28 C
আবহাওয়া
৭:০২ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সুখবর নেই পাহাড়ের পর্যটনে, কমছে দর্শনার্থী

সুখবর নেই পাহাড়ের পর্যটনে, কমছে দর্শনার্থী

সুখবর নেই পাহাড়ের পর্যটনে

কাইমুল ইসলাম ছোটন, রাঙামাটি: রাঙামাটির রঙে চোখ জুড়ালো, সাম্পান মাঝির গানে মন ভরালো’ গানের মতো রূপের রানী রাঙামাটির মায়ায় পড়ে যান দেশ বিদেশের পর্যটক। সবুজ পাহাড়ের উপর সাদা মেঘের ভেলা ও স্থির জল রাশির কাপ্তাই হৃদ নজর কাড়ে পাহাড় প্রেমীদের। সুযোগ পেলে যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে নিরিবিলি প্রকৃতিকে উপভোগ করতে একবার সাদা জলের ঝর্ণায় গা ভিজাতে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। করোনায় পাহাড়ে পর্যটক আসা বন্ধ থাকলেও দুঃসময় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পর্যটন খাত। তবে ঈদের পর ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক বাড়লেও তা আগের তুলনায় কম বলে জানান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

সাজেকে প্রাণের ছোঁয়া
সাজেকে প্রাণের ছোঁয়া

জানা গেছে, প্রতিটি দেশে রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণ রয়েছে। বছর দশেক আগে দেশের বাইরে থেকে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসতেন। রাঙামাটিতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের ৮-১০ হাজারের অধিক পর্যটকের পা পড়ত। কিন্তু এখন বাহিরের (বিদেশি) পর্যটন নেই বললে চলে। বিদেশিদের আকৃষ্ট করার মতো বিনোদনের ব্যবস্থা না হওয়ায় তাদের চাহিদা কমছে বলে জানা যায়। তবে পর্যটন মহাপরিকল্পানায় রাঙামাটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন জায়গা হিসেবে প্রথম পর্যায়ে অন্তভূর্ক্ত থাকবে বলে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড জানিয়েছে।

আরও জানা গেছে, পাহাড়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পর্যটন মেলার আয়োজন করা এবং রাতের বিনোদনের (প্রতিদিন সংগীত অনুষ্ঠান, নৃত্য, কবিতা, এবং স্থানীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রদর্শনী’র) ব্যবস্থা করলে পর্যটন খাত আরও এগিয়ে যাবে।

পর্যটক কমেছে পর্বত্য এলাকায়
পর্যটক কমেছে পর্বত্য এলাকায়

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, রাঙামাটি শহরে ৫৫টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। বছর পাঁচ আগেও পর্যটনে ভরপুর ছিল রাঙামাটি। সব হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে যেত। কিন্তু পর্যটক কমার কারণে হোটেল-মোটেল ফাঁকা রয়ে যায়। বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে বাইরের পর্যটকের চেয়ে স্থানীয় দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেশি। তবে সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদী তারা। অন্যদিকে সাজেকে আগের চেয়ে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে রাঙামাটি আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, যেভাবে আধুনিক হোটেল হচ্ছে তার তুলনায় বর্তমানে পর্যটক অনেক কম।বান্দরবান-খাগড়াছড়িতে পর্যটকের আকৃষ্ট করার জন্য নতুন নতুন পর্যটন স্পষ্ট হলেও রাঙামাটিতে হচ্ছে না। রাঙামাটির পর্যটন খাত নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা না করার কারণে পর্যটন কমছে।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় জায়গা সাজেক
পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় জায়গা সাজেক

স্থানীয় নুরুল আলম ও জাহাঙ্গীর বলেন, বেসরকারিভাবে বিনিয়োগ করে কৃত্রিমভাবে আরও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা গেলে এখানকার পর্যটক বাড়বে। স্থানীয়দের পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্ট করতে হবে এবং ট্যুর গাইড এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাহলে এই খাতটি এগিয়ে যাবে।

কুমিল্লা থেকে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান, রাঙামাটিতে একবার আসলে বারবার আসতে ইচ্ছা করে। কিন্তু হোটেল-মোটেলে অনেকে সুযোগ বুঝে ভাড়তি দাম চেয়ে বসেন। সাথে খাবারের দামও বেশি। বোট নিয়ে ঘুরতে গেলে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন। তাছাড়া পর্যটকদের রাতে বিনোদনের জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। পর্যটকের মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা নজর দিলে পর্যটকরা বারবার ঘুরতে আসবেন।

পর্যটন টুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সদস্য আলাউদ্দীন টুটুল বলেন, এখন পর্যটকের মৌসুম না হওয়ায় পর্যটক কম। তাছাড়া বিভিন্ন একাডেমিক পরীক্ষার কারণে অনেকে ব্যস্ত আছেন। পরীক্ষা শেষ হলে পর্যটন খাতে সুদিন আসবে বলে তিনি মনে করেন।

রাঙামাটিতে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় নানা স্থান
রাঙামাটিতে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় নানা স্থান

রাইন্ন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক ললিত সি চাকমা বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে যার কারণে পর্যটন খাতে এটার প্রভাব পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি ভাবে পর্যটকের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।

বিদেশি পর্যটকের বিষয়ে তিনি বলেন, ভ্রমণের চাহিদায় অন্যান্য জায়গার চেয়ে পার্বত্য অঞ্চল এগিয়ে। অনেক জায়গায় বর্ষাকালে যেতে পারে না, আবহাওয়ার বিরূপ পরিবেশ থাকে। আবার অনেক জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর পর্যটকের আকর্ষণ থাকে না। কিন্তু পাহাড়ে সারাবছর আকর্ষণ থাকে। শীতকালে যেমন, বর্ষাকালেও তেমন। তাদের আসাটা সহজ করতে হবে। প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ট্যুর গাইড বাড়াতে হবে। তাহলে অন্যান্য এলাকা মতো এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।

রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ
রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন এর ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, পর্যটন একটি বাণিজ্যিক বিষয় হওয়ায় এর সাথে অনেক বিষয় জড়িত। সরকার বর্তমানে ভ্রমণ ব্যয় সীমিত করছে এবং বিভিন্ন একাডেমির পরীক্ষা চলার কারণে এর প্রভাব রাঙামাটিতে ও পড়েছে। তাই ছুটির দিনে তেমন পর্যটন হচ্ছে না।

পাহাড়ের ঝর্ণায় মন ভিজে যায়
পাহাড়ের ঝর্ণায় মন ভিজে যায়

এ বিষয়ে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের জানান, পর্যটন মহাপরিকল্পনায় রাঙামাটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে থাকবে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে উন্নত দেশের মতো পাহাড়ের চূড়ায় সরকারের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা বা ক্যাবল কার তৈরির পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে, মাস্টার প্ল্যান্ট পরিপূর্ণ তা বলা যাবে তিনি জানান।

বিএনএনিউজ/ এআর

Loading


শিরোনাম বিএনএ