29 C
আবহাওয়া
৬:৫৩ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-২০

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-২০

কারাগারের রোজনামচা

১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল। এ সময়ে বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তানী শাসক অসংখ্যবার কারাগারে বন্দি রেখে বাঙ্গালী জাতিকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর শুধু প্রথম তিন মাসে বঙ্গবন্ধুকে মোট আটবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।কারাগারে নিজের, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও অন্য বন্দিদের সুখ, দুঃখ, কারাগারে বিভিন্নভাবে নির্যাতন বিভিন্ন সময়ে খাতায় লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এর নাম দিয়েছিলেন ‘থালাবাটি কম্বল / জেলখানার সম্বল’।

‘কারাগারের রোজনামচা’

বঙ্গবন্ধুর কারাগারে লেখা খাতাগুলো খুঁজে পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা পরে ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ বই আকারে প্রকাশ করা হয় ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামে । বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং নামকরণ করেছেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

এই বইয়ে শুধু কারাগারের চিত্রই নয়, ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তান সরকারের এক নায়কোচিত মনোভাব ও অত্যাচার-নির্যাতনের নানান চিত্র। ফুটে উঠেছে, দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন,ত্যাগ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের অজানা কাহিনী বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রকাশ করছে।

আজ প্রকাশিত হলো- পর্ব-২০

ডাক্তারদের থেকেও বেশি চুরি করে একশ্রেণীর কয়েদি-যারা ডাক্তারদের রাইটার। এরা কম্পাউন্ডারের কাজও করে। জেলখানায় ডাক্তাররা ইনজেকশন দেওয়া ভুলে যায়। কারণ কয়েদিদের দিয়েই অধিকাংশ কাজ করাইয়া থাকে তবে সকল ডাক্তার না। অনেকে আবার খুব পরিশ্রমও করে রোগীদের ভাল চিকিৎসার জন্য ।

রাজবন্দিদের সাধারণ কয়েদিদের সাথে রাখা হতো না। এদের জন্য ছোট ছোট জেল আছে ঢাকা ও অন্যান্য জেলে। আবার সকল রাজবন্দিকে এক জায়গায় রাখা হতো না, কোথাও দুইজন, কোথাও একজন, কোথাও পঞ্চাশ জন, কোথাও একশ’ জন এইভাবে রাখা হতো। এক স্থানের রাজনৈতিক বন্দিদের সাথে অন্য স্থানের রাজনৈতিক বন্দিদের এক জেলে থেকেও পাঁচ বছরে একবার দেখা হয় নাই এমন ঘটনাও আছে। পূর্বেই বলেছি, অধিকাংশ রাজনৈতিক বন্দিদের ডিভিশন না দেয়ায় সাধারণ কয়েদিদের যা দেয়া হতো, এদেরও তাই দেয়া হতো

১৯৫০ সালে সমস্ত রাজবন্দি প্রায় ৬০ দিন অনশন ধর্মঘট করে সরকারের কাছ থেকে কিছু সুবিধা আদায় করে । ১৯৫১ কি ৫২ সালেও হতে পারে ঠিক বলতে পারি না। জেল কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক বন্দিদের উপর বিশেষ করে ক্ষমতা দেখাতে পারে না, কারণ আইবি-এর হুকুম নিয়ে চলতে হয়। কোথায় কাকে কিভাবে রাখতে হবে তাহাও আইবি বলে দেয়। সেই মতো কাজ করতে হবে জেল কর্তৃপক্ষের। যদি কেউ কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করে হঠাৎ দেখবেন তাকে অন্য জেলে পাঠাইয়া দেয়া হইয়াছে ।

রাজনৈতিক বন্দিদের সচরাচর এক জেল থেকে অন্য জেলে চালান দেওয়া হয়। ইংরেজ আমলে খাবার ও থাকার বন্দোবস্ত অনেক ভাল ছিল। এমনকি ফ্যামিলি এলাউন্সও দেওয়া হতো। মাসে টাকা বাড়িতে পৌছাইয়া দিতো সরকার । জেলবন্দির স্ত্রী বা ছেলেমেয়েদের অথবা তাদের বৃদ্ধ পিতা মাতাদের এখন তো জান বাঁচানোই কষ্টকর। এ নিয়ে জেলখানায় অনেক গোলমাল করার পরে সরকার এদের দুইটা গ্রেড করে দেন। প্রথম দেওয়া হয় গ্রেড ওয়ান, গ্রেড টু গ্রেড ওয়ান যারা তাদের রোজ ২ ছটাক মাছ, সকালে ২ টুকরা রুটি আর চা । মাখন, ডিম কিছুই দেওয়া হতো না ।

এখানে আমি বলছি ১৯৫২ সালের কথা। ভাল তরকারিও কিছু দেওয়া হতো না । যারা ডিভিশন কয়েদি তারাও সকালে রুটির সাথে মাখন পেত, কিন্তু

 

আমাদের দেওয়া হতো না। ১৫ দিনে একদিন সাক্ষাৎ পাওয়া যেত। সপ্তাহে একটা চিঠি লিখতে দিত। তা আবার আইবি অফিস হয়ে যেত। স্ত্রীর কাছে চিঠি লিখলে আইবি কর্মচারীরা পড়তেন। প্রেমের চিঠিও তারা পড়ে আনন্দ পেতেন। জেলে থেকে যদি কাউকে কিছু আনন্দ দেওয়া যায় ক্ষতি কি! জেলবন্দির কাছে লেখা চিঠিতে যদি কিছু রাজনীতি বা ঐ ধরনের কথা থাকত তবে সে চিঠি রাজবন্দিদের দেওয়া হতো না; যদি দেওয়া হতো মাঝে মাঝে কালো কালি দিয়ে এমনভাবে মাখাইয়া দেওয়া হতো, তা আর পড়ার উপায় থাকত না। এমন কি আমার স্ত্রীর ও বাবার চিঠি অনেকগুলি আছে যার অর্ধেক কালো কালি দিয়ে মুছে দেওয়া, বোধ হয় বাবা সান্ত্বনা দিয়েছেন অথবা বলেছেন, “চিন্তা করিও না’।

পড়ুন আগের পর্ব :
কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৮

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৬

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৫

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৪

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৩

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১১

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১০

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৯

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৮

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী,এসজিএন

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ