বিএনএ,বিশ্ব ডেস্ক: আগামিকাল বুধবার শপথ নিতে যাচ্ছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে ক্যাপিটল হিলের চারপাশে সামরিক গ্রিন জোন ঘোষণা করা হয়েছে।ট্রাম্পের অভিষেকের চেয়েও এবার নিয়োগ করা হয়েছে আড়াই গুণ বেশি নিরাপত্তা কর্মী।
ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মলে ১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ পতাকা আর ৫৬টি পিলারে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য ও টেরিটরিগুলোর অবস্থান নির্দেশক এই পিলারগুলো। এই আলোকসজ্জা জানান দিচ্ছে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক বার্তা।অবশ্য চিরায়ত প্রথা ভেঙে শপথ অনুষ্ঠানে থাকছেন না ট্রাম্প-দম্পতি।
শপথের আগে মার্টিন লুথার কিংয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি দিন গরিব-দুখীদের মাঝে খাবার বিতরণে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন বাইডেন দম্পতি।শপথের পর সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে তার স্ত্রীসহ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে তার স্বামীসহ হোয়াইট হাউজে নিয়ে যাবেন।
যদিও এবার করোনা ও নিরাপত্তা হুমকির কারণে অনেক অনুষ্ঠানই কাটছাট করা হয়েছে।এর আগে,ট্রাম্পের শপথে ৫ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আর ২০০৯ ওবামার সময়ে ছিলেন প্রায় ১৮ লাখ।চিরায়ত রীতি ভেঙে লাল কার্পেটে ২১ বার সামরিক তোপধ্বনি ছাড়াই বিদায় নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় বুধবার সকাল আটটার দিকে হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।মেরিল্যান্ডের অ্যান্ড্রু বেসে বিদায়ী সামরিক অভিবাদন নিয়ে ফ্লোরিডায় চলে যাবেন তিনি।
এদিকে,বাইডেনের শপথ ঘিরে কার্যত জনমানবহীন মৃত্যুপুরী রাজধানী ওয়াশিংন ডিসি। শপথ অনুষ্ঠানের সময় যতই এগিয়ে আসছে ঘুমোটভাব ততই বাড়ছে। রাজপথে সাধারণ মানুষের চলা ফেরাতেও অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে।সর্বত্রই গিজ গিজ করছে সেনাবাহিনী। বলা হচ্ছে ইরাক-আফগানিস্তানে বর্তমানে যে পরিমাণ মার্কিন সেনা মোতায়েন আছে, তার চেয়ে বেশি সেনা সদস্য এখন রাজধানীতে।যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের পর এমন অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা হুমকি আর দেখা যায়নি।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে,৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় মার্কিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ২১ জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা সরাসরি অংশ নেন। তাই,অভ্যন্তরীণ নাশকতার বিষয়ে বেশ সতর্ক এফবিআই।তল্লাশির আওতায় আছে খোদ নিরাপত্তাকর্মীরাও।ওয়াশিংটন ডিসির পাহাড়ায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের ওপর নজরদারির জন্য পাল্টা সেনা গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়ছে পেনসিলিভেনিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাসের মতো ১২ রাজ্যের স্টেট পার্লামেন্ট ভবন ও স্টেট গভর্নর অফিস।এসব অফিসের বাইরেও রয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
অন্যদিকে,প্রশাসনের তোয়াক্কা না করেই সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সামরিক পোশাকের আদলে বিশেষ পোশাকে ভার্জিনিয়ার রাজপথে বেরিয়ে আসে ট্রাম্পের একদল সমর্থক।তাদের সবারই হাতে ছিল সংক্রিয় আধুনিক অস্ত্র।বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের বিরোধিতায় তারা অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ করেন।হাতে ছিল প্ল্যাকার্ডও।বিক্ষোভকারীরা এক পর্যায়ে গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মহড়া দেয়।তাদের কণ্ঠে ছিল ‘কিপ আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন।
ট্রাম্পের শাসনামলে নানা কারণেই ক্ষুব্ধ কৃষ্ণাঙ্গরা।বিশেষ করে নির্বাচনের আগে দীর্ঘদিন ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটরস বা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন উত্তপ্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্র।পুলিশি নির্যাতনে এক কৃষ্ণাঙ্গ নিহতের ঘটনার জেরে ট্রাম্পের ওপর যতটুকু আস্থা ছিল তাও শেষ হয়ে যায়।কিন্তু সোমবারের বিক্ষোভে কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।নামে বেনামের ব্যানারে গাড়ি নিয়ে মহড়া দেন তারা। কিন্তু পুলিশকে কোনো ধরনের অ্যাকশনে যেতে দেখা যায়নি।
ব্রংকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো জন হুদাক বলেন, ট্রাম্প সমার্থকরা যেভাবে কথা বলছে তা রীতিমত আল কায়েদা- আইএসকেও হার মানিয়েছে।একদিকে করোনার দাপট, তার ওপর নিরাপত্তা হুমকিতে নজিরবিহীন এক অভিষেকের সাক্ষী হতে চলছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিএনএনিউজ/আরকেসি