31 C
আবহাওয়া
২:৫৩ পূর্বাহ্ণ - মে ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বিজয়ের ৫২ বছর পূর্তিতে আনন্দে মেতেছে দেশ

বিজয়ের ৫২ বছর পূর্তিতে আনন্দে মেতেছে দেশ

স্মৃতিসৌধ

বিএনএ ডেস্ক: আজ ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণতা প্রাপ্তির ঐতিহাসিক এক দিন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫২ বছর পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। ৫৩তম মহান বিজয় দিবস।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের আজকের দিনটিতে জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় এসেছিল। দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এই এদিনটিতেই স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

আজকের দিনটি তাই জাতির শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। তাই তো বিজয় দিবসের ৫২ বছর পূর্তির দিনে আজ বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত উদযাপিত হবে দিনটি। উৎসবের সমারোহে জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদকে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের আত্মত্যাগের কথা, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল।

বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের এই বিজয় কিন্তু এক দিনে আসেনি। এই বিজয় অর্জনের ইতিহাস কেবল ১৯৭১ সালেও সীমাবদ্ধ নয়। ইস্পাত কঠিন ঐক্যে দৃঢ় জাতির দীর্ঘ সংগ্রাম আর ত্যাগের সুমহান ফসল এ বিজয়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের এক বছরের মধ্যেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী আঘাত করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার ওপর। শুরু হয়ে যায় শোষণ-বঞ্চনা আর বৈষম্যের করুণ ইতিহাস। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সেই শোষণ থেকে মুক্তি পেতে বিক্ষুব্ধ বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রথম স্ফুরণ ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এই চেতনার ধারাবাহিক সংগ্রামের অংশ হিসেবে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা তথা স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকারের জন্য গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০-এ নির্বাচনী বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু গণতান্ত্রিক সে বিজয় পাকিস্তানি সামরিক শাসক চক্র মানতে পারেনি।

ফলে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঘনিয়ে আসে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। এদিন রেসকোর্স ময়দানের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতির পিতা ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় স্বাধীনতার অমোঘ বাণী– ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মূলত সেদিন থেকেই গোটা জাতির মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতার স্পৃহায় জেগে উঠেছিল গোটা জাতি। কিন্তু বাঙালিকে স্তব্ধ করতে ২৫ মার্চ কালরাতে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় মেতে উঠেছিল পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। সেই গণহত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের ভাগ্যাকাশে নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা।

তবে দিশেহারা জাতিকে আবারও জাগিয়ে তুলেছিল বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা। গণহত্যা শুরুর পর মধ্যরাতে, অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু এ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে দেশবাসীকে অনুরোধ ও নির্দেশ দেন তিনি।

শুরু হয় হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার চূড়ান্ত প্রতিরোধ লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস ধরে চলা সে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর লুটতরাজের কলঙ্কিত অধ্যায়ের বিপরীতে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের আরেকটি মহান অধ্যায়। সেই অধ্যায়ে ছিল মুক্তিকামী বাঙালির অসম সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের বীরত্বগাথা। ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

আজ সরকারি ছুটি। সূর্যোদয়ের ক্ষণে ঢাকার তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনি করে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা করা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সন্ধ্যায় আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন পতাকায় সাজিয়ে তোলা হবে।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা, মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী দল, সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণও শ্রদ্ধা জানাবেন।

দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সরকারি-বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। সংবাদপত্রগুলো বিজয়ের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করবে। জেলা-উপজেলা পর্যায় এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী দল ও সংগঠন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ