22 C
আবহাওয়া
১:৫৬ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৯৯ (খুলনা-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৯৯ (খুলনা-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে খুলনা-১ আসনের হালচাল।

খুলনা-১ আসন

খুলনা-১ সংসদীয় আসনটি বটিয়াঘাটা এবং দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনটি জাতীয় সংসদের ৯৯ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ হারুনুর রশীদ মিয়া বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৭ শত ৩৪ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৪ হাজার ৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ হারুনুর রশীদ মিয়া বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৮ শত ১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিবির অচিন্ত কুমার বিশ্বাস। কাস্তে প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৬ শত ৬৮ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির প্রফুল্ল কুমারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির প্রফুল্ল কুমারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭শত ১৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪ শত ২৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ২ শত ৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিবি থেকে বিএনপিতে যোগদানকারি অচিন্ত কুমার বিশ্বাস। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ৩ শত ৯৮ ভোট।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন পান পঞ্চম সংসদের সংসদ সদস্য শেখ হারুনুর রশীদ মিয়া। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন দলের আরেক নেতা পঞ্চানন বিশ্বাস। মূলত সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই নেতার লড়াইয়ে অবশেষে পঞ্চানন বিশ্বাস জয়ী হন।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫ শত ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫১ হাজার ২ শত ৫৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৫ শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আমীর এজাজ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৫ শত ২৩ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মন্ডল বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৯ শত ৩৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩ শত জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মন্ডল বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২০ হাজার ৯ শত ৬৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আমীর এজাজ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৪ শত ৮৭ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৪ শত ১৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯ হাজার ৫৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৯ শত ৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ননী গোপাল মন্ডল। চাকা প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৫ শত ২৭ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪ শত ২০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৩ হাজার ৫ শত ৫৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আমীর এজাজ খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায়, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির অশোক কুমার সরকার ও হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবু সাঈদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭২ হাজার ১ শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আমীর এজাজ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৩ শত ২২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, খুলনা-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। বিএনপি বিজয়ী হয় শুধুমাত্র ১১ দিনের ষষ্ঠ সংসদে।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর খুলনা-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৬.৩২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.৩৭%, বিএনপি ১৫.১১%, জাতীয় পার্টি ৭.৬২% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৯.৯০% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৭৬%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৩.৯৩%, বিএনপি ১০.৩২%, জাতীয় পাটি ৬.৯৭ % , জামায়াতে ইসলামী ২.০০ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৬.৭৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.২২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫১.৯৩%, ৪দলীয় জোট ৩১.৪২%, জাতীয় পাটি ৪.৩৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১২.৩১% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.০১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬১.৬৪ %, ৪ দলীয় জোট ৩৪.৯১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৩.৪৫% ভোট পায়।

খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) আসনে বেশির ভাগ সময় হিন্দু সম্প্রদায় থেকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একবারও দলকে নিরাশ করেননি তাঁরা। এবারও ব্যতিক্রম হবে বলে মনে করেন না অধিকাংশ নেতা ও কর্মী। বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস ও সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডলই মূলত মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন।

এ দুজনের বাইরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেছে নিলে মনোনয়ন পেতে পারেন, বাটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান। আলোচনায় আছেন সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ ও বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ মিয়া, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন।

বিএনপিতে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কুদরতে আমীর এজাজ খান। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বটিয়াঘাটা এবং দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি তেমন সুবিধা করতে পারেনি। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র একবার এ আসন হাতছাড়া হয়েছে আওয়ামী লীগের। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এ আসন থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত হলেও আসনটিতে দলের ত্রিমুখী বিরোধ রয়েছে। পঞ্চানন বিশ্বাস, ননী গোপাল মণ্ডল ও আশরাফুল আলম খানের মধ্যে মনোনয়ন বিরোধ চরমে। আওয়ামী লীগের তিন নেতার মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে বহুদিনের সাম্রাজ্য ভেঙেও যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও ভোটাররা তেমন শঙ্কা দেখছেন না।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে এবং আওয়ামী লীগে ঐক্য বজায় থাকলে জাতীয় সংসদের ৯৯তম খুলনা-১ সংসদীয় আসনটিতে আবারও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবার সম্ভাবনা বেশি।

বিএনএ/ শিরীন সুলতানা, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ