31 C
আবহাওয়া
১২:৩৪ অপরাহ্ণ - মে ৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৯২ (মাগুরা-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৯২ (মাগুরা-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে মাগুরা-২ আসনের হালচাল।

মাগুরা-২ আসন 

মাগুরা-২ সংসদীয় আসনটি মহাম্মদপুর ও শালিখা উপজেলা এবং মাগুরা সদর উপজেলার শতরুজিতপুর, গোপালগ্রাম, কুচিয়ামোড়া, বেরইল পলিতা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৯২তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোঃ আসাদুজ্জামান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ৩ শত ৭২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯ শত ৫৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোঃ আসাদুজ্জামান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৬৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মজিদ উল হক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ২ শত ৬৬ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কাজী সালিমুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির কাজী সালিমুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৮ শত ৯১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬১ হাজার ১৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ২ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কাজী সালিমুল হক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ২ শত ৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কাজী সালিমুল হক বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪ শত ৫০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১১ হাজার ৭ শত ৬৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির কাজী সালিমুল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬ হাজার ৭ শত ৪১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শফিকুজ্জামান বাচ্চু। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৬ হাজার ৩ শত ১৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪ শত ৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৩ শত ৭০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৫ হাজার ২ শত ৭৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯ হাজার ৮ শত ৮ ভোট।

YouTube player

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯২ হাজার ৬ শত ৪২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬ হাজার ৬ শত ১৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭১ হাজার ৮ শত ৫৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। হরিণ প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৫ শত ৭১ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৯ শত ৫৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ১ শত ২০ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী ও হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোস্তফা কামাল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২৮ হাজার ৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ২শত ৪১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মাগুরা-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর মাগুরা-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.১৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.৬৩%, বিএনপি ২৩.০৫%, জাতীয় পার্টি ১৩.০৮%, জামায়াতে ইসলামী ১৪.৪৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৭৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৩৫%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.৮৮%, বিএনপি ৩৪.২৮%, জাতীয় পাটি ১৬.৬৯%, জামায়াতে ইসলামী ৬.৫৭ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৫৮% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৫৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.৪৮%, ৪দলীয় জোট ৫০.৪০%, জাতীয় পার্টি ৩.৮৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯১.৪৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪৮.৭৭%, ৪ দলীয় জোট ৪৬.৪৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৪.৭৭% ভোট পায়।

মাগুরা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ওহিদুর রহমান টিপু, মাগুরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসভাপতি শেখ নবীব আলী।

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন মহম্মদপুর উপজেলা সভাপতি খসরুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক মুরাদ আলী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাগুরার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি মোস্তফা কামাল দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) হান্নান মৃধা।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাগুরা-২ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ। কিন্তু আওয়ামী লীগে রয়েছে চরম অন্ত কোন্দল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। যা নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত, দলীয় কোন্দল নেই। জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান না হলেও প্রচুর ভোটার রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ভোট ব্যাংক ও আওয়ামী লীগের কোন্দলের ওপর ভর করে বিএনপি চাইবে আসনটির দখল নিতে। আর আওয়ামী লীগ চাইবে বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৯২তম মাগুরা-২ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ