।।ইয়াসীন হীরা।।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, তার ৫ ভাইসহ অন্তত ২৫ জন স্বজন রয়েছে। এর মধ্য তার বড় বোন সামশু নাহারের দেবর আক্তার কামাল ২০১৮ সালের ২৪ মে রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়া নগরে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন।
তালিকায় থাকা বদির ৫ ভাই হলেন- মৌলভী মুজিবুর রহমান, আবদুস শুক্কুর, মো. সফিক, আবদুল আমিন ও মো. ফয়সাল। তালিকায় বদির ব্যক্তিগত সহকারী মং মং ছেং ওরফে মমচি নামও রয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ব্যক্তিগত সহকারী মং মং ছেং এর বাড়ি টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ায়। মং মং ছেং ঢাকায় একাধিকবার ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন। এছাড়া এমপি বদির ফুফাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল, ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপু আছে তালিকায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বদির ৫ ভাই মিয়ানমার থেকে বিশেষ পাহারায় ইয়াবার বড় বড় চালান টেকনাফে নিয়ে আসতেন। আর সেগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি ডিলারদের কাছে পৌঁছে দিতেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ব্যক্তিগত সহকারী মং মং সেন। বাংলাদেশে সর্বনাশা যে ইয়াবা আগ্রাসন চলেছে তার জন্য আব্দুর রহমান বদি পরিবারের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ওরফে জাফর চেয়ারম্যান এবং ছেলে মোস্তাককে সঙ্গে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজম্ব ইয়াবা সিন্ডিকেট। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকার শীর্ষে গড ফাদারের তালিকায় তাদের অবস্থান। এতে বলা হয়েছে, ‘পিতা-পুত্র একত্রে রাজনীতি ও ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে তৎপর। জাফর চেয়ারম্যান বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ৫-৬ বছর আগে তারা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।’
আওয়ামী লীগ নেতাও কম যাননা!
মাদক দ্রব্য অধিদপ্তেরর তালিকায় ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক নেতা হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতার নামও ইয়াবা গডফাদারদের আশ্রয়দাতা হিসেবে তালিকায় ওঠে এসেছে। এর মধ্য রয়েছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর ছেলে রাশেদ ও মাহবুব মোরশেদের নাম আছে তালিকায়।
মৌলভী আজিজ স্থানীয়ভাবে একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। দানশীলতার আড়ালে তিনি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত! তালিকার ৩২ নম্বরে তারও নাম রয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি বেশ প্রভাবশালী।
তালিকার ১৬ নম্বরে থাকা মাদক গডফাদার মীর কাশেম ওরফে কাশেম মেম্বারের পরিচয়- তিনি সরাসরি জাহাজে করে ইয়াবার চালান পাচার করেন। ১৭ নম্বরে থাকা সৈয়দ হোসেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেনের ভাই। তালিকার ২০ নম্বরে আছে আক্তার কামাল ও শহীদ কামাল দুই ভাইয়ের নাম। এরা স্থানীয় এমপি বদির আত্মীয়। এরা বদির বোনজামাই পুলিশের সাবেক ওসি আবদুর রহমানের খালতো ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এরা বদির বেয়াই হিসেবে পরিচিত।
টিটি জাফর এবং হুন্ডি ব্যবসা
মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের তালিকার ৭ নম্বরে রয়েছে জাফর প্রকাশ টিটি জাফরের নাম। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার তার প্রধান কাজ। সে কারণে তিনি টিটি জাফর নামে ব্যাপক পরিচিত। তার ইয়াবা নেটওয়ার্ক দেশজুড়ে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির তালিকায়ও টিটি জাফরের নাম রয়েছে। তবে সেখানে তার পরিচয় আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানি হিসেবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার থেকে ইয়াবা চোরাচালানে হুন্ডির যত টাকা লেনদেন হয়, তার ৪০ শতাংশই টি টি জাফর করে থাকে। সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভারত, মিয়ানমার কেন্দ্রিক হুন্ডি ব্যবসায়ীদের একটি চক্রের সদস্য। সীমান্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে টিটি জাফর বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে আলু রপ্তানি অন্য দিকে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি করে।
আগের পর্বসমূহ :
রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও সাংবাদিকের সঙ্গে ইয়াবা ডন সাইফুলের সখ্য! পর্ব- ৬
সিআইপি সাইফুল ও বাংলাদেশে ইয়াবার আগমন! পর্ব-৫
টেকনাফের ৮০ শতাংশ মানুষ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত! পর্ব-৪
টেকনাফের অর্ধশত রুটে আসে ইয়াবা!- পর্ব- ৩
মডেল-নায়িকা-শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা কেন সেবন করে ইয়াবা? পর্ব-২
‘ইয়াবা’ কেন জনপ্রিয় মাদক? পর্ব-১
বিএনএনিউজ২৪,জিএন