28 C
আবহাওয়া
৫:২৯ অপরাহ্ণ - মে ৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৯৬(বাগেরহাট-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৯৬(বাগেরহাট-২)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে বাগেরহাট-২ আসনের হালচাল।

বাগেরহাট-২ আসন 

বাগেরহাট-২ সংসদীয় আসনটি বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত, এই আসনটি জাতীয় সংসদের ৯৬ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এ এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮ হাজার ১ শত ৫০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৬ শত ৬৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির এ এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মীর সাখাওয়াত আলী দারু। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৬ শত ৫২ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এ এস এম মোস্তাফিজুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির এ এস এম মোস্তাফিজুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মীর সাখাওয়াত আলী দারু বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩শত ৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মীর সাখাওয়াত আলী দারু বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৩ শত ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এ এস এম মোস্তাফিজুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৪ শত ৪৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম এ এইচ সেলিম বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৯ হাজার ১ শত ৩৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৪ শত ৫৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির এম এ এইচ সেলিম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৭ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল উদ্দিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ৪ শত ২৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মীর শওকত আলী বাদশা বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৪শত ৩৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭ হাজার ১ শত ৮৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মীর শওকত আলী বাদশা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৯ শত ৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এম এ সালাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৬ হাজার ২শত ৫৬ ভোট।

 দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন:মীর শওকত আলী বাদশা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মীর শওকত আলী বাদশা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ সারহান নাসের তন্ময় বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৮ শত ১৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শেখ সারহান নাসের তন্ময়, ধানের শীষে বিএনপির এম এ সালাম, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল আউয়াল, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির খান সেকেন্দার আলী, গোলাপফুল প্রতীকে জাকের পার্টির খান আরিফুর রহমান, রকেট প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম আজমল হোসেন এবং বেলুন প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউর রহমান মন্টু প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ সারহান নাসের তন্ময় বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২১ হাজার ২ শত ১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এম এ সালাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪ হাজার ৫ শত ৯৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাগেরহাট-২ আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বাগেরহাট-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬১.৩৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.৫৪%, বিএনপি ৩৭.৬৬%, জাতীয় পার্টি ৩.৩০%, জামায়াতে ইসলামী ২১.৫৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.৯৯%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.২২%, বিএনপি ৩৫.১৬%, জাতীয় পাটি ৫.৭৮ %, জামায়াতে ইসলামী ১৮.৩২ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৫২% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৩৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.২৫%, ৪দলীয় জোট ৫৭.৫২%, জাতীয় পাটি ০.৮০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৩০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫০.৫৮ %, ৪ দলীয় জোট ৪৬.৭৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.৬৮% ভোট পায়।

বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম শেখ সারহান নাসের তন্ময়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে তিনি একক প্রার্থী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বাগেরহাট বিএনপির বর্তমান জেলা আহ্বায়ক প্রকৌশলী এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, জেলা সদস্য ব্যারিস্টার শেখ মো. জাকির হোসেন, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ফকির তরিকুল ইসলাম ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. সুজাউদ্দিন মোল্লা সুজন।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বাগেরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাজরা শহীদুল ইসলাম বাবলু। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন চাইবেন মওলানা সাইফুল্লাহ ও মওলানা মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাগেরহাট-২ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলা যাবে না। এখানে অংশগ্রহণমূলক দুইটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগে মতবিরোধ থাকলেও তেমন দলীয় কোন্দল নেই। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত হলেও দলীয় কোন্দল রয়েছে। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৯৬তম বাগের হাট-২ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/শিরীন সুলতানা, রেহেনা ইয়াসমিন,ওয়াইএইচ 

Loading


শিরোনাম বিএনএ