19.5 C
আবহাওয়া
৭:১৫ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-২১

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-২১

কারাগারের রোজনামচা

১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল। এ সময়ে বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তানী শাসক অসংখ্যবার কারাগারে বন্দি রেখে বাঙ্গালী জাতিকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর শুধু প্রথম তিন মাসে বঙ্গবন্ধুকে মোট আটবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।কারাগারে নিজের, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও অন্য বন্দিদের সুখ, দুঃখ, কারাগারে বিভিন্নভাবে নির্যাতন বিভিন্ন সময়ে খাতায় লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এর নাম দিয়েছিলেন ‘থালাবাটি কম্বল / জেলখানার সম্বল’।

‘কারাগারের রোজনামচা’

বঙ্গবন্ধুর কারাগারে লেখা খাতাগুলো খুঁজে পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা পরে ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ বই আকারে প্রকাশ করা হয় ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামে । বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং নামকরণ করেছেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

এই বইয়ে শুধু কারাগারের চিত্রই নয়, ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তান সরকারের এক নায়কোচিত মনোভাব ও অত্যাচার-নির্যাতনের নানান চিত্র। ফুটে উঠেছে, দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন,ত্যাগ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের অজানা কাহিনী বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রকাশ করছে।

আজ প্রকাশিত হলো- পর্ব-২১

আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় একজন আইবি কর্মচারী বসে থাকত, আর জেলের পক্ষ থেকেও একজন ডিপুটি জেলার উপস্থিত থাকতেন । মাত্র ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এর মধ্যে যাবতীয় আলাপ করতে হবে । কথা আরম্ভ করতেই ২০ মিনিট কেটে যায়। নিষ্ঠুর কর্মচারীরা বোঝে না যে স্ত্রীর সাথে দেখা হলে আর কিছু না হউক একটা চুমু দিতে অনেকেরই ইচ্ছা হয়, কিন্তু উপায় কি? আমরা তো পশ্চিমা সভ্যতায় মানুষ হই নাই। তারা তো চুমুটাকে দোষণীয় মনে করে না। স্ত্রীর সাথে স্বামীর অনেক কথা থাকে কিন্তু বলার উপায় নাই । আমার মাঝে মাঝে মনে হতো স্ত্রীকে নিষেধ করে দেই যাতে না আসে । ১৯৪৯ সাল থেকে ৫২ সাল পর্যন্ত আমার স্ত্রীকে নিষেধ করে দিয়েছিলেম ঢাকায় আসতে, কারণ ও তখন তার দুইটা ছেলেমেয়ে নিয়ে দেশের বাড়ি থাকত।

১৯৪৯ সাল থেকে ৫০ সালে ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের জন্য একটা মামলা চলে। আমার, শামসুল হক সাহেব, মওলানা সাহেব, ফজলুল হক ও আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে মামলাটা হয় লিয়াকত আলী খান ঢাকা আসলে আমরা একটা সভা করে শোভাযাত্রা বের করি। শোভাযাত্রা লাঠি চার্জ করে ভেঙে দেওয়া হয়, আর শামসুল হক সাহেব ও আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। কয়েকদিন পরে মওলানা সাহেবকে আর দেড়মাস পরে আমাকে গ্রেপ্তার করে । অন্যদের জামিন দেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের তিনজনকে রাজনৈতিক বন্দি করা হয়। তাই আমাদের জামিন হয় না। আমরা নিরাপত্তা বন্দি হয়ে যাই। যখন সরকারের ইচ্ছা ছাড়বে। বিনা বিচারে বন্দি। মুক্তি পাওয়াটা সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। এক বৎসর মামলা চলল। মওলানা সাহেব ও হক সাহেবকে মুক্তি দেওয়া হলো। আর আমাদের বাকি তিনজনকে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো তিন মাস করে। নিরাপত্তা বন্দিও রইলাম, সাথে

সাথে সশ্রম কারাদণ্ডও ভোগ করতে লাগলাম। আপীল করা হলো। আমাকে ফরিদপুর পাঠাইয়া দেওয়া হলো। হক সাহেব ৭/৮ মাস পরে মুক্তি পান । মওলানা সাহেব ও আমি ছিলাম এক জেলে। আমাদের অন্য রাজবন্দিদের সাথে রাখা হতো না । আমরা যদি ওদের সাথে থাকি তবে কম্যুনিস্ট হয়ে যাবো—এই হলো ভয় । কম্যুনিস্ট রাজবন্দি ছিল বেশি। আমাকে পাঠাইয়া দেওয়া হলো। মওলানা সাহেব একলা রইলেন, যখন বিদায়ের সময় হলো মওলানা সাহেব কেঁদে দিলেন। বুঝলাম, বুড়ার মনে ব্যথা

আমাকে গোপালগঞ্জ চালান দেওয়া হলো, কারণ সেখানে আর একটা মামলার আসামী—সেটা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের। গোপালগঞ্জ পৌঁছে খবর পেলাম, আমার মা-বাবা ও স্ত্রী ঢাকায় আমাকে দেখতে গেছেন। সাবজেলে আমাকে রাখা হলো না, কারণ জায়গা নাই; পাঠাইয়া দেওয়া হলো ফরিদপুর জেলে। মামলার তারিখ পড়ে গেছে । ফরিদপুর জেলে নিয়ে যাওয়া হলো। আমাকে ভাড়া দেওয়া হতো ইন্টারক্লাসের, নিজের টাকা দিয়ে সেকেন্ড ক্লাস করে নিলাম । সিপাহি বেচারারা কোনোদিন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নাই, খুবই আদর করেছে ও ভদ্র ব্যবহার করেছে। যে টাকা পথ খরচ সরকার দিতেন তাতে একবেলা খাওয়া হয়, স্টীমারে আর এক বেলা খাওয়া হতো না। তাই নিজের টাকা দিয়ে খেয়ে নিতে হতো।

সূত্র : কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ৪০-৪১, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭

পড়ুন আগের পর্ব :

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-২০

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৯
কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৮

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৬

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৫

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৪

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৩

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১১

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১০

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৯

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৮

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী,এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ