37 C
আবহাওয়া
৮:৫০ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ভিক্ষা করেও বিরলের ভাত জুটলো না

ভিক্ষা করেও বিরলের ভাত জুটলো না

ভিক্ষা করেও বিরলের ভাত জুটলো না

বিএনএ,গাজীপুর: আফাজ উদ্দিন (৭০) ওরফে বিরল মানব। জীবনে বেঁচে থাকতে হলে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, অপরিহার্য হলেও বস্ত্র তো দূরের কথা দু’বেলা দু-মুঠো ভাতও জুটে না তার। কারণ স্বাভাবিক মানুষদের মতো সে ভিক্ষার জন্য মানুষের সামনে গেলে অনেকে তার বিবর্ণ চেহারা দেখে ভয়ে ভিক্ষা না দিয়ে চলে যায়। তাই দিন শেষে যা রোজগার হয় তাতে ভাত কিনে খাওয়ার মত টাকা হয়না। এই সভ্য সমাজের মাঝে তেমনটি একজন অসহায় মানুষ আফাজ।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর মৌচাক এলাকায় রাস্তার পাশের গলিতে এক চায়ের দোকানের সামনে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)’র প্রতিবেদক রুকনের সাথে বিরলের দেখা মেলে। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া মাত্রই বিরলের বোবাকান্নায় এ এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

প্রতিবেদকে বিরল মানব জানান, মাওলার খেলা বুঝা বড় দায়। দয়ালের মাইর দুনিয়ার বাহির। যাদের টাকার অভাব নেই, তাদের কোন বিরল রোগ নাই। সহায়-সম্বলহীন এই আফাজ উদ্দিনের রোগের শেষ নাই।

জানা গেছে, জন্মগত ভাবে আফাজ উদ্দিন রোগাক্রান্ত ছিলেন না। একজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই। এক সময় সোনালি সংসার ছিল তার। বউ-বাচ্চাদের নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল তার ৭ সদস্যের পরিবারে। একটা রোগেই পাল্টে গেছে তার। জীবনের দুর্বার পথচলা। প্রথমে শরীরে এ রোগ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন বিরল মানব।

শরীরে যখন এ রোগের প্রভাব বিস্তার শুরু করে তখন প্রতিবেশি এবং পরিবারের পরামর্শে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সারা দেশের বিভিন্ন নামি-দামি চিকিৎসালয়ে ঘুরতে শুরু করে। বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেলেও রোগ সারার কোন বালায়ই কাছে আসে না।

সর্বশেষে ডাক্তাররা আফাজ উদ্দিন কোন রোগে আক্রান্ত সেটা চিহ্নিত করতে না পারায় বিরল রোগে আক্রান্ত বলে অভিহিত করে। পরবর্তীতে এ কথা এলাকায় ছডিয়ে পড়লে বিরল মানব নামে পরিচিতি পায়।  অনেকে আফাজ উদ্দিনকে (গূটা) মানব বলেও ডাকে।

২০০০ সালে বিরল কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অষ্টমীচরে ডিলার পাড়ার নটার কান্দি গ্রাম থেকে ঢাকার দিকে পাড়ি জমান। কারো কাছে হাত না পেতে দিন মজুরী কাজের সন্ধানে। সামান্য ডাল ভাত খেয়ে জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদে ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হন্যে হয়ে কাজ খুঁজতে থাকে। বিধির লিখন নাই বিরলের বাজেটে। তাই কোন কাজ জুটেনি তার কপালে।

অবশেষে নিরুপায় হয়ে বিরল মানুষের দুয়ারে হাত বাড়াতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভিক্ষা করে কোন মতে খেয়ে পড়ে চলতে পারলেও এখন আর পাচ্ছে না। হার মানতে হচ্ছে শারিরীক অসুস্থতার ভয়াল দানবের কাছে।

বিরল গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকে। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময়ে বিরলের অতি আদরের সন্তান ছিল যারা। তারাও আজ এই দুঃসময়ে পাশে নেই।

মাঝে মধ্যে বিরলের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে মো. মিন্টু মিয়া বলেন, বিরলের বর্তমান পরিস্থিতে মানবতার হাত বাড়িয়ে না দিলে বিরল না খেয়ে মারা যাবে।

এ ব্যাপারে গাজীপুরের অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হাবিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক জুয়েল রানা বলেন, সমাজের অনেকেই রয়েছেন যারা গরীব দুঃখীদের সহযোগিতা প্রদান করেন, তাদের প্রতি অনুরোধ করবো। বিরল রোগীদের প্রতি যার-যার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করার।

বিএনএনিউজ/রুকন,মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ