37 C
আবহাওয়া
৭:০২ অপরাহ্ণ - মে ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৭ (নারায়ণগঞ্জ-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৭ (নারায়ণগঞ্জ-৪)


বিএনএ, ঢাকাঃ  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের হালচাল।

YouTube player

নারায়নগঞ্জ-৪ আসন 

নারায়নগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনটি নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন ব্যতীত এবং নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ১০ নং ওয়ার্ড সমুহ নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২০৭ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন ঃ নির্বাচনে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ১ শত ৮৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩ শত ৪২ জন। নির্বাচনে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৫ শত ৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আশরাফ উদ্দীন আহমেদ চুন্নু। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ১ শত ২১ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঃ বিএনপির মোহাম্মদ আলী কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ আলী কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচনঃ আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩ শত ৪৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১ শত ৬২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৩ হাজার ৩ শত ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সিরাজুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৮ শত ৬৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন ঃ নির্বাচনে বিএনপির গিয়াস উদ্দীন বিজয়ী হন 

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৯ শত ১৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির গিয়াস উদ্দীন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩ শত ২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬ হাজার ১ শত ৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচনঃ আওয়ামী লীগের সারাহ বেগম কবরী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২ শত ৯৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সারাহ বেগম কবরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭ শত ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো: শাহ আলম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮ শত ৩৪ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঃ আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন ঃ আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান বিজয়ী হন 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৬ লাখ ৫১ হাজার ১ শত জন। ভোট প্রদান করেন ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৯ শত ৬৫ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান, ধানের শীষ প্রতীকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মনির হোসাইন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির ইকবাল হোসেন, গাভী প্রতীকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ ন্যাপ এর ওয়াজি উল্লাহ মাতব্বর অজু, মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সেলিম মাহমুদ, বটগাছ প্রতীকে খেলাফত আন্দোলনের জসীম উদ্দীন এবং কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহমুদ হোসেন, প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১ শত ৩৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মনির হোসাইন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭৬ হাজার ৫ শত ৮২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নারায়নগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫২.৪২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২.৯৯%, বিএনপি ৪০.৩৩%, জাতীয় পার্টি ১১.৭২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৪.৯৬% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.২৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৭৮%, বিএনপি ৩৩.৭৬% জাতীয় পাটি ২০.৪৩%, জামায়াত ইসলামী ২.০৪% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৯৯% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.৩১ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৪৩%, ৪ দলীয় জোট ৫৩.৬২%, জাতীয় পার্টি ৪.১০ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৮৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.১৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪৮.২২%, ৪ দলীয় জোট ৪৭.৪১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৩৭% ভোট পায়।

নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান । জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। আরও মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক কাওসার আহমেদ পলাশ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মনির হোসাইন, তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন। আর মনোনয়ন চাইবেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারায়নগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগী শিল্পপতি শাহ আলম, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার পারভেজ আহম্মেদ।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জ ৪-আসন।

শিল্পাঞ্চল হওয়ায় আসনটি অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধ। ফতুল্লার পঞ্চবটিতে রয়েছে বিসিক শিল্পনগরী। এখানে প্রায় ৪০০ নিট গার্মেন্টস রয়েছে। অপরদিকে সিদ্ধিরগঞ্জে গড়ে উঠেছে আদমজী ইপিজেড। এ ছাড়া রয়েছে ছোট-বড় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। মূলত এ আসনটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। জনপ্রতিনিধিদের জয় পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর এই আসনে বসবাসকারি শ্রমিকরা।

এই আসনে আওয়ামী লীগ বেশ সুসংগঠিত। সেই তুলনায় বিএনপি সুসংগঠিত নয়। তবে বিপুল নিরব ভোট রয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি বিএনপি ২০ দলীয় ঐক্যজোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে ছেড়ে দেয়। ফলে বছরের পর বছর মামলা-হামলার শিকার নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর মাধ্যমে আসনটির পুনরুদ্ধার চায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চায় বিজয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২০৭তম সংসদীয় আসন (নারায়নগঞ্জ-৪) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তুমুল লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ /শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

আরো পড়ুনঃদ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৬ (নারায়ণগঞ্জ-৩)

Loading


শিরোনাম বিএনএ