30 C
আবহাওয়া
১০:৪৯ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১২, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » আরব রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কী সর্ম্পক মেঘনার? এক মাসের আটকাদেশ!

আরব রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কী সর্ম্পক মেঘনার? এক মাসের আটকাদেশ!


বিএনএ,ডেস্ক : মেঘনা আলম। তিনি একজন মডেল এবং ‘মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান। ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মেঘনা আলম ‘মিস আর্থ’ বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছেন।

মেঘনা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। এরপর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে। এরপর তিনি পড়াশোনা করেন ফিলিপিন্সের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশনে। বর্তমানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসকারি মডেল মেঘনা আলম বিভিন্ন প্রসাধন ব্র্যান্ডের পণ্যদূত হিসাবে কাজ করছিলেন।

YouTube player

এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটে বাংলাদেশে নিযুক্ত মধ্যপ্রাচ্যর এক রাষ্ট্রের তরুণ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার বাগদানের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর। মেঘনা আলম লাইভে অভিযোগ করেন ওই রাষ্ট্রদূতই তার বাসায় পুলিশ পাঠিয়েছে।

ঘটনাটি ৯ এপ্রিল রাতের। মেঘনা আলমের ফেসবুক লাইভ চলার সময়ই দরজা ভেঙ্গে তার বসুন্ধরা বাসায় প্রবেশ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপরই প্রায় ১২ মিনিট ধরে চলা ফেসবুক লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ১২ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভ ততক্ষণে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে মেঘনাকে ঢাকা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আটক রাখা হয় ।

আটক হওয়ার আগমুহুর্তে সেই লাইভে তিনি শুরুতেই বলছিলেন, তার বাসায় কিছু মানুষ আক্রমণ করেছে। তারা নিজেদেরকে পুলিশ পরিচয় দিচ্ছে। আমি বলেছি থানায় এসে কথা বলবো, তারা কথা শুনছে না।” একপর্যায়ে মেঘনাকে বলতে শুনা যায় তাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

ফেসবুকে লাইভ করার সময়ই মেঘনা আলম তার আইনজীবীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন এবং ঘটনা জানান। এসময় তাকে জরুরি সেবা নাম্বারে কল দিয়েও সাহায্য চাইতে শোনা যায়।

যখন মেঘনা আলম ফোনে কথা বলছিলেন, তখন বাইরে থাকা লোকজন তার বাসার দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে। লাইভের শেষ কয়েক সেকেন্ডে মেঘনা আলমকে বলতে শোনা যায়, “আমার ফোন, ল্যাপটপ সব নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে…আপনি টানাটানি করছেন কেন!”

এরপর তাকে নিয়ে কি ঘটল, সে ব্যাপারে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পুলিশ গণমাধ্যমকে কোন তথ্য দেয়নি। আসেনি। ফলে মেঘনা আলমকে পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়।

অবশেষে ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেঘনাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।ডিবির আবেদনে মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন

শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ বা ডিএমপি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ভেরিফায়েড অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে জানায় যে, অপহরণের এই অভিযোগ সত্য নয়। বরং ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।’

কিন্তু মেঘনা আলম কী ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে এবং সেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে? ডিএমপি’র তরফ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে সে বিষয়ে খোলাসা করে কিছু বলা হয়নি।

ডিএমপির এই বার্তা ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

ফেসবুকে অনেকে লিখেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর অনেকেই আশা করেছিলো, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু মেঘনা আলমকে আটক করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তারা আশাহত হয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী ফেসবুকে লিখেছেন, এইসব ঘটনা হাসিনার ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়মিত ঘটত। এখন কিভাবে সম্ভব?

“আগের সরকারের আমলে এভাবে তুলে নেওয়াটা তাদের ভয়ংকর অপশাসনের আলামত ছিলো। এরাও যদি সেই ধারাবাহিকতা রাখে, তবে সংস্কার কই, পরিবর্তন কই?” ফেসবুকে এই প্রশ্ন রেখেছেন এক ব্যক্তি।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা সঙ্গীতা এক ফেইসবুক পোস্টে তিনটি প্রশ্ন তোলেন।

১. মেঘনা আলমকে তুলে নেওয়ার পর পুরো ২৪ ঘণ্টা কেন সেটা গোপন রাখা হলো?
২. তুলে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টায় কেন আদালত বসিয়ে রায় দিতে হলো? দিনের বেলা ওনারা কী করছিলেন?
৩. মেঘনা আলম কী ধরনের জননিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থি ক্ষতিকর কাজের সাথে যুক্ত আছেন যে তাকে রাতের বেলা কোর্ট বসিয়ে জরুরীভিত্তিতে জেলে পাঠাতে হলো?
“প্রশ্ন আরও আছে কিন্তু উত্তর কে দেবে?” লিখেছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন শেয়ার করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানার একটি পোস্ট।

মির্জা তাসলিমা লিখেছেন, “যুগান্তর খবর করেছে রাত ১০টায় আদালতে আনা হয়েছে তাকে। এরপর ১৯৭৪ সালের আইনে ১ মাসের কারাবাস দেওয়া হয়েছে। রাতে কেন আদালতকে বসতে হলো?!

“বিচারহীন নির্যাতন শুক্র-শনি জারি রাখার প্ল্যান ছিল নিশ্চয়ই। এরপর সামাজিক মাধ্যমের চাপে এই ব্যবস্থা!”

ওই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাগদানের পর সম্পর্কচ্ছেদের কারণেই মেঘনার সঙ্গে এমন আচরণ হচ্ছে- এই ধারণা দিয়ে মির্জা তাসলিমা লিখেছেন, “বাগদানের আংটি ফিরিয়ে দিয়ে ফেস বুকে পোস্ট দিয়েছিলেন, তা থেকে বোঝা যায় তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। প্রতারিত হওয়ার খবর প্রকাশ অপরাধ! বাংলাদেশের নারীদের বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণার ইতিহাস ভুরি ভুরি, তাতে আর একটি যোগ হল, এমন কি?! এইজন্যে প্রতিকারের কোন জায়গা নাই!”

আওয়ামী লীগ আমলে গুমের ঘটনাগুলো স্মরণ করেও পোস্ট দিয়েছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার আমলেও একই ধরনের ঘটনা জাতির জন্য এক ‘ভয়াবহ সতর্কবার্তা’।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে এবং তাকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জানাতে হবে। কিন্তু মেঘনা আলমের বেলায় তার অনুসরণ হয়নি।

এবার আসা যাক, নারী মডেল মেঘনা আলমকে যে আইনে আটক রাখা হয়েছে তার আদ্যোপান্ত।

‘বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪’ বা ডিটেনশন আইন প্রয়োগ করে সরকার কোনও ব্যক্তিকে আদালতের আনুষ্ঠানিক বিচার ছাড়াই জননিরাপত্তা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সন্দেহভাজন হিসাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটক বা বন্দি করতে পারে।

এই আইন বিচারবহির্ভূতভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে থাকে। এটি সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার’-এর পরিপন্থী।”

এই আইনে রাষ্ট্র-বিরোধী কার্যকলাপের সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং প্রতিরক্ষা বিরোধী কার্যকলাপ, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষতি সাধন, জননিরাপত্তা বিরোধী কাজ করা, জনসাধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা-সহ নানা বিষয়।

এছাড়াও, জনগণের মধ্যে বা জনগোষ্ঠীর কোনও অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করা, দেশের আইন ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বাধা দেওয়া এবং দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা রাষ্ট্র-বিরোধী কার্যকলাপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

মূলত, পাকিস্তানের নিরাপত্তা আইন ১৯৫২, জন নিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮ এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ তফসিলি অপরাধ আদেশকে প্রতিস্থাপনের জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের নয়ই ফেব্রুয়ারি এই আইনটি পাস করা হয়েছিলো।
এর উদ্দেশ্য ছিল, বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কিছু কার্যকলাপ প্রতিহত করা। একই সাথে কিছু গুরুতর অপরাধের দ্রুত বিচার এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা।

বাংলাদেশে এই বিশেষ ক্ষমতা আইনকে ‘কালো আইন’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ‘১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের দাবি করলেও ক্ষমতাসীন হওয়ার তা বেমালুম ভুলে যায়। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কোনো সরকারই এই ‘ডিটেনশন আইন বাতিল
করেনি।

বিএনএ/ রেহানা

Loading


শিরোনাম বিএনএ