাজী, নুরুল হক, আব্দুল মান্নানসহ সিপাহীরা মিলিয়া হেলিকপ্টার হইতে কফিন নামাইয়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে দাফনের জায়গায় নিয়া যায়। তাহারা কফিনের উপরের ডালা খুলিয়া বঙ্গবন্ধুর বুকসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির চিহ্ন দেখে। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির উপরের অংশ ছিল না। দুই পায়ের গোড়ালির উপরে রগ কাটা ছিল।
এই অবস্থায় মেজর সাহেবগণ লাশ দাফন করার নির্দেশ দিলে তিনি বলেন, “মুসলমানের লাশ গোসল, জানাজা, কাফন ইত্যাদি ছাড়া দাফন করা ঠিক হইবে না।” ইহা শুনিয়া তাহারা কিছুটা নমনীয় হইয়া এসব কাজ করার জন্য ১০ মিনিট সময় দিলেন। রজব শেখ ও আব্দুল হাই শেখসহ তাহারা দোঁড়াইয়া রেডক্রস হাসপাতাল হইতে তিনটা সাদা শাড়ী, দুইটা সাবান আনিয়া মসজিদের ইমাম হালিমকে ডাকিয়া আনে।
তারপর নুরুল হক, ইমামউদ্দীন গাজী, আব্দুল মান্নাফ, ও আারো অনেকে ইমাম সাহেবের পরামর্শ মত গোছল করাইয়া কাফন পড়ায়। জানাজায় দাঁড়াইলে চতুর্দিক হইতে লোকজন আসার চেষ্টা করে। কিন্তু আর্মিদের নির্দেশে ঐসব লোকজনদের আসিতে দেওয়া হয় না। গোছল করার আগে তিনি সুরতহাল করানোর চেষ্টা নেন।কিন্তু আর্মির ঐ দুজন অফিসার বাঁধা দিবার কারণে সুরতহাল করিতে পারে নাই। তারপর তাহারা ২০/২৫ জন লোক জানাজা পড়িয়া বঙ্গবন্ধুকে দাফন করে। তাহার পরনে একটি সাদা পাঞ্জাবী, একটি চেক লুঙ্গী ছিল। কফিনে চশমা, একটি পাইপ, এক জোড়া স্যান্ডেল ছিল। ঐ দুইজন আর্মি অফিসার একটি চিঠি দেখাইলেন, যাহার নিচে খন্দকার মোস্তাক আহমেদ প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ লেখা ছিল। তারপর আর্মিদের দেওয়া একটি প্যাডে বঙ্গবন্ধুর লাশ বুঝিয়া পাইয়া দাফন করার সার্টিফিকেট দেয়। সার্টিফিকেট তিনি এবং ল’ইয়ার ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষর করেন।
তথ্যসুত্র: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায়, গ্রন্থনা ও সম্পাদনা- রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী পৃষ্ঠা নং-৫১ (চলবে)
আরও পড়ুন :
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-৩১
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-৩০
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২৯
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২৮
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২৭
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২৬
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২৫
সম্পাদনায়: এইচ এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনা: ইয়াসীন হীরা