28 C
আবহাওয়া
৫:১২ পূর্বাহ্ণ - জুন ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩১ (টাঙ্গাইল-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩১ (টাঙ্গাইল-২)


বিএনএ, টাঙ্গাইল :বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে টাঙ্গাইল-২ আসনের হালচাল।

YouTube player

টাঙ্গাইল-২ আসন 

টাঙ্গাইল-২ সংসদীয় আসনটি গোপালপুর এবং ভুঁইয়াপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদের ১৩১ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টু বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৫ হাজার ৫ শত ২৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯শত ১২ জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ৬ শত ৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের হাতেম আলী তালুকদার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৫ শত ৮২ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের খন্দকার আসাদুজ্জামান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২১ হাজার ২৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খন্দকার আসাদুজ্জামান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৪ শত ৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টু বিজয়ী হয়

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ২১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৩ শত ২৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টু বিজয়ী হয়। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫ হাজার ২শত ৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খন্দকার আসাদুজ্জামান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার ৯ শত ৯৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের খন্দকার আসাদুজ্জামান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ১ শত ৭০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খন্দকার আসাদুজ্জামান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬শত ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৩২ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের খন্দকার আসাদুজ্জামান বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৯ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫০ হাজার ২ শত ৭৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খন্দকার আসাদুজ্জামান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪০ হাজার ৭ শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টি (মন্জু)র আজিজুর রহমান তরফদার। বাইসাইকেল প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৮ হাজার ১৭ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের তানভীর হাসান প্রকাশ ছোট মনির বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ২ শত ২৬ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের তানভীর হাসান প্রকাশ ছোট মনির, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কাস্তে প্রতীকে সিপিবি’র জাহিদ হোসেন খান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির এনামুল হক মঞ্জু, কুলা প্রতীকে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মুনিরুল ইসলাম ও হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এস. এম শামছুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তানভীর হাসান প্রকাশ ছোট মনির বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯ শত ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৯ হাজার ৮ শত ৮৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর টাঙ্গাইল-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.১০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৭৮%, বিএনপি ৫১.৮১%, জাতীয় পাটি ৮.২৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.১৭% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.৬০%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.১৩%, বিএনপি ৪০.৯৪%, জাতীয় পাটি ৯.০৯%, জামায়াতে ইসলামী ৩.৪৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৭% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.৯০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.৬১%, ৪দলীয় জোট ৪৮.৬৬%,জাতীয় পার্টি ১.৯৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৭৪% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৯৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৭.৪৬%, ৪দলীয় জোট ৪১.১০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৪৪% ভোট পায়।

টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর ও ভুঁইয়াপুর) আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের তানভীর হাসান প্রকাশ ছোট মনির। তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন চাইবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের অন্তত ৪ জন নেতা তাঁর হাত থেকে নৌকা কেড়ে নিতে তৎপর রয়েছেন।
এরা হচ্ছেন ভুঁইয়াপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ, গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, সাবেক এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে সিআইপি খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল।
অন্যদিকে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বিএনপির একক প্রার্থী। একাদশ জাতীয় সংসদেও বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই আসনের ভোটারদের মধ্যে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। তাঁরা বারবার পছন্দের প্রার্থী ও দল বদল করে থাকেন। এই আসনে স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ পাঁচবার, বিএনপি চারবার, জাসদ (সিরাজ) ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী একবার করে নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় গত সাড়ে ৪ বছরে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হয়েছে। যার ফলে গোপালপুর ও ভুঁইয়াপুরের ১১টি ইউনিয়ন, ২টি উপজেলা, ২টি পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এলাকার উন্নয়নই হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভরসা। কিন্তু আওয়ামী লীগের অন্তদলীয় কোন্দল চরমে। দলের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করা, পছন্দের ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কারণে দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী বর্তমান সংসদ সদস্য ছোট মনিরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

গোপালপুর ও ভুঁইয়াপুরে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় বিএনপি। নেতা-কর্মীরা দলীয় কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এরপরও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু একক প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি অনেকটা ফুরফুরে রয়েছে। টুকু বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। এলাকায় তাঁর পরিবারের নিজস্ব বলয় রয়েছে। গোপালপুর ও ভুঁইয়াপুরে বিএনপি নিষ্ক্রিয় থাকলেও তাদের ভোটব্যাংক রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৩১তম সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শিরিন, রেহানা,ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ