27 C
আবহাওয়া
১২:০৯ পূর্বাহ্ণ - মে ৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬৩ (কিশোরগঞ্জ-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬৩ (কিশোরগঞ্জ-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের হালচাল।

YouTube player

কিশোরগঞ্জ-২ আসন

কিশোরগঞ্জ-২ আসনটি কাটিয়াদি উপজেলা ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত।এটি জাতীয় সংসদের ১৬৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মো. আকতারুজ্জামান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯ শত ৯৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৩ হাজার ৪ শত ৫৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির মো. আকতারুজ্জামান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৬ শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৮ শত ৭৪ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির হাবিবুর রহমান দয়ালকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুর রহমান দয়ালকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মো. আকতারুজ্জামান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪ হাজার ৩ শত ৭৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির মো. আকতারুজ্জামান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ১ শত ২১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এম এ আফজাল ।নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৫ শত ৫০ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ডা:এম এ মান্নান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬ শত ২৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৪ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা:এম এ মান্নান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ২শত ৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো. আকতারুজ্জামান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৪ শত ১১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ডা:এম এ মান্নান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮ শত ২০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা:এম এ মান্নান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৯ হাজার ১ শত ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইদ্রিস আলী ভূইয়া । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ১২ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সোহরাব উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সোহরাব উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের নূর মোহাম্মদ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪ শত ২০ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৬১ হাজার ১ শত ৮৫ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের নূর মোহাম্মদ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মো. আকতারুজ্জামান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের সালাউদ্দীন, হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগের মীর আবু তৈয়ব মোঃ রেজাউল করিম, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির নূরুল ইসলাম, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আবদুল জব্বার, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টির তারেক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নূর মোহাম্মদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৭ শত ৭৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো. আকতারুজ্জামান রঞ্জন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫৪ হাজার ৫০ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সংসদে বিএনপি, অষ্টম,নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ টানা বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর কিশোরগঞ্জ-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়,কিশোরগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.৫৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯.৮০%, বিএনপি ৩৯.১২%, জাতীয় পাটি ১২.৮০%,জামায়াত ইসলামী ১২.৩৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৯৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.৬১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২০.৬৫%, বিএনপি ৩৯.৪০% জাতীয় পাটি ২০.০৩% , জামায়াত ইসলামী ৩.৯১ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.০১% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.৭১ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৭৭ %, ৪ দলীয় জোট ৩৭.৩৯%, জাতীয় পাটি ২৩.৩৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৩.৬২ %, ৪দলীয় জোট ৩৪.৭০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৬৮% ভোট পায়।

কিশোরগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। তিনি এবারও মনোনয়ন চাইবেন। আরো মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, স্পেশাল পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ আফজল, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাহার আকন্দ, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান, রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক একেএম দেলোয়ার হোসেন এফসিএমএ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দু’বার এমপি নির্বাচিত অবসরপ্রাপ্ত মেজর আক্তারুজ্জামান রঞ্জন।তিনি বর্তমানে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত। আক্তারুজ্জামান রঞ্জন ছাড়াও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আকিল, সাবেক এমপি নূরুজ্জামান চাঁন মিয়ার ছেলে সুইডেন প্রবাসী শহীদুজ্জামান কাকন, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম জানু এবং শিল্পপতি আশফাক আহমেদ জুন।

জামায়াত ইসলামী থেকে জোটের মনোনয়ন চাইবেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কিশোরগঞ্জ জেলার কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম শওকত।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে কিশোরগঞ্চ জেলা সিপিবির সভাপতি আবদুর রহমান রুমী মনোনয়ন চাইবেন।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি, কখনো বা জাতীয় পার্টি এই আসনে রাজত্ব করেন। আওয়ামী লীগ চায় আসনটির দখল ধরে রাখতে। বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই রয়েছে বিরোধ ও কোন্দল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই বিরোধ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঘিরে যুদ্ধংদেহী অবস্থা চলছে আওয়ামী লীগে। তাদের ঘিরে দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এর প্রভাব পড়ছে তৃণমূলেও। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।

আওয়ামী লীগে একাধিক জনপ্রিয় নেতা থাকলেও বিএনপিতে বহিস্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান ছাড়া জনপ্রিয় নেতা নেই। তাকে মনোনয়ন না দিলে সেই ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৬৩ তম সংসদীয় আসন (কিশোরগঞ্জ-২) আসনটিতে লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।

বিএনএ/ শাম্মী,রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ