32 C
আবহাওয়া
৯:২৮ অপরাহ্ণ - মে ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৮ (নারায়ণগঞ্জ-৫)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৮ (নারায়ণগঞ্জ-৫)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৮ (নারায়ণগঞ্জ-৫)

বিএনএ, ঢাকা ঃ বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নারায়নগঞ্জ-৫ আসনের হালচাল।

YouTube player

নারায়নগঞ্জ-৫ আসন 

নারায়নগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনটি নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন, নারাযনগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১ থেকে ২৭ নং ওয়ার্ড এবং বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২০৮ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন ঃ বিএনপির এড: আবুল কালাম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৬ হাজার ১ শত ৯৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৮ শত ১৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির এড: আবুল কালাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৩ শত ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নাজমা রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ৬ শত ৩ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনঃ বিএনপির এড: আবুল কালামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় 

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির এড: আবুল কালামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন ঃ আওয়ামী লীগের এস এম আকরাম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৫ শত ৮৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯ শত ৭৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এস এম আকরাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৪ শত ৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এড: আবুল কালাম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৩ হাজার ৫ শত ৬২ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন ঃ বিএনপির এডভোকেট আবুল কালাম বিজয়ী হন।

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২০ হাজার ৯ শত ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬ শত ৪৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির এডভোকেট আবুল কালাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৩ হাজার ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এস এম আকরাম । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ২ শত ৩২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন  ঃ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯ শত ৪৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৯ শত ৯ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭ শত ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এড: আবুল কালাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৬ হাজার ৭ শত ৩৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঃ জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনঃ জাতীয় পার্টির এস এম সেলিম ওসমান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭ শত ১৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ১ শত ৬৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এস এম সেলিম ওসমান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির এস এম আকরাম, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবুল কালাম, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির মন্টু চন্দ্র ঘোষ, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মোর্শেদ হাসান, দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিশের কবির হোসেন, মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ এর আবু নাঈম খান বিপ্লব এবং চেয়ার প্রতীকে ইসলামীক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এস এম সেলিম ওসমান বিজয়ী হন । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫ শত ৪৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এস এম আকরাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫২ হাজার ৩ শত ৫২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, সপ্তম সংসদে আওয়ামী লীগ এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নারায়নগঞ্জ-৫ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নারায়নগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৬.০৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৪৪%, বিএনপি ৪২.০৩%, জাতীয় পার্টি ২০.৬১%, জামায়াত ইসলামী ৪.৪০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৫২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৭৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪০.৬২%, বিএনপি ৩০.২৬% জাতীয় পাটি ২৪.৬৬%, জামায়াত ইসলামী ২.২৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.১৭% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৭৮ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.৬৮%, ৪ দলীয় জোট ৪৩.০৪%, জাতীয় পার্টি ১৮.৯৬ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৩২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.২৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৬.০৯%, ৪ দলীয় জোট ৪০.৮৪% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.০৭% ভোট পায়।

নারায়নগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির এস এম সেলিম ওসমান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু, নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, নারায়নগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল কাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী এস.এম আকরাম, কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনিবাহী সদস্য ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম এবং মহানগর বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নারায়নগঞ্জ -৫ সংসদীয় আসনটি কোন রাজনৈতিক দলের একক ঘাঁটি নয়। এই আসনটি কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি, আবার কখনো জাতিয় পার্টি শাসন করে আসছে। নবম জাতীয় সংসদ থেকে টানা শাসন করে চলেছে জাতীয় পার্টি। তখন থেকে মনোনয়ন নিয়ে এই আসনে আওয়ামী লীগে কোন্দল ও বিভক্তি শুরু হয়। যা এখনো বিদ্যমান। এমনকি মনোনয়ন না পেয়ে দল ত্যাগের ঘটনাও ঘটে। বিএনপিও কোন্দল ও বিরোধ মুক্ত নয়। তা ছাড়া ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার বাহিরে থাকায় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও চাঙ্গা রাখতে পারেনি বিএনপি। একই অবস্থা আওয়ামী লীগেও।

জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের আশির্বাদ নিয়ে গত ১৫ বছর আসনটি দখলে রেখেছে। কিন্তু সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারেনি। এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিজয়ী হবার সম্ভাবনা নেই।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২০৮তম সংসদীয় আসন (নারায়নগঞ্জ-৫) আসনটিতে জয়-পরাজয় নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর, এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

আরো পড়ুনঃ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৭ (নারায়ণগঞ্জ-৪)

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ