28 C
আবহাওয়া
৭:০৫ পূর্বাহ্ণ - জুন ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৩ (টাঙ্গাইল-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৩ (টাঙ্গাইল-৪)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে টাঙ্গাইল-৪ আসনের হালচাল।

YouTube player

টাঙ্গাইল-৪ আসন

টাঙ্গাইল-৪ সংসদীয় আসনটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনটি জাতীয় সংসদের ১৩৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাসদের শাহজাহান সিরাজ বিজয়ী

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭ হাজার ৭ শত ৩০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩ শত ৫৫ জন। নির্বাচনে জাসদের শাহজাহান সিরাজ বিজয়ী হন। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৪ শত ২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৯ শত ৬৭ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: শাহজাহান সিরাজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে জাসদ থেকে বিএনপিতে যোগদান করা শাহজাহান সিরাজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯১ হাজার ৬ শত ৩৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫ শত ৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ৫শত ৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শাহজাহান সিরাজ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৭ শত ২০ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শাহজাহান সিরাজ বিজয়ী হয়

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৫ শত ১৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪ শত ৫২ জন। নির্বাচনে বিএনপির শাহজাহান সিরাজ বিজয়ী হয়। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৯ শত ১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৭ শত ৭৫ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫২ হাজার ১ শত ৫৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৭ শত ৯৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬শত ৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনএফ এর লুৎফর রহমান খান আজাদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৯ শত ১২ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

কিন্তু ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আমেরিকার পালকি কমিউনিটি সেন্টারে টাঙ্গাইল সমিতির সংবর্ধনা সভায় হজ ও তাবলিগ সম্পর্কে কটূক্তি করে রোষানলে পড়েন। পরবর্তীতে দল থেকে বহিষ্কার হন। ছাড়তে হয় মন্ত্রিত্ব। আইনী জটিলতায় শূন্য আসনের উপ-নির্বাচন হতে সময় লেগে যায় ১৪ মাস। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাসান ইমাম খান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১২ হাজার ১ শত ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯শত ৭৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের হাসান ইমাম খান, ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শরিক কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের লিয়াকত আলী, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সৈয়দ মুশতাক হোসেন, বাইসাইকেল প্রতীকে জাতীয় পার্টি (মন্জু)র সাদেক সিদ্দিকী, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মোন্তাজ আলী, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মির্জা আবু সাইদ ও ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার হওয়া আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাসান ইমাম খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২৪ হাজার ১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির লিয়াকত আলী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৩ শত ৮৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম সংসদে জাসদ, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর টাঙ্গাইল-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-৪ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৪.২০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.২২%, বিএনপি ৪.৯৮%, জাতীয় পাটি ১৫.১০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪১.৭% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৬২%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৮.৯২%, বিএনপি ৪১.২৪%, জাতীয় পাটি ৮.২৯%, জামায়াতে ইসলামী ১.৫৫% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.১২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.৭৫%, ৪দলীয় জোট ৪৭.৪৬%, জাতীয় পার্টি ০.৪৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.৩২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬০.৭৯%, ৪দলীয় জোট ৩৮.১১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.১% ভোট পায়।

টাঙ্গাইল ৪ (কালিহাতী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের হাসান ইমাম খান প্রকাশ সোহেল হাজারী। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকে সোহেল হাজারী কালিহাতিতে বেশ জনপ্রিয়। তিনি আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন। আরও মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, তার ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য আবু নাসের, কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু, টাঙ্গাইল জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক সাবিনা ইয়াসমিন ইব্রাহীম।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও এবার তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার সম্ভবনা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে তিনিও মনোনয়ন চাইতে পারেন।

বিএনপি থেকে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, বাদলুর রহমান বাদল ও ঢাকাস্থ কালিহাতী সমিতির সভাপতি শহিদুল হক চৌধুরী মনোনয়ন চাইতে পারেন।

এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে দলের জেলা সদস্য জাহিদুল হক জাহিদ দলীয় প্রার্থী হতে পারেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, টাঙ্গাইল- ৪ (কালিহাতি) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের শাহজাহান সিরাজকে হারিয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। এরপর গত দশটি সংসদ নির্বাচনের ছয়টিতে বিজয়ী হন তিনি। একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী। ২০০১ সালের নির্বাচন ছাড়া গত ২৬ বছরে এ আসনটি ছিল লতিফ সিদ্দিকীর দখলে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর, লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হজ ও তবলীগ নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করার পর সংসদ সদস্য পদ ও মন্ত্রিত্ব হারানোর পর থেকে রাজনীতিতে একরকম আড়ালেই চলে গেছেন আওয়ামী লীগের একসময়ের প্রভাবশালী নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি দলে ফিরে আসলে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যাবে। বিএনপিতে এই আসনে জনপ্রিয় নেতার সংকট রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে দলীয় কোন্দল।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৩৩ তম সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-৪ আসনটিতে আওয়ামী লীগের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বিএনএ/ শিরীন, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ