32 C
আবহাওয়া
৬:৫৩ অপরাহ্ণ - মে ৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৯৭(বাগেরহাট-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৯৭(বাগেরহাট-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে বাগেরহাট-৩ আসনের হালচাল।

বাগেরহাট-৩ আসন

বাগেরহাট-৩ সংসদীয় আসনটি রামপাল এবং মোংলা উপজেলা নিয়ে গঠিত, এই আসনটি জাতীয় সংসদের ৯৭তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিজয়ী হন 

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ২ শত ২৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২ হাজার ২ শত ২৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ১ শত ২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর গাজী আবু বক্কর সিদ্দিকি। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ২ শত ৫ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এ ইউ আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির এ ইউ আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৭ শত ৭১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮ শত ৮৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৪ শত ৪৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর গাজী আবু বক্কর সিদ্দিকি। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৩ শত ২১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫ শত ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৯ শত ৪৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৭ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর গাজী আবু বক্কর সিদ্দিকি। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৩ শত ১০ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের হাবিবুন নাহার বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭ শত ১৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবুন নাহার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আব্দুল ওয়াদুদ শেখ। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ১ শত ৭৭ ভোট।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবুন নাহার বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৬ হাজার ১শত ৯২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৮ শত ৮৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের হাবিবুন নাহার, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আব্দুল ওয়াদুদ শেখ, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সেকেন্দার আলী মনি, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির রেজাউল শেখ, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শাহ জালাল সিরাজী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবুন নাহার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭ শত ৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল ওয়াদুদ শেখ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২ হাজার ৪ শত ৭১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাগেরহাট-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় । বিএনপি বিজয়ী হয় শুধুমাত্র ষষ্ঠ সংসদে।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বাগেরহাট-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.৩৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.১২%, বিএনপি ১৭.৪২%, জাতীয় পার্টি ২.৫৪%, জামায়াতে ইসলামী ৩৪.৪৪% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৮% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৩৩%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.১১%, বিএনপি ১৮.১৩%, জাতীয় পাটি ৪.০৪ %, জামায়াতে ইসলামী ২৮.৮৭ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৮৫% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৪৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫০.৮৭%, ৪দলীয় জোট ৪৫.৯২%, জাতীয় পাটি ১.১৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.০২% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৮.০৬ %, ৪ দলীয় জোট ৪৯.৬১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.৩৩% ভোট পায়।

বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার। তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের স্ত্রী হাবিবুন নাহারের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য লায়ন ইকবাল লতিফ সোহেল, চিত্র নায়ক শাকিল খান, ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান ও খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শেখ মো. আবু হানিফ ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক হিসাবে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল ওয়াদুদ। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান এবং লায়ন শেখ ফরিদুল ইসলাম।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বাগেরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি ও রামপাল উপজেলা কমিটির সভাপতি এম এ সবুর। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা আব্দুল আজিজ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাগেরহাট-৩ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন বাদে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রত্যকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। এই আসনে খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ব্যক্তিগত ইমেজ রয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার তার স্ত্রী। আওয়ামী লীগে তেমন দলীয় কোন্দল নেই।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয়। দলটিতে জয়প্রিয় নেতার সংকট রয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অবস্থা বিএনপির চেয়েও মজবুত। কৌশলগত কারণে বাগেরহাট-৩ আসনটিতে প্রতিবারই জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। এবারও বিএনপি-জামায়াত জোট থাকলে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল ওয়াদুদই ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৯৭তম বাগেরহাট-৩ সংসদীয় আসনটিতে আবারও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

বিএনএ/ শিরিন সুলতানা, রেহেনা ইয়াসমিন , ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ