23 C
আবহাওয়া
১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ - মে ৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৬ (নারায়ণগঞ্জ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৬ (নারায়ণগঞ্জ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৬ (নারায়ণগঞ্জ-৩)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নারায়নগঞ্জ-৩ আসনের হালচাল।

YouTube player

নারায়নগঞ্জ-৩ আসন

নারায়নগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনটি সোনারগাঁও উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২০৬ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৫ হাজার ১ শত ২ জন। নির্বাচনে বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৭ শত ৬৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৬ শত ১৩ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৬ শত ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৬ হাজার ২ শত ৭৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৭ শত ৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ৫ শত ২৯ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬ শত ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪ শত ৪৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুর মোহাম্মদ বাহাউল হক । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৬ শত ৮৩ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবদুল্লাহ আল কায়সার বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫ শত ৬২ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭ শত ৭০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুল্লাহ আল কায়সার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯ শত ৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ২ শত ৪২ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩ হাজার ৮ শত ৭২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ১ শত ৬৬ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আজহারুল ইসলাম মান্নান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছানাউল্লাহ নুরী, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির আ. সালাম বাবুল, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ আল কায়সার, তারা প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির এ এন এম ফখর উদ্দীন ইব্রাহিম,গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মুরাদ হোসেন জামাল এবং ফুলের মালা প্রতীকে তরিকত ফেডারেশন এর মজিবুর রহমান মানিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা বিজয়ী হন । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭ শত ৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আজহারুল ইসলাম মান্নান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১৮ হাজার ৪৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নারায়নগঞ্জ-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নারায়নগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৯.০৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.১৪%, বিএনপি ৫৩.৩৮%, জাতীয় পার্টি ৮.৫৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৬.৮৯% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.০৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৩.১৩%, বিএনপি ৪৩.৬৮% জাতীয় পাটি ২০.৯৮%, জামায়াত ইসলামী ১.৩২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৮৯% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.৪৫ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৩৪%, ৪ দলীয় জোট ৫৭.৩৬%, জাতীয় পার্টি ৫.০৫ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৭১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬০.৮৫%, ৪ দলীয় জোট ৩৪.৭৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৩৯% ভোট পায়।

নারায়নগঞ্জ-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন। মহাজোট থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন প্রয়াত হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের পালিত কন্যা ও জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদিকা অনন্যা হুসাইন মৌসুমী।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সাংসদ ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। বঙ্গবন্ধুর সহচর ও সাবেক দুইবারের সাংসদ মরহুম মোবারক হোসেনের ছেলে ও মোবারক হোসেন স্মৃতি সংসদের চেয়ারম্যান এরফান হোসেন দীপ। সোনারগাও আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামশুল ইসলাম ভূইয়া, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডাক্তার আবু জাফর চৌধুরী

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাও থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। ৪ বাবের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নায়ানগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। কখনো বিএনপি,কখনো আওয়ামী লীগ এই আসনটি শাসন করে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটির দখলে নেয়। কিন্তু ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এবার আওয়ামী লীগ থেকে দাবি ওঠেছে এই আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের।

এই আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠিনক তৎপরতা থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক শক্তির অভাব রয়েছে। তার ওপর রয়েছে দলীয় কোন্দল। ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালন করা হয়।

একই অবস্থা বিএনপিতেও। দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে সাংগঠনিক অবস্থায় ছেদ পড়েছে। যদিও দলটি প্রচুর ভোট রয়েছে। সম্প্রতি এক দফার আন্দোলনে দলটির নেতাকর্মীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে দলীয় কোন্দল ও বিরোধের কারণে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।

এই আসনে জাতীয় পাটি গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সুযোগে সাংগঠনিক পরিধি বৃদ্ধি করেছে দলটি। জাতীয় পার্টিতে আওয়ামী লীগ বিএনপির মতো বিরোধ নেই।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২০৬তম সংসদীয় আসন (নারায়নগঞ্জ-৩) আসনটিতে কোন দল জিতবে তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর, এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

আরো পড়ুনঃদ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৫ (নারায়ণগঞ্জ-২)

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ