32 C
আবহাওয়া
৯:০৫ অপরাহ্ণ - মে ৩০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৩১ (সিলেট-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৩১ (সিলেট-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল সংসদীয় আসন-২৩১ (সিলেট-৩)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সিলেট-৩ আসনের হালচাল।

সিলেট-৩ আসন

সিলেট-৩ সংসদীয় আসনটি দক্ষিন সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৩১তম আসন।

YouTube player

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির আব্দুল মুকিত খান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩ শত ৪৪ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৭ হাজার ৭৬ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আব্দুল মুকিত খান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৪ শত ১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আতিকুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৯ হাজার ৫৭ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির আব্দুল মুকিত খান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৮ শত ৪৭ জন। ভোট প্রদান করেন ৯০ হাজার ৮ শত ৭৯ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আব্দুল মুকিত খান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৬ হাজার ৬ শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৬ হাজার ১ শত ৬৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬২ হাজার ২ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৫ শত ৯৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ৯ শত ৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৩ শত ৪২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬ শত ৪৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩ শত ৫৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৯ শত ৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৭০ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৩ হাজার ৬ শত ৫৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৩ শত ৫২ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির উসমান আলী, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এম এ মতিন বাদশা, রিক্সা প্রতীকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আতিকুর রহমান এবং দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিসের দিলওযার হোসাইন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫ শত ৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ২ শত ৮৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

একাদশ সংসদ উপ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব বিজয়ী হন

২০২১ সালের ১১ মার্চ সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯০ হাজার ৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৭ শত ৫২ ভোট।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে জাতীয় পার্টি, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে এবং উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সিলেট-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিলেট-৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫১.৭৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২১.৮৯%, বিএনপি ২০.০৬%, জাতীয় পার্টি ৩৮.৩৮%, জামায়াতে ইসলামী ৯.৫৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১০.১৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৯৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.৭৯%, বিএনপি ২৮.৫৬%, জাতীয় পার্টি ২৯.৩৩%, জামায়াতে ইসলামী ৭.৪৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৮৯% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৩.১১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৩৯%, ৪ দলীয় জোট ৪৭.২২%, জাতীয় পার্টি ১২.৯৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৪০% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৬৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৩.২৩%, ৪ দলীয় জোট ২৯.৯৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.৮০% ভোট পায়।

সিলেট-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। হাবিব ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)’র মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের এপিএস বিএনপির সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম এ সালাম, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রয়াত উপদেষ্টা এম এ হকের ছেলে ও সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম হক আদনান। এছাড়া মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি শফি আহমেদ চৌধুরী।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিলেট-৩ আসনটি কোন রাজনৈতিক দলের একক ঘাঁটি নয়।এই আসনে পাচঁবার আওয়ামী লীগ, তিনবার বিএনপি, দুইবার জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়। এই আসনের তিন উপজেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সরব উপস্থিতি দৃশ্যমান। ভোটেও দুই দল সমান সমান। আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় করতে কাজ করেছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তিনি ছিলেন বেশ জনপ্রিয় নেতা। এই আসনে আওয়ামী লীগে নেই কোনো কোন্দল। কিন্তু মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগীতা আছে। পুরো সিলেট-৩ আসনে এক সময় আধিপত্য ছিল জাতীয় পার্টির। সময়ের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির সেই অবস্থান আর নেই। সাংগঠনিক কার্যক্রমে ভাটার টান পড়েছে। প্রচার না থাকলেও জামায়াতে ইসলামীর ভোট ব্যাংক রয়েছে এই আসনে। যা বিএনপির বাক্সেই যাবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২৩১তম সংসদীয় আসন (সিলেট-৩) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্য হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৩০ (সিলেট-২)

বিএনএনিউজ/ শাম্মী, রেহানা, বাবর, ওয়াইএইচ/এইচ এ মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ