34 C
আবহাওয়া
৮:১৯ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ৩০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ঈদুল ফিতরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ঈদুল ফিতরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় চাঁদ দেখা যায়নি

বিএনএ ডেস্ক : ঈদের দিন ও ঈদের রাতের ফজিলত অসীম। হযরত নবী করিম সা: যে পাঁচটি রাতের দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলেছেন তার মধ্যে ঈদুল ফিতরের রাতটি অন্যতম। নবী করিম সা: আরো বলেন, প্রত্যেক জাতিরই খুশির দিন থাকে, আর আমাদের খুশির দিন হচ্ছে- ঈদুল ফিতরের দিন (সহিহ্ বুখারি ও সহিহ্ মুসলিম)।

ঈদ-উল- ফিতর বা রোজার ঈদ, আর অন্যটি আত্মত্যাগের কোরবানীর ঈদ বা ঈদ-উল-আজহা। এই দুইটি ঈদই হলো মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।ঈদুল ফিতর এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনার আগে জেনে নেয়া যাক ঈদ মানে কী।

‘ঈদ’ অর্থ খুশি, আনন্দ; আর ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ স্বভাব, উপবাস ভঙ্গকরণ। দীর্ঘ একটি মাস মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালনার্থে উপবাস ও সংযম সাধনার পর বিশ্ব জাহানের মুসলমানরা এই দিনে উপবাস ব্রত হতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং এ উপলক্ষে আনন্দ-উৎসব করে থাকে; এ জন্য এ উৎসবের নামকরণ করা হয়েছে ‘ঈদুল ফিতর’ বা স্বাভাবিকতায় প্রত্যাবর্তন বা উপবাসব্রত ভঙ্গের উৎসব।

‘ঈদ’ শব্দটি আরবি ‘আওদ’ থেকে উৎকলিত। ‘আওদ’ অর্থ ঘুরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। ঈদ মানে প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আসে এ রকম একটি দিন। আরবিতে বিশেষ দিবস বা উৎসবের দিনকে ঈদ বলে। ফিতর অর্থ রোজা ভাঙা বা ইফতার করা।

আরও পড়ুন : ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম,নিয়ত,তাকবীর,ওয়াজিবসমূহ

আমাদের কাছে পরিচিত ‘রোজার ঈদ’কে ইসলামি পরিভাষায় বলা হয় ঈদুল ফিতর বা রোজা ভাঙার উৎসব। পুরো রমজানে প্রতিদিন সূর্যাস্তের পর মুসলমানরা উপবাস ভাঙে। এটা শুধু সেদিনের রোজা বা উপবাসের ইফতার। ঈদের দিন এক মাসের নিয়মিত উপবাস ভাঙা হয়। সেটাও এক রকম ইফতার। রোজাদারের জন্য প্রত্যেক দিনের ইফতারের মুহূর্তই আনন্দের, ঈদুল ফিতরের দিন বিশেষভাবে আনন্দের ও উৎসবের।

সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দক্ষণ সময় রয়েছে, ইফতারের সময় সে আনন্দিত হয়, রবের সঙ্গে দেখা করার সময় আবার সে আনন্দিত হবে। (বুখারি ৭৪৯২)।

গোটা পৃথিবীতেই ইসলাম ধর্মের অনুসারিরা এই দিন খুবই আনন্দের সঙ্গে পালন করেন। সবাই এ দিন সাধ্যামতো ভালো পোশাক পরে। ঘরে ঘরে ভোজের আয়োজন হয়। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরাও এই আনন্দের অংশীদার হয়। দরিদ্ররাও এ দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদা আনন্দের সাথে পালন করে। মুসলমানেরা এ দিন ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই কোলাকুলি-সহ সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, এমন কি শত্রু মিত্ররাও।

ই-ঈদকার্ড বিনিময়

বর্তমানে ঈদকার্ড বিনিময় একটি জনপিয় প্রথায় পরিণত হয়েছে। আর তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সোশ্যাল মিডিয়াতেও আনন্দ-খুশি ও ঈদের আবেগ ভাগাভাগি করে থাকে ই-ঈদকার্ড বিনিময় করে।

ঈদুল ফিতর এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ঈদ ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও এই ধর্মের আবির্ভাবের সাথে সাথেই কিন্তু ঈদের প্রচলন শুরু হয়নি।

উম্মাতে মুহাম্মদিকে আল্লাহ তায়ালা বিশেষ কিছু বরকতময় অনুষ্ঠান প্রদান করেছেন, যা অন্য কোনো নবী-রাসূলের অনুসারীরা লাভ করেনি। তন্মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা, প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে এক অনুপম দৃষ্টান্ত প্রদর্শন ও মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার অনুকম্পা লাভের অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদ।

প্রাচীনকাল থেকেই  প্রায় প্রতিটি জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে।

হজরত রাসূলে করিম সা: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে দেখতে পান যে, প্রতি বছর মদিনায় পারসিকদের প্রভাবে শরতের পূর্ণিমায় ‘নওরোজ উৎসব’ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় ‘মিহিরজান উৎসব’ উদ্যাপিত হয়ে আসছে। এ দু’টি বিজাতীয় উৎসবের রীতিনীতি ইসলামী রীতিনীতির পরিপন্থী ছিল বলে নবী করিম সা: মুসলমানদেরকে এতে যোগদান হতে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন এবং তদস্থলে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা- এই দু’টি উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তন করেন।

রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই দিন কীসের? মদিনাবাসী সাহাবিরা বললেন, জাহেলি যুগ থেকে আমরা এই দুই দিন খেলাধুলা ও আনন্দ করি। রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ এই দুই দিনের বদলে তোমাদের নতুন দু’টি উৎসবের দিন দিয়েছেন: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। (মুসনাদে আহমদ ১৩০৫৮)।

এভাবে মুসলমানদের পৃথক উৎসবের সূচনা হলো। এটা দ্বিতীয় হিজরি অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ঘটনা। রাসুল (সা.) ঘোষণা করলেন, ‘সব জাতিরই ঈদ বা উৎসবের দিন থাকে, এটা আমাদের ঈদ।’ (সহিহ বুখারি ৩৯৩১, সহিহ মুসলিম ২০৯৮)।

সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ হলো- ১. রোজা ভঙ্গের সময় অর্থাৎ ইফতারের সময় ও ২. শেষ বিচারের দিনে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। পূর্ণ এক মাস সিয়াম সাধনা আর কঠোর সংযম ও কৃচ্ছ্র সাধন শেষে রোজাদারের অবস্থা পুরোপুরি উদ্ভাসিত হয় আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী তথা সবার সাথে পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে।

আল্লাহর হুকুমে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মাসব্যাপী রোজা রাখার পর ঈদের নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ঈদগাহে গেলে একে অপরের হাতে হাত, বুকে বুক রাখলে মুসলমান ভুলে যায় সারা মাসের উপবাসের কষ্ট। ঈদের নামাজ হলো সামাজিক নামাজ। বছরান্তে দুই দিন সমাজের সর্বস্তরের মুসলিম জনতা ঈদের জামাতে সানন্দে উপস্থিত হয়। একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়ের একটা অপূর্ব সুযোগ আসে এই দিনে। তখন ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন, আমির-ফকির, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের কোনো ভেদাভেদ থাকে না। মহান আল্লাহর কাছে আত্মনিবেদনের পর একে অন্যের সাথে বুক মিলিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ের যে অনন্য সুযোগ লাভ করা যায়, তার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ঈদের নামাজ।

অপর এক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন উপস্থিত হলে আল্লাহ তায়ালা রোজাদার বান্দাদের বিষয়ে ফেরেস্তাদের নিকট গৌরব করে থাকেন। তিনি ফেরেশ্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন- হে ফেরেশ্তা সব! কারো ওপর কোনো কাজের দায়িত্ব অর্পিত হলে সে যদি পুরোপুরিভাবে তা পালন করে, তবে তাকে কিরূপ প্রতিদান দেয়া উচিত? ফেরেশতারা উত্তরে বলেন, তাকে তার পুরোপুরি পারিশ্রমিক দেয়া উচিত। তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আমার বান্দাদের ওপর যে দায়িত্ব ন্যস্ত করেছিলাম তারা তা যথাযথভাবে পালন করেছে। অতঃপর মুমিন বান্দাগণ যখন দলে দলে দোয়া পাঠ করতে করতে ঈদগাহের দিকে রওনা হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের উদ্দেশ্যে বলেন- আমার ইজ্জত-প্রভাব-প্রতিপত্তির কসম! আমি অবশ্যই তাদের দোয়া কবুল করব। তার পর তিনি বান্দাদের উদ্দেশ্যে ডেকে ডেকে বলেন, হে আমার প্রিয় বান্দাগণ! আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, তোমাদের পাপকার্যসমূহকে পুণ্যে পরিণত করে দিয়েছি; এবার তোমরা নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন কর। তখন তারা নিষ্পাপ অবস্থায় এবং প্রভূত পুণ্যের অধিকারী হয়ে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করে।

ঈদ উদযাপন সৌদি আরবের মদিনায় শুরু হলেও পরবর্তীতে পুরো দুনিয়ায় মুসলমানদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং প্রচলিত হয়ে যায় ঈদ পালন। কালক্রমে অঞ্চল ভেদে এই উৎসবে ভিন্ন ভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়।

ঈদ পালনে কিছু নিয়ম : 

এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ঈদের দিন সকালে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, যা সব মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয় ওয়াজিব।

এছাড়া ঈদ-উল ফিতরে ফিতরা প্রদান করাও একটি অবশ্য পালনীয় রীতি। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে অভাবগ্রস্তদের প্রদান করাহয়। ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাতে যাওয়ার পূর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন।’ [সহীহ বুখারি : ১৫০৩]।

সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।

সামর্থ্যবান ও সচ্ছল মুসলমানদের ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। ঈদ উদযাপন সার্বজনীন করে তুলতে, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবার মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতেই সদকাতুল ফিতরের বিধান এসেছে। পাশাপাশি এই সদকার মাধ্যমে রোজায় হয়ে যাওয়া ভুল মাফ হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রোজাকে বেহুদা ও অশ্লীল কথা-আচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং দরিদ্রদের খাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য সাদাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ ১৬০৯)।

ঈদ উপলক্ষে পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা:

মুসলমানগণ পরস্পরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করাতে অসুবিধা নেই। কারণ সাহাবীগণ ঈদ উপলক্ষে তা করতেন। তারা এই বলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতেন
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ
”তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং আপনার (ইবাদত-বন্দেগী) কবুল করুন। (বায়হাকী (২/৩১৯)-সনদ হাসান)। সূত্র: সংগৃহীত

এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ