33 C
আবহাওয়া
৮:১৭ অপরাহ্ণ - মে ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৪ (ফরিদপুর-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৪ (ফরিদপুর-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল সংসদীয় আসন-২১৪ (ফরিদপুর-৪)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ফরিদপুর- ৪ আসনের হালচাল।

ফরিদপুর- ৪ আসন

ফরিদপুর- ৪ সংসদীয় আসনটি চরভদ্রাসন ও ভাঙ্গা উপজেলা এবং কৃষ্নপুর ইউনিয়ন ব্যতীত সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২১৪ তম আসন।

YouTube player

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এডভোকেট মোশারফ হোসেন বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৫ শত ৫৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৭ হাজার ২ শত ৫৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এডভোকেট মোশারফ হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৩ হাজার ৩ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৭ শত ৩০ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এডভোকেট মোশারফ হোসেন বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৩ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৪ হাজার ১ শত ৯৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এডভোকেট মোশারফ হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ৫ শত ৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৬ শত ৩০ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫ শত ৮৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১২ হাজার ৮ শত ৬২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ২ শত ৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ। ঘড়ি প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৫ শত ৮৬ ভোট। ২০০২ সালে সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মৃত্যুবরণ করেন। পরে এই আসনের উপনির্বাচনে চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের নিলুফার জাফর উল্লাহ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ১ শত ৫৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৫ শত ১০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিলুফার জাফর উল্লাহ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪ শত ৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাকের পার্টির মোস্তফা আমীর ফয়সাল। গোলাপ ফুল প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ১ শত ৬৫ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ৭ শত ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৭ শত ১৪ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বিজয়ী হন। আনারস প্রতীকে তিনি পান ৯৮ হাজার ৩ শত ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের কাজী জাফর উল্লাহ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭২ হাজার ২ শত ৪৮ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭০ হাজার ৬ শত ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬২ হাজার ২ শত ৪ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের কাজী জাফর উল্লাহ, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির খন্দকার ইকবাল হোসেন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল হামিদ মিয়া এবং কাস্তে প্রতীকে সিপিবির আতাউর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বিজয়ী হন। সিংহ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৪ হাজার ১ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের কাজী জাফর উল্লাহ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৯৪ হাজার ২ শত ৩৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদে আওয়ামী লীগ এবং দশম ও একাদশ সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ফরিদপুর- ৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫১.১৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৯.৬৪%, বিএনপি ২৮.৩৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২২.০২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৩.৯৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৮.৩৯%, বিএনপি ৩৪.৬৪% জাতীয় পার্টি ৮.০৩%, জামায়াতে ইসলামী ৫.২১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৭৩% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.৭৫ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৯.৮২%, ৪ দলীয় জোট ৩.৪৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪৬.৭৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.০৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৬.০৯%, ৪ দলীয় জোট ১.৬৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩২.২৬% ভোট পায়।

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। দলের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিজয়ী হন। মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বর্তমানে আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। নিক্সন ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ।

বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর কবির।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে ভাঙ্গা ও সদরপুরে আওয়ামী লীগ অন্যদিকে চরভদ্রাসন উপজেলায় বিএনপির ভোট বেশি। বিগত দিনের নির্বাচনগুলোতে এ আসনে বেশিরভাগই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এই আসনটির শাসনকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও নেপথ্য তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য। গত এক দশক ধরে এই আসনে দলীয় কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। ফলে বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তাছাড়া কোন্দলমুক্ত আছে বিএনপি। আগে এই আসনটি শুধু ভাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত থাকার কারণে আওয়ামী লীগের আধিপত্য ছিল একক। কিন্তু ২০০৮ সালে ভাঙ্গার সঙ্গে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা যোগ হওয়ায় বিএনপির প্রচুর ভোট বেড়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের ভরসা ব্যাপক উন্নয়ন ও মজবুত সাংগঠনিক শক্তি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২১৪তম সংসদীয় আসন (ফরিদপুর-৪) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ও একক প্রার্থী থাকলে নিশ্চিত জয় পাবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। অন্যদের জানার সুযোগ দিন। প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত আসনভিত্তিক গবেষণামূলক প্রতিবেদনগুলো দেখুন এবং নিজের রাজনৈতিক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করুন। লাইক, কমেন্ট, ও সাবস্ক্রাইব করে ‘বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর’ এর সঙ্গে থাকুন।

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৩ (ফরিদপুর-৩)

বিএনএনিউজ/ শাম্মী, রেহানা, বিএম, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ