31 C
আবহাওয়া
২:৩৮ পূর্বাহ্ণ - মে ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৬ (ঢাকা-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৬ (ঢাকা-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৬ (ঢাকা-৩)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে  ঢাকা– ৩ আসনের হালচাল।

YouTube player

ঢাকা-৩  আসন 

ঢাকা– ৩ সংসদীয় আসনটি কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া, কোন্ডা ও শুভাট্যা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৭৬ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির  আমান উল্লাহ আমান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন  ২ লাখ ৮৯ হাজার ১ শত ১৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭ শত ৯৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির  আমান উল্লাহ আমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ২ শত ৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোস্তফা মোহসীন মন্টু । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ২ শত ২০ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আমান উল্লাহ আমান কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির আমান উল্লাহ আমান কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আমান উল্লাহ আমান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ১ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ  ৭ হাজার ১ শত ২৮ জন। নির্বাচনে  বিএনপির আমান উল্লাহ আমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের  মো: শাহজাহান । নৌকা প্রতীকে  তিনি পান ৫২ হাজার ৬ শত  ৬২ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আমান উল্লাহ আমান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪ শত ৬৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ৯ শত ৭১  জন। নির্বাচনে  বিএনপির আমান উল্লাহ আমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ  ৬৯ হাজার ৯ শত ৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের  নসরুল হামিদ । নৌকা প্রতীকে  তিনি পান ৮৯ হাজার ৩ শত  ৭৫ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের  নসরুল হামিদ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৬ শত ৪১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৪ হাজার ৪  শত ৯২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  নসরুল হামিদ বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৩ হাজার ৩ শত ২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায় । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৮  হাজার ৮ শত ১ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের  নসরুল হামিদ বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  নসরুল হামিদ বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে  বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন:  আওয়ামী লীগের  নসরুল হামিদ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৬ শত ১৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬ শত ৬৬ জন। নির্বাচনে  প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের   নসরুল হামিদ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি র  গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, উদীয়মান সূর্য প্রতীকে গনফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু, মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের মজিবুর হাওলাদার,  হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সুলতান আহাম্মদ খান ,সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান লিটন, এবং মটর কার প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলি রেজা   প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে  আওয়ামী লীগের  নসরুল হামিদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২১ হাজার ৩ শত ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায় । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১৬ হাজার ৬ শত ১২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।পর্যবেক্ষণে দেখা যায়,  পঞ্চম ,ষষ্ঠ, সপ্তম , অষ্টম সংসদে বিএনপি , ,নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ  বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম,২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঢাকা-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.৭৩ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.০০%, বিএনপি ৫৭.৩০%, জাতীয় পাটি ০.৮১%, জামায়াত ইসলামী ০.৯৯ % , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৯০%  ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.২৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫.৪২%, বিএনপি ৫৯.৯১% জাতীয় পাটি ১০.৬৭% , জামায়াত ইসলামী ০.৯০ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.১০%  ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.০৩ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৩.৭৩ %, ৪ দলীয় জোট ৬৪.১৫%, জাতীয় পার্টী  ১.৫৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৭ %  ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.২১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৯.৫৬ %, ৪দলীয় জোট ৩৬.৭৩ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৭১ %  ভোট পায়।

ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) সংসসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি একক প্রার্থী।

চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা জেলা দক্ষিণের সহসভাপতি সুলতান আহমেদ খান।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে জানা যায়,  ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম থেকে ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির দখলে।  ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে হারায় বর্তমান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত  নির্বাচনে ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে নসরুল হামিদ বিপুর জয়ের ধারা অব্যাহত থাকে।  বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার। আওয়ামী লীগ চায় ধরাবাহিকতা বজায় রাখতে। নসরুল হামিদ বিপু এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। এটিই তার ভরসা। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৭৬ তম সংসদীয় আসন (ঢাকা-৩ ) আসনটিতে  আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে  হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ