37 C
আবহাওয়া
৬:৫৭ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-১০

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-১০

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খন্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভান্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।

গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। ওয়েব সাইট সার্ভার রক্ষনাবেক্ষণ জটিলতার কারণে কিছু দিন বন্ধ ছিল। আবারও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে যাচ্ছে। ১ মার্চ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশ স্বাধীনতার  নেপথ্যে গণ মাধ্যমের ভূমিকা, বিশেষ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের।

আজ প্রকাশিত হলো 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-১০

সাম্প্রদায়িকতা : সামন্তবাদ প্রসঙ্গ
মোস্তফা আনোয়ার
সামন্তবাদ সভ্যতার ইতিহাসে একটি মৃত অধ্যায়। বাংলাদেশেও একদিন ছিল সামন্ততন্ত্র। ছিলো জমিদারের শাষণ ও শোষণ। এই জমিদারদের ছিল দুর্দান্ত প্রতাপ। পরগাছার মত এই জমিদার-শ্রেণী বেঁচে ছিল লাঞ্ছিত-নিপীড়িত মানুষের রক্ত শোষণ করে। এই জমিদাররা নিজেরাই এক জাতি- নিজেরাই একটা শ্রেণী। এরা হিন্দুও নয়, মুসলমানও নয়। এরা রক্তপায়ী এক জীব। এরা দরিদ্র মুসলমান কৃষককে শোষণ করেছে-নিরন্ন হিন্দু কৃষককেও ক্ষমা করেনি। এদের রক্তলোলুপ থাবা থেকে কেউ-ই রেহাই পায়নি। সম্পর্কটি ছিলো জমিদার ও কৃষকের মধ্যে শোষক ও শোষিতের সম্পর্ক- হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক নয়। হিন্দু জমিদারের মধ্যে যেটা কাজ করেছে সেটা শ্রেণীস্বার্থ- জমিদাররুপে অত্যাচারিত কৃষকের রক্ত-পানের উদগ্র নেশা।

হিন্দু বা মুসলমান জমিদারদের অত্যাচারের এটাই বাস্তব চিত্র। শুধু বাংলাদেশে কেন সমগ্র বিশ্বে সামন্ততন্ত্রের এটাই আসল চেহারা। রাশিয়ায় বা আমেরিকায় এই সামন্ত প্রভুদের অত্যাচারের কাহিনী রক্তলেখায় লেখা আছে ইতিহাসে ও সাহিত্যে।

(বিশ্বের প্রতিটি দেশে সাধারণ মানুষ অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত হয়েছে এই জমিদার শোষকগোষ্ঠী দ্বারা। কিন্ত এই অমানিশারও শেষ আছে। মানুষের মুক্তির সূর্যোদয় অবশ্যম্ভাবি। অত্যাচারিত মানুষ জেগেছে। ঘুম দৈত্যপুরীর রাজকন্যার। অবশেষে কবর রচিত হয়েছে সামন্ততন্ত্রের। অত্যাচার আর নিপীড়নের হয়েছে অবসান। শোষণহীন গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করেছে সংগ্রামী মানুষ।)

আমরা আগেই বলেছি, সামন্তবাদ বা জমিদারতন্ত্র সভ্যতার ইতিহাসের একটি মৃত অধ্যায়- যাদুঘরের সামগ্রী। যে জমিদার অত্যাচার করেছিলো, সে জমিদার শেষ হয়েছে। নিশ্চিহ্ন হয়েছে এই রক্তপায়ী জোঁক শ্রেণী। ব্যাপারটি হচ্ছে শ্রেণী-সংঘর্ষের-হিন্দু-মুসলমানের নয়। এবং সর্বহারা কৃষকের জয় ঘোষিত হয়েছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পত্তনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের দরিদ্র কৃষকের দু:খে অবসান হয়েছিলো। বাংলার কৃষকের চোখে নেমেছিলো নতুন ফসলের আশা। বাংলার কৃষক দুর্ভিক্ষ দেখেছে। দেখেছে জলোচ্ছাসের ভীষণ তান্ডবলীলা, দেখেছে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণির বিধ্বংসকে। তবু সে বুক বেঁধে দাঁড়িয়েছে প্রতিবার। পদ্মাপারের মানুষ ধ্বংসকে ভয় করে না, তার হাতে আছে দূর্জয় সৃষ্টির মন্ত্র।

কিন্ত এতবড় দুর্যোগ কেউ কোনদিনও দেখেছে? নিজের দেশে, নিজের ঘামঝরানো পয়সায় কেনা গুলি এসে বিঁধে নিজেরই বুকে। কারা চালালো গুলি? হিন্দু জমিদার-নাকি সেই দস্যু বর্বর পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার?কারা পুড়িয়ে দিলো কৃষকের সাজানো সবুজ ক্ষেতকে- কারা কামান ও গোলায় গুড়িয়ে দিলো কৃষকের কুটির-কারা কেড়ে নিলো নবান্নের উৎসব- কারা, কারা, তারা কারা?

ইতিহাসের কবর থেকে উঠিয়ে আনা হচ্ছে জমিদারকে। জমিদার তো অত্যাচার করেইছিল আর তার শাস্তিও পেয়েছে গণ-মানুষের হাতে। কিন্তু তোমাদের শাস্তির দিনও যে দ্রুত ঘনিয়ে আসছে- তা কি জানো?

তোমরা কি ভেবেছ জমিদার ও কৃষকের শ্রেণী-সংঘাতের ইতিহাসটি মুছে দিয়ে আজকের জাগ্রত শ্রেণী-সচেতন মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার ভাঁওতায় ভোলাতে পারবে? ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা করে দাঙ্গাবাজ রাজনীতি এদেশের মাটিতে আজ অচল।

আজ প্রতিটি বাঙালী জানে, এ যুদ্ধ তার বাঁচার জন্য। এ যুদ্ধ তার চিরদাসত্বের নিগড় থেকে মুক্তির জন্য। বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধকে তা ইতিহাসের কবরে পচে যাওয়া সাম্প্রদায়িকতার বিষে ঘুলিয়ে দেওয়া যাবে না।

তথাকথিত পাকিস্তান আর নেই। পাকিস্তান এর নিশান আমরা পুড়িয়ে ভস্মীভূত করেছি। আমরা উড়িয়েছি আমাদের বুকের রক্তে রাঙানো স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। রক্তে আমাদের স্বাধীনতার আগুন গদগদ করছে। চোখে আমাদের প্রতিশোধের দাবাগ্নি দাউ দাউ করে জ্বলছে। মুখে আমাদের স্বাধীনতার বাণী চৌচির হয়ে ফেটে পড়েছে শত কোটি কন্ঠে।
এই মহান বিপ্লবকে বিভ্রান্ত করার জন্য ওরা তাই উঠে-পড়ে লেগেছে । কিন্ত ওদের রসদ কই? হ্যা, আছে বস্তাপচা রাজনীতি- হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা-বাধানোর অপচেষ্টা। বুকে বেপরোয়া গুলি চালিয়ে সমস্ত বাঙালী জাতিটাকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হীন-ষড়যন্ত্রে মেতে, অখন্ডতার প্রলেপ মাখানো আর ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী ভূত দেখানোতে।

এক কথায়, দাঙ্গাবাজি, লুটতরাজ, নারী-হরণ প্রভৃতি অসামাজিক পৈশাচিক নারকীয় পশুত্বের রাজত্ব সৃষ্টি করতে চায় ওরা লক্ষ শহীদের রক্তভেজা বাংলার মাটিতে। যে জাতি সূর্যতেজে জেগে উঠেছে সে কি অন্য কোন রাষ্ট্রের কাছে দাসত্বের জন্য হার মানে?অদ্ভুত ওদের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। অদ্ভুত ওদের ইতিহাসের ব্যাখ্যা। অদ্ভুত ওদের বেপরোয়া গণ-হত্যার নজির।

দাঙ্গাবাজি কলা-কৌশল আর চলবে না। লাঞ্ছিত নিপীড়িত দরিদ্র বাঙালী গণ-মানুষ ওদের কলঙ্কিত রাজনীতির মুখোশ উন্মোচিত করেছে। ওদের নগ্ন আসল রুপটি অতি দুর্ভাগ্যের রাত্রে আমরা দেখে ফেলেছি। পশুও বুঝি এত নগ্ন নয়- এত বিশ্রী, এত কুৎসিত, এত বীভৎস নয়।ওরা মানুষ হত্যা করেছে- আসুন আমরা পশু হত্যা করি। জয় বাংলা।
প্রচার: ২১-৪-৭১

(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র – ৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ১৩-১৪)
চলবে

আরও পড়ুন আগের পর্ব :

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৯

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৮

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৭

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৬

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৫

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৩

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০১

সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা

Loading


শিরোনাম বিএনএ