31 C
আবহাওয়া
১:০৮ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল :সংসদীয় আসন-৭০ (পাবনা-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল :সংসদীয় আসন-৭০ (পাবনা-৩)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে পাবনা-৩ আসনের হালচাল।

পাবনা-৩ আসন

পাবনা-৩ সংসদীয় আসনটি চাটমোহর, ভাংগুড়া এবং ফরিদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৭০তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান সাইফুল আযম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ১ শত ১৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯ শত ৪৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান সাইফুল আযম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯১ হাজার ৫ শত ৪০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ওয়াজি উদ্দিন খান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ৫ শত ২৩ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ক্যাপ্টেন সাইফুল আযমকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে বিএনপির বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আযমকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ওয়াজি উদ্দিন খান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২২ হাজার ১ শত ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮ শত ৭৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওয়াজি উদ্দিন খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৫ হাজার ৬ শত ৪৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কে এম আনোয়ারুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭১ হাজার ৪ শত ৩৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কে এম আনোয়ারুল ইসলাম বিজয়ী 

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩ শত ১৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৮ শত ১৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির কে এম আনোয়ারুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩১ হাজার ২ শত ৯৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৭ শত ৯৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামীলীগের মকবুল হোসেন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ২ শত ২২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮ শত ৮৯ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে আসা মকবুল হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৬ শত ৬৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সাইফুল আযম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৫ হাজার ৩ শত ৩০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৮ শত ৪২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৭ শত ৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪ শত ৯৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। আনারস প্রতীকে তিনি পান ১২ হাজার ৬ শত ৭৩ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ২ হাজার ৮ শত ৩৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬ শত ৩৬ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল মোত্তালিব, কবুতর প্রতীকে গণতন্ত্রী পার্টির খাইরুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৮৪ হাজার ৭ শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কে এম আনোয়ারুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫৮ হাজার ৬ শত ২৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পাবনা- ৩ (চাটমোহর, ভাংগুড়া এবং ফরিদপুর উপজেলা) সংসদীয় আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর পাবনা-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.৫২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৪২%, বিএনপি ৫৪.৫১%, জাতীয় পার্টি ১.৭৫ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৩২% ভোট পান।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.৬৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.০৮%, বিএনপি ৩৮.৪৩%, জামায়াতে ইসলামী ৮.০৪%, জাতীয় পাটি ৫.৭৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৬৭% ভোট পান।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.১৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.৩৮%, ৪দলীয় জোট ৫১.৯৩%, জাতীয় পার্টি ০.৬৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.০১% ভোট পান।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.৪২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬০.৮৫%, ৪ দলীয় জোট ৩৮.৮৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৩০% ভোট পান।

পাবনা- ৩ আসনের (চাটমোহর, ভাংগুড়া এবং ফরিদপুর উপজেলা) আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ মাস্টার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকন।
চাটমোহর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সাখো, পাবনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট শাহ আলম, ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও আমেরিকার ভার্জিনিয়া রাজ্যের আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক ভিপি আবুল কালাম আজাদ, ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সরকার, ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আশরাফুল কবীর।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি ও চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান সাইফুল আযম।

এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি হাসানুল ইসলাম রাজা। তার ভাই, চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসাদুল ইসলাম হীরা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, পাবনা বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার, পাবনা জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বকুল।

তথ্য- উপাত্ত ও মাঠ পর্যায়ের জরিপে দেখা যায়, আসনটিতে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরের উন্নয়ন কর্মকান্ন্ডের মাধ্যমে তাঁদের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। এ দুই রাজনৈতিক দল ভোটের লড়াইয়ে তেমন ফ্যাক্টর নয়।
আওয়ামী লীগ চাইছে আসনটি ধরে রাখতে। আর বিএনপি চায় তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। কিন্তু এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই রয়েছে কোন্দল ও গ্রুপিং। নির্বাচনকে সামনে নিয়ে বাড়ছে কোন্দলের ব্যাপকতা। যেদল কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে সে দলের জয়ের পাল্লা ভারি হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৭০তম পাবনা-৩ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তুমুল লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ