24 C
আবহাওয়া
১:১৮ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫৮ (নাটোর-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫৮ (নাটোর-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নাটোর-১ আসনের হালচাল।

নাটোর-৬ আসন 

নাটোর জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত একটি জেলা। এ জেলার উত্তরে নওগাঁ জেলা ও বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলা, পূর্বে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা অবস্থিত।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির ফজলুর রহমান পটল বিজয়ী হন

নাটোর-১ লালপুর এবং বাগাতিপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ২ শত ১৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭ শত ১২ জন। নির্বাচনে বিএনপির ফজলুর রহমান পটল বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ৬ শত ৪৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মমতাজ উদ্দিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ২ শত ৬৪ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ফজলুর রহমান পটল বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এতে বিএনপির ফজলুর রহমান পটলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ফজলুর রহমান পটল বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮ শত ৮৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬১ হাজার ২ শত ৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির ফজলুর রহমান পটল বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৮ শত ৯৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মমতাজ উদ্দিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ১ শত ৮৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির ফজলুর রহমান পটল বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২১ হাজার ৩ শত ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬ শত ৫৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির ফজলুর রহমান পটল বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৯ হাজার ৫ শত ৯১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মমতাজ উদ্দিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৯ শত ৪৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আবু তালহা বিজয়ী নির্বাচিত

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫১ হাজার ৪ শত ১৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩ শত ১ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আবু তালহা বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৩ হাজার ৮ শত ৩৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফজলুর রহমান পটল । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৮ শত ১৪ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন।

একাদশ সংসদ নির্বাচন : নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শহীদুল ইসলাম বকুল বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৯ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯ শত ৬৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শহীদুল ইসলাম বকুল, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির কামরুনাহার, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আবু তালহা, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খালেকুজ্জামান, কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির আনছার আলী ও হারিকেন প্রতীকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মাকসুদুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শহীদুল ইসলাম বকুল বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪শত ৪০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কামরুনাহার। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৫ হাজার ৩ শত ৩৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল, মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদ সাগর, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল রমজান আলী সরকার, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুল হক আতিক, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য রওশন আলম সুরুজ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজল রায়।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের স্ত্রী কামরুন্নাহার শিরিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ডা. ইয়াসিন আরশাদ রাজন, নাটোর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বিমল, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম টিটু,

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য তাসনিম আলম বিএনপির সমর্থনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হতে চেষ্টা-তদবির করবেন।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ব্যারিস্টার আশিক হোসেন ও অ্যাডভোকেট সোহেল রানা।

এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন চাইবেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মুহাম্মদ খালেকুজ্জামান, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও নাটোর জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ইব্রাহিম খলিল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মাকসুদুর রহমান।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নাটোর-১ আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, নবম সংসদে জাতীয় পার্টি এবং দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নাটোর-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৬০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯.২৪%, বিএনপি ৫১.৩০%, জাতীয় পার্টি ৫.৪৪%, জামায়াতে ইসলামী ১৩.৮৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.১৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.১২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৫৭%, বিএনপি ৪৮.৯৪%, জামায়াতে ইসলামী ৭.০৯%, জাতীয় পাটি ২.৪৪% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৯৬% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.৯২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.২১%, ৪ দলীয় জোট ৫১.১৬%, জাতীয় পার্টি ১.৫০ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.১৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.৭২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৩.১২%, ৪ দলীয় জোট ৪৪.৫৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.৫৩% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নাটোর ১ সংসদীয় আসনটি এক সময় বিএনপির দুর্গ ছিল। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ আসনটির দখলে নেয়। বিএনপি এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায়। আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। দুই দলেই রয়েছে দলীয় কোন্দল। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান না থাকলেও তাদের প্রচুর ভোট রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৫৮ নম্বর নাটোর-১ আসনে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর ভোটের লড়াইয়ে ভারসাম্য রক্ষা করলেও লড়াইটা হবে মুলত: বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে।

বিএনএ/ শিরীন, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ