31 C
আবহাওয়া
১১:৪০ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ব্যবসায়ীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি জাবি ছাত্রলীগের

ব্যবসায়ীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি জাবি ছাত্রলীগের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিএনএ, জাবিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংলগ্ন সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের আমবাগান এলাকার এক ডিশ ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। চাঁদার টাকা না দিতে পারলে ডিশের ব্যবসা বন্ধ রাখতে এবং ব্যবসায়ীর প্রাণনাশের হুমকি দেন তারা।

এ ঘটনায় গতকাল সোমবার (৮ মে) ভুক্তভোগী আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ভুক্তভোগী মো. মমিনউল্লাহ মমিন আমবাগান এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পাথালিয়া ইউনিয়নের পানধোয়া এলাকার বাসিন্দা হাজী মো. ফজর আলীর ছেলে।

অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক শান্ত মাহবুব এবং উপ-দফতর সম্পাদক হাছিবুর রহমান। তাদের মধ্যে শান্ত মাহবুব বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও হাছিবুর রহমান ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন। তবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে অবস্থান করেন বলে জানা গেছে।তারা উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী বলে পরিচিত।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগান এলাকায় ‘আমবাগান ক্যাবল নেটওয়ার্ক’ নামে ব্যবসা পরিচালনা করেন মমিনউল্লাহ মমিন। তবে গত ১৫ এপ্রিল অভিযুক্ত শান্ত মাহবুব ও হাছিবুর রহমান আমবাগান এলাকায় গিয়ে মমিনউল্লাহ মমিনের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এছাড়া চাঁদার টাকা না দিতে পারলে ডিশের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেন। তবে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ‘আমবাগান ক্যাবল নেটওয়ার্কের’ দেওয়া ডিশের সংযোগ কেটে দেন অভিযুক্তরা। এছাড়া এলাকাবাসীকে জোরপূর্বক নতুন ডিশের সংযোগও দিতে চান। এরপর গত ১ মে আমবাগান এলাকায় ‘আমবাগান ক্যাবল নেটওয়ার্কের’ লাইনম্যান খাইরুল ইসলাম ডিশ লাইনের বিল উত্তোলন করতে গেলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে আসেন হাছিবুর রহমান। পরে তাকে মারধর করে সাড়ে ৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। এছাড়া পরবর্তীতে বিল তুলতে গেলে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেন।

এ বিষয়ে ডিশ ব্যবসায়ী মো. মমিনউল্লাহ মমিন বলেন, ‘গত দেড় মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আমাদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। শুনেছি, তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের লোক। আমরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রলীগের নেতা শান্ত মাহবুব ও হাছিবুর রহমানসহ আরো ৭ থেকে ৮ জন এসে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হুমকি দিয়ে গেছে। তবুও আমরা ব্যবসা পরিচালনা করায় ডিশের লাইন কেটে দিয়েছে এবং আমাদের লাইনম্যানকে তুলে নিয়ে যায়। ফলে গত একমাস ডিশ ব্যবসা একেবারেই বন্ধ আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তারা এখন পর্যন্ত আমাদের ১৫টির অধিক হাইব্রিড ক্যাবল এমপ্লিফায়ার নিয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৯ জায়গায় ডিশের লাইন কেটে দিয়েছে। তারা ২৬ কোরের প্রায় ৫০০ মিটার তার নিয়ে গেছে। প্রায় পাঁচ শতাধিক বাসায় ডিশের সংযোগ দেওয়া ছিল, তারা কেউ এখন ডিশের সুবিধা পাচ্ছে না। তারা বলেছে, ব্যবসা বন্ধ রাখতে, এমনকি ব্যবসা পরিচালনা করলে প্রাণনাশেরও হুমকি প্রদান করেন।’

আমবাগান ক্যাবল নেটওয়ার্কের লাইনম্যান খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১ মে আমি ডিশের বিল তুলতে গেলে, হাছিব ভাই আমাকে তুলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলের সামনে যান। সেখানে নিয়ে আমাকে মারধর করেন। এছাড়া আমার পকেটে সাড়ে ৮ হাজার টাকা ছিল, তা নিয়ে নেয়। যদি ডিশের কাজে আমবাগান কিংবা ক্যাম্পাসে যাই, তাহলে জবাই করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শান্ত মাহবুব বলেন, ‘এটি পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনী। তারা ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করবো।’

আরেক অভিযুক্ত হাছিবুর রহমান বলেন, ‘তাদের সাথে সেভাবে পরিচয় নেই। তবে শুনেছি, তারা একইসঙ্গে আমবাগানেও ডিশের ব্যবসা পরিচালনা করতে চায়, সেটা নিয়ে কিছুটা ঝামেলা চলছিলো। সে কারণেই হয়তো এসব অভিযোগ করছে। তবে যদি কেউ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে যা শাস্তি হবে তাই মেনে নিবো।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটন বলেন,’ ঘটনাটি শুনেছি ৷ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হলে কঠোর সাং গঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত সোমবার অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত করার জন্য পানধোয়া বাজারে গিয়েছিলাম। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটলে, আমরা শঙ্কায় ও আতঙ্কিত থাকি। যেহেতু তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সেহেতু এসব বিষয়ে তাদের সাথে ঝামেলা হলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।’

বিএনএ/সানভীর, এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ