39 C
আবহাওয়া
৬:১৩ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ৩০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কে এই ফিলিস্তিনের সিংহ রান্টিসি?

কে এই ফিলিস্তিনের সিংহ রান্টিসি?

কে এই ফিলিস্তিনের সিংহ রান্টিসি?

বিএনএ, ঢাকা : রান্টিসি। পুরোনাম আবদেল আজিজ আলী আব্দুল মজিদ আল-রান্টিসি। তাকে বলা হয় ফিলিস্তিনের সিংহ। রান্টিসি ছিলেন শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের সাথে ফিলিস্তিনি সুন্নি-ইসলামী সংগঠন হামাসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
ফিলিস্তিনের সিংহ রান্টিসি ১৯৪৭ সালে ২৩ অক্টোবর জাফার কাছে ইবনাতে জন্মগ্রহণ করেন।

YouTube player

১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে তার পরিবার গাজা উপত্যকায় পালিয়ে যায়। ১৯৫৬ সালে, যখন তার বয়স নয় বছর, তখন তার চোখের সামনে ইসরায়েলি সৈন্যরা চাচা খান ইউনিসকে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ড তার মধ্যে বেশ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ইসরায়েলের প্রতি ঘৃনা ও প্রতিশোধের ইস্পিহা তৈরি হয়। গাজার পাঠ চুকিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য রান্টিসি চলে যান মিশরে। সেখানে আলেকজান্দ্রিয়া ইউনিভার্সিটিতে পেডিয়াট্রিক মেডিসিন এবং জেনেটিক্স বিষয়ে অধ্যয়ন করেন । মেধাবি রান্টিসি তার ক্লাসে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নকালীন তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের দর্শন ও আর্দশের অনুসারি হয়ে ওঠেন। ১৯৭৬ সালে তিনি গাজায় ফিরে আসেন। ১৯৭৮ সালে এবং প্যারাসিটোলজি এবং জেনেটিক্স বিষয়ে ওপর উচ্চ শিক্ষার জন্য Islamic University তে বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি হন।

সেখান থেকে পাশ করার পর রান্টিসি খান ইউনুস সরকারি হাসপাতালে প্রধান শিশুরোগ বিশেষজ্ঞও হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালে ইস্রায়েলকে কর দিতে অস্বীকার করার অপরাধে ইস্রায়েল পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার করে।

১৯৮৭ সালের ১০ ডিসেম্বর চার ফিলিস্তিনি শ্রমিক বহনকারী এক গাড়িতে ইসরায়েলের সৈন্যরা হামলায় চালায়। এতে গাড়িতে থাকা সবাই নিহত হয়। এই ঘটনার পরদিন রান্টিসি ও মুসলিম ব্রাদারহুডের কিছু সদস্য একত্রিত হয়ে গড়ে তোলেন হামাস। ওই বছর পুঙ্গ শায়খ শেখ আহমেদ ইয়াসিনের বাড়িতে এক বৈঠক শেষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘প্রথম ইন্তিফাদা’র বা বিপ্লবের ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ করে হামাস। এর অগ্রভাগের ছিল আবদেল আজিজ আলী আব্দুল মজিদ আল-রান্টিসি।

১৯৮৮ সালের ৪ মার্চ ইসরায়েল তাকে ইন্তিফাদাতে অংশগ্রহণের অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৯৯০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তিনি। ওই বছর ১৪ ডিসেম্বর তাকে ফের গ্রেফতার করে ইসরাইল বাহিনী।

রান্টিসি ১৯৯৩ সালে মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অসলো চুক্তি-১ এবং ১৯৯৫ সালে মিশরের তাবায় অসলো চুক্তি ২ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার মধ্যে অসলো চুক্তির বিরোধীতাকারিদে অন্যতম। তিনি শুধু এই চুক্তি অস্বীকার করে ক্ষান্ত হয়নি। বিশ্বের মানচিত্রে ইস্রায়েল রাষ্ট্রের অস্থিত্ব নেই বলে দাবি করেন। আবদেল আজিজ আলী আব্দুল মজিদ আল-রান্টিসি।

১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে রান্টিসির লেবাননে চলে যান। ১৯৯৩ সালে গাজায় ফিরে আসার পর আবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বে ফিরে আসেন। গাজা এবং বিদেশে হামাস পক্ষে যুদ্ধবিরতিসহ বিভিন্ন আলোচনায় মুখপাত্রের ভুমিকা পালন করেন আবদেল আজিজ আলী আব্দুল মজিদ আল-রান্টিসি।

২০০৩ সালের ৪ জুন হামাস গাজা উপত্যকার চেকপোস্টে হামলা করে। এই সময় বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়। এই হামলার জন্য রান্টিসিরকে দায়ি করে ইসরায়েল। তাকে হত্যার জন্য হন্য হয়ে খোঁজ করতে থাকে। ওই বছর ১০ জুন রান্টিসি একটি গাড়িতে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি হেলিকপ্টার থেকে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করে। এই হামলায় তিনি আহত হন এবং বেচেঁ যান। কিন্তু এসময় রান্টিসির একজন দেহরক্ষী, একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত এবং কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন।

২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল। হামাসের জন্য ছিল একটি শোকাবহ দিন। ইসরায়েলি বিমান বাহিনী তার গাড়িতে একটি এ.এইচ-৬৪ অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে হেলফায়ার মিসাইল নিক্ষেপ করে আল-রান্টিসিকে হত্যা করে। আকরাম নাসার নামে একজন দেহরক্ষী এবং রান্টিসির ২৭ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদও হামলায় নিহত হন এবং আহত হন চারজন পথচারী ।

হামাসের প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্মিক গুরু শায়খ আহমেদ ইয়াসিনকে ২০০৪ সালের ২৩ মার্চ ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার পথে ইসরায়েল বাহিনী হেলিকাপ্টার থেকে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করে হত্যা করে। এরপর রান্টিসিকে গাজা উপত্যকায় হামাসের রাজনৈতিক নেতা এবং মুখপাত্র মনোনীত হন। ২৭ মার্চ ২০০৪, রান্টিসি গাজায় ৫০০০ সমর্থকদের জড়ো করেছিলেন। রান্টিসির হামাস যোদ্ধাদের উদ্দ্যেশে বলেন আমি হামাসের হাত ধরে ফিলিস্তিনের ভূমি থেকে বিজয় দেখতে পাচ্ছি। ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা প্রতিবাদ জানিয়ে রান্টিসি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কড়া সমালোচনা করেন এবং তাকে ” মুসলিমদের শত্রু ” বলে ঘোষণা করে।

২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল। হামাসের জন্য ছিল একটি শোকবহ দিন। ইসরায়েলি বিমান বাহিনী তার গাড়িতে একটি এ.এইচ-৬৪ অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে হেলফায়ার মিসাইল নিক্ষেপ করে আল-রান্টিসিকে হত্যা করে। আকরাম নাসার নামে একজন দেহরক্ষী এবং রান্টিসির ২৭ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদও হামলায় নিহত হন এবং আহত হন চারজন পথচারী ।

শায়খ আহমেদ ইয়াসীনের মতো তাকেও অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে হেলফায়ার মিসাইল নিক্ষেপ রান্টিসিকে হত্যা করবে ইসরায়েল এমনটা তিনি জানতেন! সেকারণে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন মৃত্যু একদিন হবে। তবে সেটা ক্যান্সার বা অন্য রোগে না হয়ে শত্রুর ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে হওয়া উত্তম। মৃত্যুর আগে রান্টিসি সেই সত্যটা সাহসের সঙ্গে উচ্চারণ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে রন্টিসি জামিলা আবদুল্লাহ তাহা আল-শান্তিকে বিয়ে করেন। তাদের ছয় সন্তান রয়েছে।
হাসাস সদস্যরা ডা. আবদেল আজিজ আলী আব্দুল মজিদ আল-রান্টিসির আর্দশ, লক্ষ্য ও উদ্দশ্যেকে ধারণ করে ফিলিস্তিনির মুক্তিকামী মানুষকে ইহুদী মুক্ত নিজস্ব ভূমি ও স্বাধীনতা ফিরিয়ে রাতদিন সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

 

বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ