30 C
আবহাওয়া
৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ - মে ৩০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৪ (পটুয়াখালী-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৪ (পটুয়াখালী-৪)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে।  এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে পটুয়াখালী-৪ আসনের হালচাল।

পটুয়াখালী-৪ আসন

পটুয়াখালী-৪ সংসদীয় আসনটি কলাপাড়া এবং রাঙ্গাবালী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১১৪ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার-উল ইসলাম বিজয়ী হন 

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯ শত ৩৮ জন।  ভোট প্রদান করেন ৭৭ হাজার ৩ শত ৮৩ জন।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার-উল ইসলাম বিজয়ী হন।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৭শত ৭ ভোট।  তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির জাহাঙ্গীর হোসেন আকন।  ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৮শত ৩৭ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।  ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আনোয়ার-উল ইসলাম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৪ শত ৫৮ জন।  ভোট প্রদান করেন ৮৯ হাজার ৪ শত ৮৪ জন।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার-উল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে  তিনি পান  ২৩ হাজার ৩ শত  ৪৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান তালুকদার বিজয়ী হন

২০০১ সালের  ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৪শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮ শত ৫৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান তালুকদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৯ শত ৪০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান।  ঘড়ি  প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ৯৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান তালুকদার বিজয়ী 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ২ শত ৮৫ জন।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান তালুকদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯০ হাজার ৭শত ৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এ.বি.এম মোশারফ হোসেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ১ শত ৫৮ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মুহিব্বুর রহমান মুহিব বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩৬ জন।  ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫ হাজার ১ শত ৯০ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মুহিব্বুর রহমান মুহিব, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির এ বি এম মোশারেফ হোসেন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আনোয়ার হাওলাদার, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুর রহমান শাহআলম, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের  হাবিবুর রহমান হাওলাদার এবং মই প্রতীকে বাসদের জহিরুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুহিব্বুর রহমান মুহিব বিজয়ী হন।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭ শত  ৮১ ভোট।  তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাবিবুর রহমান হাওলাদার। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭ হাজার ২ শত ৫১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পটুয়াখালী-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।  বিএনপি বিজয়ী হয় শুধুমাত্র ১১ দিনের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর পটুয়াখালী-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি,  জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৩৮.৭৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৪.৪৯ %, বিএনপি ২০.২৬%, জাতীয় পার্টি ১৩.০৭% , জামায়াতে ইসলামী ১০.৪৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৭% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬১.৫৮% ভোটার।  প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫২.৬৯%, বিএনপি ৩২.৫৫%, জাতীয় পাটি ৪.১৪%, জামায়াতে ইসলামী ৩.৩৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.২৩% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬১.৪২% ভোটার।  প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫০.২৭%, ৪দলীয় জোট ৪১.৬৯%, জাতীয় পার্টি ২.৯২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.১২%  ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৯৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৪.৬৭%, ৪দলীয় জোট ৩৬.১৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৯.১৪%  ভোট পায়।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী-মহিপুর): এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিব্বুর রহমান মুহিব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।  আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব তালুকদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সহসভাপতি মুরসালিন আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মো. আলাউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আনোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ আল ইসলাম লিটন, সাবেক ছাত্রনেতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ বি এম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পটুয়াখালী-৪ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি।  সুষ্ঠু কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কখনো পরাজিত হয়নি। পায়রা সমুদ্র বন্দর, ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র, শের-ই-বাংলা নৌ-ঘাঁটিসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে।  একাধিক মেগাপ্রকল্প চলমান রয়েছে।  সমগ্র কলাপাড়ার বেলাভূমিও পরিণত হয়েছে সোনার খনিতে।

দুর্গম চরাঞ্চল রাঙ্গাবালী উপজেলায় ২০০৮ সালের আগে পাকা সড়ক তো দূরের কথা, ছিল না কোনো ইটের সড়ক। আর এখন সেখানে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। মাইলের পর মাইল সড়ক পাকা হয়েছে। সবচেয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল সাগর-নদী ঘেরা এ বিচ্ছিন্ন জনপদে নদীর মধ্য দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া।  উন্নয়ন কর্মকান্ডই হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভরসা।  কিন্তু দলীয় কোন্দল বেশ প্রকট। এছাড়া জনপ্রিয় প্রার্থী সংকট রয়েছে। এই অবস্থা বিএনপিতেও। সাংগঠনিক দিক থেকে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি পিছিয়ে থাকলেও দলীয় কোন্দল নেই।  বিএনপি মিত্রদের নিয়ে আসনটি নিজেদের কব্জায় নিতে ঐক্যবদ্ধ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১১৪তম পটুয়াখালী- ৪ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগের জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে এমনটাই মনে করেন রাজনীতি পর্যবেক্ষকগণ।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ