আজ আমাকে রাখা হয়েছে সেল এলাকায় এখানে ভয়ানক প্রকৃতির লোক, একরারী আসামি, জেল আইন ভঙ্গ করার জন্য সাজাপ্রাপ্ত আসামি, আর পাগলা গারদ । এই এরিয়ার সবগুলোই সেল । মোট ৯৩টা সেল আছে আমার ঘরটা বাদে । এটা সেল না, সেলের থেকে একটু বড়। তবে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে উঁচু দেয়াল । শুধু সুবিধা হলো ঘরটার সামনে কিছু জায়গা আছে কিছু গাছ-গাছালি আছে বলে ফুলের ও ফলের বাগান করতে পারি । এদের কাছে থাকতে আমার আপত্তি নাই, কারণ বোধ হয় নিজেও আমি ‘ভয়ানক’ প্রকৃতির লোক মানে ভয়ডর একটু কম ।
মানিক ভাই ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের রাখা হয়েছে আমার থেকে অনেক দূরে । দেখা হওয়ার উপায় নেই । ১০ সেলে মানিক ভাই ও সহকর্মীরা কি করে আছে ভাবতে আমার কষ্টই হয় । নিচু সেল, জানলা নাই, একটা দরজা তাও আবার সামনে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা উপরের থেকে নাকি হুকুম আসে কাকে কোথায় রাখতে হবে। জেল কর্তৃপক্ষের হাতে কিছুই নাই । আমি প্রতিবাদ করলাম । আমার কাছে না দেয় তাতে আপত্তি নাই, কিন্তু এমন জায়গা দেওয়া হউক যেখানে তাহারা মানুষের মতো বাস করতে পারেন জেল কর্তৃপক্ষকে বলে বলে হয়রান হয়ে গেছি । তবে আমার কাছে খবর আছে, এক ভদ্রলোক বলে দেন কোথায় কাকে রাখতে হবে ।
মানিক ভাইয়ের লেখা পড়ব না এটা আমার একটা দুঃখ দিন যে কিভাবে কেটে গেল বলতেও পারি না। খবরের কাগজে মানিক ভাইয়ের গ্রেপ্তারের কোনো খবর নাই বোধ হয় খুব ভোরে গ্রেপ্তার করেছে।
সমস্ত পূর্ব বাংলায় এবারও বন্যা হবে । সিলেট তো শেষই হয়ে গিয়াছে বলে মনে হয়। ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বগুড়া, রংপুর, পাবনায়ও বন্যা হবে। ঢাকাও বাদ যেতে পারে না পূর্ব বাংলার লোকের দশা কি হবে তাই ভাবছি । এর উপর আবার করের বোঝা সরকার চাপাইয়া চলছে ।
১৭ই জুন ১৯৬৬ ॥ শুক্রবার
ভীষণ বৃষ্টি বাইরে যাওয়ার উপায় নাই বারান্দায় ঘুরলাম, বারান্দায় কয়েকজন কয়েদি আশ্রয় নিয়েছে । একজন খবর দিল রফিক সাহেব নামে আমাদের দলের একজন নেতা এসেছেন তাকেও দশ সেলে রাখা হয়েছে চলেছে গ্রেপ্তার সমানে মনে হয় মোনায়েম খান সাহেব ৭ তারিখের পরে আরও ক্ষেপে গেছেন । বোধ হয় ভুলে গেছেন, যে লোক বেশি রাগান্বিত ও অধৈর্য হয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত তাকেই হারতে হয় মাথা ঠান্ডা রেখে যে সংগ্রাম চালাইয়া যায় শেষ পর্যন্ত তারই জয় হয় ।
সূত্র : কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা -৯৭-৯৮, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭
আরও পড়ুন :
কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬১
কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬০
গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী