।।ইয়াসীন হীরা।।
উগান্ডার বাসিন্দা আমিন হুদার হাত ধরে ২০০৪ সালে ‘ইয়াবা যুগে’ প্রবেশ করে বাংলাদেশ। জার্মানী থেকে অ্যামফিটামিন নামক রাসায়নিক এনে উগান্ডার নাগরিক আমিন হুদা মিয়ানমারের আদলে বাংলাদেশে ইয়াবা কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। বাংলাদেশের বিনোদন জগতে এবং অভিজাত পরিবারে ইয়াবা ব্যাপক আগ্রাসনে আমিন হুদা গং অনেকাংশে দায়ী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের মানুষ ‘ইয়াবা’শব্দটির সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয় ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর। এদিন রাজধানীর গুলশান ১২৩ নম্বর সড়কের ৪১ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় র্যা ব। ওই বাড়িতেই পাওয়া যায় একটি ইয়াবা কারখানা! জব্দ করা হয় ৫ কেজি ইয়াবা, ইয়াবা তৈরীর সরঞ্জাম, রাসায়নিক যন্ত্রপাতি, ভিওআইপি সরঞ্জাম ও বিভিন্ন প্রকার বিদেশী মদ। গ্রেপ্তার করা হয় এম বি মাল্টিকেয়ার ও টেকনোলজি লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আমিন হুদা ও তার ম্যানেজার আহসানুল হক। তখন থেকে কারাগারে ছিলেন তারা। এর মধ্যে আমিন হুদা বিভিন্ন দফায় প্রায় তিন বছর হাসপাতালে ছিলেন ।
২০১২ সালের ১৫ জুলাই দুই মামলায় বিভিন্ন ধারায় আমিন ও তার সহযোগীকে মোট ৭৯ বছর করে কারাদণ্ড ও জরিমানার আদেশ দেয় আদালত। হাইকোর্টে জামিন আবেদন করে আমিন হুদা ২০১৩ সালের ৫ মে মুক্ত হন। এরপর বাসায় যান। রাষ্ট্রপক্ষ এ জামিন বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। ২০১৩ সালের ৫ই মে জামিন বাতিল করে আপিল বিভাগ। তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশও দেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে তাকে গুলশান পুলিশ ফের গ্রেপ্তার করে। তখন থেকেই কারাগারে ছিলেন আমিন হুদা।
২০২০ সালের ৬ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজাপ্রাপ্ত আমিন হুদা মারা যান।
ইয়াবা সুন্দরী নিকিতা
জান্নাতুল ফেরদৌস নিকিতা। আমিন হুদার বান্ধবী। এক সময় এ নামটি বেশ আলোচনার ঝড় তুলেছিল। ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যা ব) একটি টিম জান্নাতুল ফেরদৌস নিকিতা এবং তার সহযোগী হোটেল পূর্বাণীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান জয়নাল, নিকিতার বাবা আবদুন নূর, মা সালেহা বেগম, ভাই মইনুদ্দীনকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ উদ্ধার করে।
বেশ কিছুদিন কারাবাসের পর নিকিতা জামিনে মুক্ত হয়। পরে তার বোন পুস্পিতাসহ ফের ইয়াবা ব্যবসায় নামেন। আমিন হুদা জেলে থাকাকালে তাদের সিণ্ডিকেট দেখভাল নিকিতাই করতেন। আমিন হুদা নিকিতার মাধ্যমে সুন্দরী রমণীদের দিয়ে রাজধানী কেন্দ্রিক ইয়াবা বিক্রির একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন।
বিএনপির সাবেক এমপি সোহরাব ও নিকিতা
নিকিতার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানায়। এসএসসি পাশ করতে পারেননি। কিন্তু নজরকাড়া সৌন্দর্য ছিল তার শরীরে। বিএনপি’র দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সোহরাব উদ্দিন ১৯৯৬ সালে ও ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজধানীর বনানীতে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট (ফ্ল্যাট) নিকিতাকে উপহার দিয়েছিলেন সোহরাব উদ্দিন। কিন্তু ২০০৬ সালের জুলাই মাসে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়।
প্রভাবশালী ধণাঢ্য এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে গোপন সম্পর্ক ছিল নিকিতার। ২০০৭ সালের মার্চে মাহবুবুর রহমান জয়নাল (হোটেল পূর্বাণীর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক) নামে বিত্তশালীর সঙ্গে নিকিতার পরিচয় হয়। এর আগে নিকিতা দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তুলে। পরে তাকে প্রত্যাখান করেন। তারপর ওই ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
নিকিতা গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে কসমেটিক সার্জারী করান নিকিতা। অপারেশনের সম্পূর্ণ ব্যায় বহন করেন ব্যবসায়ী জয়নাল। এছাড়া, অপারেশনের পরে তার সৌন্দর্য স্বাভাবিক রাখতে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা খরচ করতেন। নিকিতা ও জয়নাল বিনোদনের জন্য ১১ দিনের সফরে জাপানেও গিয়েছিল। সেখানে দু’জনে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করেন। নিকিতা এখন বেশিরভাগ সময় বিদেশেই থাকেন।
(চলবে)
পবিত্র কোরআন, হেলিকপ্টার ও নারীর যৌনাঙ্গে ইয়াবা পাচার!-পর্ব ১১
টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ি কারা? পর্ব-১০
আত্মসমর্পণকারিরা ফের ইয়াবা ব্যবসায়! পর্ব-৯
বদির ৫ ভাইসহ ২৫ স্বজন ইয়াবা ব্যবসায়ি! পর্ব-৮
রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও সাংবাদিকের সঙ্গে ইয়াবা ডন সাইফুলের সখ্য! পর্ব- ৬
সিআইপি সাইফুল ও বাংলাদেশে ইয়াবার আগমন! পর্ব-৫
টেকনাফের ৮০ শতাংশ মানুষ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত! পর্ব-৪
টেকনাফের অর্ধশত রুটে আসে ইয়াবা!- পর্ব- ৩
মডেল-নায়িকা-শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা কেন সেবন করে ইয়াবা? পর্ব-২
‘ইয়াবা’ কেন জনপ্রিয় মাদক? পর্ব-১
বিএনএনিউজ২৪