27 C
আবহাওয়া
৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ - মে ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » গাজায় গণহত্যা, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে

গাজায় গণহত্যা, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে


বিএনএ, ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন শিক্ষার্থীরা যে বিক্ষোভ শুরু করেছিল, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ কানাডা থেকে সুদূর ভারতেও সেই ঢেউ আছড়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ইসরায়েলবিরোধী এই আন্দোলন সহসাই থামছে না। বরং ইউরোপের আরও কিছু দেশে এই আন্দোলন মাথাচাড়া দিতে পারে। নতুন করে যেসব দেশে শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ছড়িয়েছে, এর মধ্যে আছে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও মেক্সিকো।

YouTube player

৩ মে শুক্রবার অষ্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নেন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। সারা বিশ্বে ইসরায়েল বিরোধী চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন তারা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মেলবোর্ন, এডেলাইড, ক্যানবেরাসহ অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই ধরনের তাঁবু গড়ে উঠেছে।

এ ছাড়াও ইসরায়েলে গণহত্যার প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে প্রতিবেশী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও।
মন্ট্রিলের উপকণ্ঠে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় , টরেন্টো এবং ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্তরাজ্যের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগেই বিক্ষোভ করেছিল । তবে দিনকে দিন বৃহৎ আকার নিচ্ছে এই আন্দোলন।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে বিক্ষোভ। সেখানে শিক্ষার্থীরা গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বর্জনের আহবান জানিয়েছে।

ভারতের খ্যাতনামা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে।

গত শুক্রবার জার্মানির বার্লিনের হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, অন্য জায়গায় ক্যাম্প করতে বিক্ষোভকারীরা অস্বীকৃতি জানান। এরপরই পুলিশ বেশ কিছু বিক্ষোভকারীকে জোর করে সরিয়ে দেয়।

আয়ারল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তাঁরা তাঁদের এই প্রতিবাদী কর্মসূচিকে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মেক্সিকোর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউএনএএমের বেশ কিছু শিক্ষার্থী গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানীতে একটি ক্যাম্প স্থাপন করেন। তাঁরা নানা স্লোগান দেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’ ও ”নদী থেকে সমুদ্র, ফিলিস্তিন হবে মুক্ত।“

সুইজারল্যান্ডের লুসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের প্রবেশদ্বার ২রা মে থেকে দখল করে আছেন প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী। বিক্ষোভকারী এই শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলকে একাডেমিক বয়কট এবং গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন।
আন্দোলন দমাতে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযান ও ব্যাপক ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। তবে এত কিছুর পরও পিছু হটেনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা, উল্টো নতুন দাবি নিয়ে আবারও মাঠে নামছে তারা।

প্রসঙ্গত, গত শতকের ষাটের দশকের শেষ দিকে ভিয়েতনামে মার্কিন বাহিনীর আগ্রাসনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক গণ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় আকারের আন্দোলন শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

এ দিকে গত ২ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক ভাষণে বলেছেন, আমেরিকানদের বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে কিন্তু সহিংসতা প্রকাশের মাধ্যমে নয়।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, বাইডেনের এমন বক্তব্য আন্দোলনকে আরও চাঙ্গা করেছে। একই সমালোচনা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও। তার মতে, বাইডেন সরকার এ আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের কঠোর হস্তে দমন করার পরামর্শও দেন ট্রাম্প।

চলতি বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ৮১ বছর বয়স্ক বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত। বাইডেনের এই নিশ্চুপ অবস্থা নজর এড়ায়নি ট্রাম্পেরও।

ওই সভায় অবশ্য ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলপন্থিদের ওপর নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের উচিত ক্যাম্পাস থেকে অবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করা এবং কট্টরপন্থা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষিপ্ত পাগল’ এবং ‘হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্স কিনা। এই অধ্যাপক মনে করেন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলন বাইডেনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

‘শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আন্দোলন বাইডেনকে বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং একটি জায়গায় নিয়ে এসেছে। কারণ তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম এবং আরব-আমেরিকানরাও। ২০২০ সালের যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সেই নির্বাচনে তার জয়ে এই তরুণ প্রজন্ম, মার্কিন মুসলিম এবং আরব-আমেরিকানদের বিশাল ভূমিকা ছিল।’

প্রসঙ্গত, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যার মধ্যে ১৩ হাজার শিশু।

শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ